মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১৬, ০৫:০৮:০৪

কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে যা উদ্ধার করা হয়েছে

কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে যা উদ্ধার করা হয়েছে

ঢাকা : রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে নিহত জঙ্গিদের প্রকাশিত ছবিতে যে ‘কালো পাঞ্জাবি ও কালো পতাকা’ দেখা গেছে, ঠিক একই ধরনের কালো পাঞ্জাবি ও কালো পতাকা পাওয়া গেছে কল্যাণপুরের ‘জঙ্গি আস্তানায়’।

মঙ্গলবার ভোরে যৌথবাহিনীর অপারেশন শেষে তাদের মেস (আস্তানা) থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।  নিহত জঙ্গিদের পরনে কালো পাঞ্জাবি ছিল, যা রাজধানীর গুলশানে নিহত জঙ্গিদের পরনেও ছিল।  তাদের আস্তানা থেকে আরবিতে ‘আল্লাহু আকবর’ লেখা দুটি কালো পতাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রগুলো হলো- ১৩টি তাজা গ্রেনেড, জেল বিস্ফোরক ৫ কেজি, ডেটোনেটর ১৯টি, ৭.৬২ পিস্তল চারটি, গেরিলা চাকু ১২টি, তলোয়ার একটি, কমান্ডো চাকু তিনটি, ৭.৬২ পিস্তলের ম্যাগাজিন সাতটি, ৭.৬২ পিস্তলের গুলি ২২ রাউন্ড এবং আরবিতে ‘আল্লাহু আকবর’ লেখা দুটি কালো পতাকা।

ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ধরন, পোশাকসহ অন্যান্য সবকিছু কল্যাণপুরের নিহত জঙ্গিদের সঙ্গে মিল রয়েছে।  গুলশানে যারা হামলা করেছিল তারা একই গ্রুপের তা প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণে জানতে পেরেছি।

অপারেশন শেষে পুলিশের আইজিপি শহীদুল হক বলেছেন, নিহতরা সবাই জঙ্গি।  এরা গুলশানের হামলাকারীদের একই গ্রুপের সদস্য হতে পারে। জঙ্গিরা গুলশানের মতো কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটানোর লক্ষ্যে জড়ো হয়েছিল।  সিআইডির ক্রাইম সিন ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করছে।

‘অপারেশন স্টোর্ম ২৬’ শুরুর আগে আজান দিয়ে ফজরের নামাজও পড়েছিল জঙ্গিরা।  এরপর ৫টা ৫১ মিনিটে শুরু হয় যৌথবাহিনীর অভিযান।  প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নিপ্পন গণমাধ্যমকে জানান, যৌথবাহিনীর অপারশেনে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সহযোগিতা করেছে।

তিনি বলেন, জঙ্গিরা ইসলামী প্রজাতন্ত্র কায়েম, জুলুমবাজদের আস্তানা থাকবে না ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিল।  এসময় তারা পুলিশ ও সরকারকে উদ্দেশ করে গালিগালাজ করে।

মনিরুল ইসলাম নিপ্পন বলেন, শুরুতে তারা ভেতর থেকে বিস্ফোরণ ঘটায়।  আত্মরক্ষার্থে এসময় স্থানীয়দের সরিয়ে দেয় পুলিশ।  বারান্দা ও জানালা দিয়ে দেখা যায়, তারা ভেতরে আজান দিচ্ছিল।  ৮-৯ জন একসঙ্গে সম্ভবত ফজরের নামাজ আদায় করছিল।

এদিকে মিরপুর বাংলা কলেজের ভুয়া পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেখিয়ে কল্যাণপুরের ‘জাহাজ বাড়ি’র ওই বাসায় ওঠেছিল জঙ্গিরা।  ওই বাসা থেকে এ ধরনের বেশকিছু ভুয়া আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।  ওই বাসা থেকে রসায়ন ও পদার্থ বিজ্ঞানের বেশকিছু বই এবং জিহাদি মতাদর্শের কয়েক বস্তা বইও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তারা।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, নিহত জঙ্গিদের সবাই সচ্ছল পরিবারের সন্তান বলে ধারণা করা হচ্ছে।

র‌্যাব-পুলিশের অন্তত এক হাজার সদস্য অভিযানে অংশ নেন।  সোমবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভবন ও তার আশেপাশের এলাকা ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ অভিযান শুরু হয়।  

ওই ভবনে ১১ জন জঙ্গি ছিল।  এদের মধ্যে নিহত হয় ৯ জন।  সোমবার রাতে ভবনে ঢোকার সময় পুলিশের গুলিতে আহত এক জঙ্গিকে আটক করা হয়।  একজন পালিয়ে গেছে।

কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গির মধ্যে আটজনের পরিচয় মিলেছে।  অভিযানের সময় গুলিবিদ্ধ আটক যুবকই আটজনের পরিচয় জানিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশের একটি সূত্র।

নিহতরা হলেন রবিন, অভি, আতিক, সোহান, ইমরান, তাপস, ইকবাল ও সাব্বির।  তবে অপর আরেকজনের পরিচয় জানাতে পারেনি গুলিবিদ্ধ যুবক।
২৬ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে