মঙ্গলবার, ১২ জুলাই, ২০১৬, ০৩:৪৯:৫৪

জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ হয় উত্তরবঙ্গের চরে

জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ হয় উত্তরবঙ্গের চরে

গোলাম মর্তুজা:  গুপ্তহত্যার ঘটনায় অংশ নেওয়া জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের স্থানগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে ধরা পড়া জঙ্গিদের তথ্যমতে উত্তরবঙ্গের বিচ্ছিন্ন চরে প্রশিক্ষণ হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায়ও উদ্বুদ্ধকরণ প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে বলে তথ্য পেয়েছে র্যাব।
প্রশিক্ষণ পর্যায়ে জঙ্গি দল থেকে ফিরে আসা অন্তত ছয় তরুণের কাছ থেকে এ-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া গেছে বলে র্যাব কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।

ওই তরুণেরা র্যাবকে জানিয়েছেন, বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরপর প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ওই তরুণদের জনসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অন্ধকার ঘরে রাখা হয়েছিল। যাঁরা এভাবে দীর্ঘ সময় থাকতে পারেননি, তাঁদের কয়েকজন পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। গতকাল র্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ তাঁদের কাছে এসেছে। তবে তাঁরা সবাই জঙ্গি তৎপরতায় যোগ দিতে গেছেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। র্যাবের ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে এঁদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।


রাজধানীতে র্যাবের একটি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, সাধারণত নিখোঁজের জিডি হয় থানায়। মানুষের গৃহকর্মী হারানো থেকে শুরু করে সব নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির ধরন একই রকম। সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিষয়গুলো পুলিশের কাছে পৃথকভাবে নিবন্ধন করা হয়নি। তবে এখন জোরেশোরে সেই নিখোঁজের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে, যাঁরা জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত বলে সন্দেহ হচ্ছে। গতকাল র্যাবের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, কিছু যুবকের খবর পাওয়া গেছে, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ। তাঁদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে জঙ্গি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য র্যাবের পক্ষ থেকে সবাইকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও সম্প্রতি দেশবাসীর প্রতি একই অনুরোধ করেছেন।


র্যাবের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, ঈদের দিনে শোলাকিয়ায় যে হামলা হয়েছে, সেখান থেকে অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে ধরা পড়া শফিউল ওরফে শরীফুলসহ আরও কয়েকজন ধরা পড়া জঙ্গির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের চরে তাঁদের প্রশিক্ষণ হয়েছে। তাঁদের অস্ত্র চালনাসহ বিভিন্ন কায়দা শেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে শফিউল জানিয়েছেন, তাঁরা চারজন মিলে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় যে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন, তার দুজন ছিলেন তাঁদের প্রশিক্ষক, আরেকজন সমন্বয়ক। হামলার দায়িত্বে মূলত দুজনই ছিলেন। মূলত ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবির আহমেদের সঙ্গে দিনাজপুরের মাদ্রাসাছাত্র শফিউলের যোগাযোগ ও সমন্বয়ের কাজটা ওই সমন্বয়কারী করেছেন।

এ ছাড়া বাড়িভাড়া, অস্ত্র, জামাকাপড় সরবরাহসহ যাবতীয় আনুষঙ্গিক বিষয় দেখভালের দায়িত্বও ওই সমন্বয়কারীর। ওই র্যা ব কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনারা খেয়াল করে দেখবেন, যেসব হামলা হচ্ছে, এসবের ধরন একই রকমের। কারণ একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে প্রশিক্ষণ দেন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিরা। ওই প্রশিক্ষকেরা আবার একই জায়গা থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।’


র্যাবের পরিচালক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি তাঁরা জঙ্গি দলের প্রশিক্ষণ শেষ না করে ফিরে আসা অন্তত ছয়জন তরুণের সন্ধান পেয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা হয়েছে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ওই তরুণদের প্রত্যেকেই জঙ্গিদের মতবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়ার পরে ঘর ছেড়েছিলেন। কিন্তু পরে বিশেষ প্রশিক্ষণে টিকতে পারেননি। বিশেষ প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে তাঁদের কাউকে প্রথমেই জনমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে একটানা তাঁদের একটি দরজা-জানালা বন্ধ অন্ধকার ঘরে থাকতে বলা হয়েছিল। তরুণেরা এভাবে থাকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত পরিবারের কাছে ফিরে আসেন।


জঙ্গিরা তাঁদের ছেড়ে দিয়েছে, নাকি পালিয়ে এসেছেন জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এসব আমরা এখনই বলতে চাই না। তদন্ত চলছে। এখনো অনেক লিংক মিসিং রয়েছে। আমরা সেগুলো হারাতে চাই না।’ আর ঢাকায় কী প্রশিক্ষণ হতো জানতে চাইলে র্যা বের ওই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বা সংলগ্ন জেলা শহরে বাসা ভাড়া করে ‘মোটিভেশনাল’ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে তাঁদের। তাঁদের প্রশিক্ষক ও সমন্বয়কারীদের খোঁজে র্যাবের তৎপরতা চলছে।-প্রথম আলো

১২জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে