মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬, ০৩:৩০:৩৩

তিন জঙ্গিনেতার বিচারের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না

তিন জঙ্গিনেতার বিচারের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না

আসাদুজ্জামান: জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানের কথা ঘোষণা করলেও তিন শীর্ষ জঙ্গিনেতার বিচারের ক্ষেত্রে এখনো অনুমতি দেয়নি। সরকারের অনুমোদন মিলছে না বলে প্রায় দুই বছর ধরে ঝুলে আছে নিষিদ্ধঘোষিত তিনটি জঙ্গি সংগঠনের শীর্ষ তিন নেতার বিচার। ওই তিন নেতা হলেন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানী, জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমান ও হিযবুত তাহ্‌রীরের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিন জঙ্গিনেতার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা হয়েছে। এ আইন অনুযায়ী সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোনো অভিযোগ আমলে নিতে পারেন না কোনো আদালত।


ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে এসব মামলার বিচার শুরুর অনুমোদন দিতে সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে দফায় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুই বছরেও জবাব আসেনি। কোনো কোনোটির জন্য অপেক্ষা তিন বছরেও গড়িয়েছে। এসব কথা স্বীকার করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান সরকারি কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু।


ওই আদালতের আরেক সরকারি কৌঁসুলি তাপস কুমার পাল বলেন, আদালত থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় সেটি পাঠিয়ে দেওয়ার কথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচার শুরুর জন্য সরকারের অনুমোদন আটকে থাকার ব্যাপারে তিনি শিগগিরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। শীর্ষ তিন নেতার বাইরে এই আইনে আর কারও বিচার আটকে আছে কি না, সে ব্যাপারেও তিনি খোঁজখবর করবেন।
 

যোগাযোগ করা হলে গত রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। পরে গতকাল সোমবার আবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসেনি। জেএমবির প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমান ও আনসারুল্লাহর প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানী কারাগারে আছেন। আর হিযবুত তাহ্‌রীরের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বর্তমানে জামিনে মুক্ত।

মাওলানা সাইদুর রহমানের মামলা: সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ২০১০ সালের ২৫ মে জেএমবির শীর্ষ নেতা মাওলানা সাইদুর রহমানসহ তাঁর সংগঠনের তিন সক্রিয় সদস্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয় রাজধানীর কদমতলি থানায়। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৭ আগস্ট তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ঢাকার মহানগর দায়রা আদালত অপরাধ আমলেও নেন।

মামলাটি বিচারের জন্য পাঠানো হয় ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে, যেখানে বিচার শুরু হয় ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারি। পাঁচজনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। কিন্তু গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ওই আদালত এক আদেশে বলেন, সরকারের অনুমোদন ছাড়াই ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত এ মামলার অপরাধ আমলে নিয়েছেন। তাই সরকারের অনুমোদনের জন্য মামলার নথি ঢাকার মহানগর আদালতে ফেরত পাঠানো হোক। ফলে মামলাটির বিচার-প্রক্রিয়া সেখানেই থেমে গেছে।

আদালত সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে সরকারের অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো জবাব আসেনি। এ বছরের ২৮ মার্চ সর্বশেষ চিঠি পাঠানো হয়। মাওলানা সাইদুর ২০১০ সালের ২৫ মে গ্রেপ্তার হন। সেই থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

জসিম উদ্দিন রাহমানীর মামলা: নথিতে দেখা গেছে, জঙ্গি তৎপরতা, সরকার ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২৪ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করে পুলিশ। পরে তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতেঅভিযোগপত্র জমা দেন ডিবির পরিদর্শক মো. আবদুল লতিফ শেখ। বিচারের জন্য ওই বছরের ২৬ অক্টোবর মামলার নথি পাঠানো হয় ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে।

২০১৪ সালের ২৩ নভেম্বর সরকারের অনুমোদনের জন্য ওই আদালত থেকে প্রথম দফায় চিঠি পাঠানোর আদেশ দেওয়া হয়। এরপর আরও দুই দফা চিঠি গেছে, যার সর্বশেষটি পাঠানো হয় এ বছরের ২৮ মার্চ। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া দিয়ে কোনো জবাব আদালতে আসেনি। সরকারের অনুমোদনের জন্য এ পর্যন্ত ১১ বার মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল। আসামিরা এজলাসে এসেছেন আর ফিরে গেছেন।

একই মামলায় গ্রেপ্তার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের চার সদস্য জুন্নুন শিকদার, কাজী রেজোয়ান, নাইমুল হাসান ও জাহিদুর রহমান জামিনে মুক্ত হয়ে এখন পলাতক। ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট বরগুনা থেকে গ্রেপ্তার হন জসিম উদ্দিন রাহমানী। সেই থেকে তিনি কারাগারে। ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় ইতিমধ্যে জসিমকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

মহিউদ্দিন আহমেদের মামলা: নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীরের প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে উত্তরা মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ২০১০ সালে মামলা করে পুলিশ। তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পুলিশ মহিউদ্দিনসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। মামলাটি বিচারের জন্য ওই বছরের ২১ এপ্রিল ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। তখনই আদালত থেকে মামলার অনুমোদনের প্রথম দফা চিঠি পাঠানো হলেও অনুমোদনের কোনো কাগজপত্র আদালতে আসেনি। সর্বশেষ ২৮ মার্চ তৃতীয় দফায় চিঠি পাঠানো হয়।

মহিউদ্দিন ২০১০ সালের ২০ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন। হাইকোর্ট থেকে ২০১১ সালের ৩ মে জামিন পান। পরের বছর কারাগার থেকে মুক্ত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের এই সহযোগী অধ্যাপক বর্তমানে বাধ্যতামূলক ছুটিতে থাকলেও বসবাস করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি আবাসিক ভবনে। তিনি বলেন, মামলাটির বিচার শুরুর জন্য তিনিও অপেক্ষা করছেন। কেননা, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। তাঁর দাবি, হিযবুত তাহ্‌রীরের সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতানেই

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীনমালিক বলেন, এসব তথ্য প্রমাণ করে জঙ্গি দমনে সরকারের উদ্যোগ কথাসর্বস্ব। আইন মেনে দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সামর্থ্য নেই বললেই চলে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, এত দিনেও সরকারের অনুমোদন না দেওয়ার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। বিচার-প্রক্রিয়া দ্রুত করতে প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা উচিত।-প্রথম আলো

১২জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে