মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১৬, ০৩:১৬:৫৭

নিখোঁজ সন্দেহভাজনদের তালিকা ২৬২ নয়, শুধু ৬৮

নিখোঁজ সন্দেহভাজনদের তালিকা ২৬২ নয়, শুধু ৬৮

নিউজ ডেস্ক: ছয় দিনের মাথায় নিখোঁজদের ‘সংশোধিত’ তালিকা প্রকাশ করেছে র‌্যাব। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে র‌্যাবের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এই তালিকায় ঢাকাসহ ১৯টি জেলার ৬৮ জনের নাম রয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগের নাম আগের ২৬২ জনের তালিকায়ও ছিল।


তালিকায় নতুন অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে খিলগাঁওয়ের চিকিৎসক দম্পতিসহ ওই পরিবারের পাঁচজনের নামও আছে। পরিবারটি গত বছরের অক্টোবরে সিরিয়ায় চলে গেছে বলে পুলিশ মনে করছে। তাদের বিষয়ে এর আগে দেশের প্রায় সব গণমাধ্যমে খবর বের হয়।


র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, আগে একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। এরপর সেই তালিকা ধরে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, অনেকেই ফিরে এসেছেন। দেশব্যাপী র‌্যাবের সর্বশেষ অনুসন্ধান ও তদন্তে এখন পর্যন্ত ৬৮ জন নিখোঁজ ব্যক্তির হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়। তাঁদের বয়স ১৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে।


এর আগে ১৯ জুলাই রাত ১১টার দিকে র‌্যাবের ফেসবুক পেজে ২৬২ জন নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে দুজনের নাম দুবার উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীকালে ওই তালিকা ধরে অনুসন্ধানে ১৩৯ জনেরই খোঁজ পাওয়া যায়। তাঁদের অনেকেই প্রেমঘটিত, পারিবারিক কলহসহ বিভিন্ন কারণে বাড়ি ছেড়েছিলেন। কিছুদিন পর আবার ফিরেও আসেন। কারাগারে থাকা আটজনের নামও ছিল প্রথম তালিকায়। যাচাই-বাছাই ছাড়া এ রকম একটি তালিকা প্রকাশ করায় এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।


এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, র্যাবের মতো পেশাদার একটি বাহিনীর কাছে প্রত্যাশা, তারা যখন জনগণের কাছে তথ্য উপস্থাপন করবে, তা বস্তুনিষ্ঠ হচ্ছে কি না, যাচাই-বাছাই করা। তা না হলে যখনই র্যাব কোনো তথ্য উপস্থাপন করবে, মানুষের চিন্তার মধ্যে আসবে, এটি যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করা হয়েছে কি না। এতে তাদের ভাবমূর্তির সংকট দেখা দিতে পারে।

তিনি বলেন, ‘র‌্যাব এত সবকিছু করছে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু আস্থা ফিরিয়ে আনা এত সহজ নয়। এটা তাদের জন্যও ভালো নয়, আমাদের জন্যও নয়।’ র্যাবের সংশোধিত তালিকায় স্থান পাওয়া নিখোঁজ ব্যক্তিরা সন্দেহভাজন জঙ্গি কি না, সে বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এ বিষয়ে এখনো যাচাই-বাছাই চলছে। নিশ্চিত না হয়ে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সে বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।


তবে ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর হঠাৎ বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে জঙ্গিগোষ্ঠীতে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামনে আসে। গুলশান হামলায় যুক্ত ঢাকার তিন তরুণসহ পাঁচজনই পাঁচ-ছয় মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন। কয়েকজনের নিখোঁজের বিষয়ে থানায় জিডিও হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে র্যাবের ২৬২ জনের তালিকা প্রকাশের পর বিষয়টি দেশব্যাপী আগ্রহের বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়ায়। র্যাবের প্রথম তালিকা নিখোঁজ অন্তত ২৪ জনের বিরুদ্ধে জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এই ২৪ জনের মধ্যে একজন আশিকুর রহমান, তিনি সিরিয়ায় মারা গেছেন বলে পুলিশ ও পরিবার জানিয়েছে। এর বাইরে গুলশানে হামলাকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে এবং আরও হামলার হুমকি দিয়ে বাংলাদেশি যে তিন তরুণের ভিডিও প্রচারিত হয়েছে, সেটা সিরিয়ার আইএস-অধ্যুষিত এলাকায় ধারণ করা বলে মনে করা হচ্ছে। ওই তিন তরুণ হলেন তাহমিদ রহমান সাফি, তাউসিফ হোসেন ও আরাফাত হোসেন তুষার।

গত বছর তাঁরা দেশ ছেড়েছেন বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের নাম সংশোধিত তালিকায়ও আছে। উভয় তালিকায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিনজন বিদেশি নাগরিকের নামও রয়েছে। তাঁরা হলেন কানাডার নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক তাজউদ্দীন ও জাপানের নাগরিক মো. সাইফুল্লাহ ওজাকি। তাঁদের সঙ্গে আইএসের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সন্দেহ করছে। তবে গতকাল পর্যন্ত তাঁরা কোন দেশে আছেন, তা সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।


গতকাল র্যাবের দেওয়া সংশোধিত তালিকায় যে ৬৮ জনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ঢাকার ৩০ জন, যশোরের ৮ জন, কুষ্টিয়া ও চট্টগ্রামে ৩ জন করে; ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২ জন করে; গাজীপুর, ঝিনাইদহ, রাজশাহী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও নেত্রকোনার ১ জন করে নিখোঁজের নাম রয়েছে। তালিকায় যশোরের আটজনের নাম ও ছবির পাশে লেখা হয়েছে ‘পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নৌপথে বিদেশ যাওয়ার সময় নিখোঁজ হয়’।-প্রথম আলো

২৬ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে