বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬, ০৯:৪৬:৪১

জঙ্গিদের অত্যাধুনিক এসব অস্ত্রের উৎস কোথায়?

জঙ্গিদের অত্যাধুনিক এসব অস্ত্রের উৎস কোথায়?

জামাল উদ্দিন : গুলশানসহ সাম্প্রতিক হামলাগুলোতে চাপাতির সঙ্গে ছোট-বড় আধুনিক অস্ত্রও ব্যবহার করছে জঙ্গিরা। মিশন শতভাগ সফল করতেই ধারালো অস্ত্র ছাড়াও জঙ্গিরা আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করছে বলে জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বিস্ফোরক ও ধারালো অস্ত্রের পর জঙ্গিদের ভারী অস্ত্র ব্যবহারে উদ্বিগ্ন গোয়েন্দারা এর উৎস জানতে অনেক আগেই মাঠে নামেন। জানতে চেষ্টা করেন কিভাবে এবং কোন পথে জঙ্গিরা এসব অস্ত্র সংগ্রহ করছে।

বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার  হয়েছে একে-২২ ও স্নাইপার রাইফেলসহ ভারী অস্ত্রশস্ত্র। এসব অস্ত্রের উৎস ভাবিয়ে তুলছে গোয়েন্দাদের। প্রতিবেশী দেশগুলোর বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন, আন্তর্জাতিক অস্ত্র চোরাকারবারী ও বিদেশি দুই-একটি গোয়েন্দা সংস্থাকে জঙ্গিদের অস্ত্রের যোগানদাতা বলে মনে করছেন তারা। তবে এসব বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, জঙ্গিরা শুরু থেকেই বোমা তৈরিতে বিস্ফোরক ব্যবহার করতো। হামলার ক্ষেত্রে তারা সাধারণত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতো না। বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েই তারা নাশকতা চালাতো। কেবল পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রয়োজনে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সঙ্গে থাকা অস্ত্রের ব্যবহার করতো তারা। কিন্তু সম্প্রতি টার্গেট কিলিংয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে ধারালো অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্রে ব্যবহারও করেছে জঙ্গিরা।

সর্বশেষ গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার ঘটনায় ছোট-বড় অস্ত্র ও বোমাসহ সব উপাদানই ব্যবহার করেছে তারা। এ দু’টি হামলায় জঙ্গিদের ভারী অস্ত্র, হাতে তৈরি শক্তিশালী গ্রেনেড ও প্রযুক্তির ব্যবহার দেখে হতবাক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারাও। জঙ্গিদের হঠাৎ এত বেপরোয়া হয়ে ওঠা ও ভারী অস্ত্রের ব্যবহারের কারণ ও উৎস খুঁজতে নামেন গোয়েন্দারা।

জঙ্গি নিয়ে কাজ করছে এমন কয়েকটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সম্প্রতি জঙ্গিরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অত্যাধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম ও বগুড়ার জঙ্গি আস্তানা থেকে এবং গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর যেসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলো সাধারণত আমাদের দেশে ব্যবহার হয় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও কোনও সংস্থার কাছে রয়েছে সেসব অস্ত্র। এসব অস্ত্র কোন উৎস থেকে জঙ্গিরা সংগ্রহ করেছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে সীমান্ত পথে পার্বত্যাঞ্চল হয়েই ভারী অস্ত্রগুলো জঙ্গিদের হাতে পৌঁছাচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জঙ্গি হামলার পর গুলশানের ‘হলি আর্টিজান বেকারি’তে জঙ্গি হামলার পর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে চালানো হয় ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ট’। অভিযানে চারটি পিস্তল, একটি ফোল্ডেড বাট একে ২২ রাইফেল, ৪টি অবিস্ফোরিত আইইডি, একটি ওয়াকিটকি সেট ও ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।

একে-২২ নামের যে রাইফেলটি গুলশানের হলি আর্টিজান থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল, গত জানুয়ারিতে ঠিক একই ধরনের আটটি একে-২২ রাইফেল চট্টগ্রামের হামজা ব্রিগেডের কাছ থেকে উদ্ধার করে র‌্যাব সদস্যরা। এর আগে আরেকটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে গত বছরের শেষের দিকে একই এলাকা থেকে ৯টি একে-২২, একটি একে-৪৭ ও ৪৪টি বিদেশি রিভলবার উদ্ধার করেছিল র‌্যাব। এ বছরের শুরুর দিকে বগুড়ার দু’টি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে একে ২২ রাইফেল, জার্মানির তৈরি এসএমজি, পিস্তল, হাতে তৈরি গ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করে র‌্যাব।

জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা এসব অস্ত্রের উৎস কোথায় জানতে চাইলে র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ বলেন, গুলশান হামলায় জঙ্গিরা একে ২২ নামের যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে ঠিক একই রকম অস্ত্র তারা চট্টগ্রামের হামজা ব্রিগেডসহ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করেছেন। কয়েকটি জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের উৎস জানতে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, সোমবার রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজে অপরাধ বিজ্ঞান বিষয়ে একটি প্রফেশনাল কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, ‘গুলশান ও শোলাকিয়ায় ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎস আমরা জানতে পেরেছি। গুলশান হামলার নেপথ্যে কারা, তাদেরও কয়েকজনের পরিচয় জানতে পেরেছি। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

জঙ্গিদের অস্ত্রের উৎস্য সম্পর্কে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ বলেন, যে প্রক্রিয়ায় ১০ ট্রাক অস্ত্র এসেছিল সেই প্রক্রিয়াতেই জঙ্গিদের হাতে অস্ত্র আসছে। কালোবাজারিদের কাছ থেকেও জঙ্গিরা অস্ত্র সংগ্রহ করছে। একইসঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইসহ কয়েকটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাও জঙ্গিদের অস্ত্র ও পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। -বাংলা ট্রিবিউন
২৭ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে