ঢাকা : রাজধানীর কল্যাণপুরে তাজ মঞ্জিল থেকে প্রথম নেমে আসেন ৩য় তলার বাসিন্দা রহিমা খাতুন।
সোমবার রাত ১২টা থেকে কল্যাণপুর ৫ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়িতে শুরু হওয়া জঙ্গি অভিযান সকাল ৮টার মধ্যে শেষ হয়। কিন্তু সব প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় সারাদিন লেগে যায়।
বিকেল ৬টা ৫মিনিটে রহিমা খাতুন তার ৩ সন্তান আমজাদ, সীমা ও মারজানকে নিয়ে তাজ মঞ্জিল থেকে বেরিয়ে আসেন। এসেই সাংবাদিকদের সাথে যে কথাটি বলেন তা হলো ’মনে হইতেছিল কেয়ামত নামছে’।
দুই রুমের ভাড়াটে হিসেবে রহিমা ৪ মাস হলো তাজ মঞ্জিলে এসেছেন। স্বামী ক্যাটারিং ব্যবসার ভ্যান চালায়। সোমবার রাতে কাজের চাপে তার স্বামী বাসায় আসতে পারেনি।
রাত ১২টার দিকে পুলিশ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পান রহিমা। ।তিনি বলেন, প্রচণ্ড শব্দে বাড়িটি যেন কাঁপছিল।
তাজ মঞ্জিলের ভেতরে কয়টা ইউনিট কতটা পরিবার ভাড়া থাকে ভাড়াটে রহিমাও সঠিকভাবে বলতে পারেনি। তবে এ বাড়িটিতে পরিবারের সংখ্যা কম, মেস হিসেবে ভাড়াটের সংখ্যা বেশি। সব সময় ভাড়া হবে’ প্লাকার্ড ঝুলতে দেখা যায় বাড়িতে।
এদিকে পুলিশের ব্যারিকেড তুলে নেয়ার পর শত শত শিশু-নারী-পুরুষ এ বাড়িটি একনজর দেখতে ছুটে আসে।
কল্যাণপুরের ‘জাহাজ বাড়ি’র ওই বাসায় মিরপুর বাংলা কলেজের ভুয়া পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেখিয়ে ওঠেছিল জঙ্গিরা। ওই বাসা থেকে এ ধরনের বেশকিছু ভুয়া আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। ওই বাসা থেকে রসায়ন ও পদার্থ বিজ্ঞানের বেশকিছু বই এবং জিহাদি মতাদর্শের কয়েক বস্তা বইও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তারা।
কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকে জানান, নিহত জঙ্গিদের সবাই সচ্ছল পরিবারের সন্তান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
র্যাব-পুলিশের অন্তত এক হাজার সদস্য অভিযানে অংশ নেন। সোমবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ভবন ও তার আশেপাশের এলাকা ঘিরে রেখেছিল পুলিশ। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ অভিযান শুরু হয়।
ওই ভবনে ১১ জন জঙ্গি ছিল। এদের মধ্যে নিহত হয় ৯ জন। সোমবার রাতে ভবনে ঢোকার সময় পুলিশের গুলিতে আহত এক জঙ্গিকে আটক করা হয়। একজন পালিয়ে গেছে।
কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গির মধ্যে আটজনের পরিচয় মিলেছে। অভিযানের সময় গুলিবিদ্ধ আটক যুবকই আটজনের পরিচয় জানিয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশের একটি সূত্র।
নিহতরা হলেন রবিন, অভি, আতিক, সোহান, ইমরান, তাপস, ইকবাল ও সাব্বির। তবে অপর আরেকজনের পরিচয় জানাতে পারেনি গুলিবিদ্ধ যুবক।
২৭ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম