বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০১৬, ০৪:৩৬:২৮

‘ইয়া আল্লাহ, আমাদের রক্ষা করুন’

‘ইয়া আল্লাহ, আমাদের রক্ষা করুন’

ঢাকা : রাজধানীর কল্যাণপুরে জাহাজ বাড়ির চতুর্থ তলায় পুলিশ অভিযান চালায় মঙ্গলবার।  অভিযানে নিহত হয় ৯ জঙ্গি।  ওই সময় পাশের লাগোয়া ভবনের একই তলায় ছিলেন শামসুল আলম নামের এক তরুণ।  

ঘটনা চলাকালে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তিনি সাতটি স্ট্যাটাস দেন।  সে সময়ের অসহায়ত্বের বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।

শামসুল আলম একটি অনলাইন পোর্টালে সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন।

রাত সোয়া একটায় শামসুল আলম প্রথম স্ট্যাটাসটি দেন।  সেখানে তিনি লেখেন, ‘ইয়া আল্লাহ, আমাদের রক্ষা করুন।  আমরা খুব বিপদে আছি।  কল্যাণপুর ৩ নম্বর রোডে।  চারপাশে শুধু জঙ্গিদের স্লোগান আর মুহুর্মুহু গুলি।’

এর ৭ মিনিট পর ১টা ২২ মিনিটে আরেকটি স্ট্যাটাসে শামসুল আলম লেখেন, ‘আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।  আমরা খুব বিপদে আছি। শুধু গুলি আর গুলি, জঙ্গিদের স্লোগান।  কল্যাণপুর ৩ নম্বর রোড (জাহাজবাড়ি ৫ নম্বর রোডে)। জানি না বাইরে কী হচ্ছে।’ এ স্ট্যাটাস দুবার পোস্ট করেন তিনি।

রাত ১টা ৫৪ মিনিটে শামসুল ফেসবুকে লেখেন, ‘আল্লাহ আমাদের রক্ষা কর। আমরা প্রশাসনকে একাধিকবার জানাচ্ছি, তারা শুধু বলছে তারাও নাকি অপারেশনে আছে। কিন্তু আমরা শুধু জঙ্গিদেরই আওয়াজ শুনছি।’

রাত ৪টা ১৮ মিনিটে শামসুল লেখেন, ‘সর্বশেষ ৩টা ১৭ মিনিটে জঙ্গিদের স্লোগান আর গুলির শব্দ শুনেছি। এখন নিঃশব্দ। প্রশাসন বা জঙ্গি, কোনো পক্ষেই আওয়াজ নেই।  সম্ভবত আমাদের বাসার গেট ভেঙে ফেলা হয়েছে।  আমাদের বাসায় সম্ভবত প্রশাসন অবস্থান করছে। তবে ১০০% নিশ্চিত বলতে পারছি না। কিছু সূত্রে জানতে পারলাম সকালে প্রশাসনের অভিযান চলবে। জানি না কী হয়। সবার কাছে দোয়া চাই। আমাদের জন্য দোয়া করুন।’

সকাল ৭টা ৫৩ মিনিটে শামসুল আলম স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘অভিযান সমাপ্তি ঘোষণার পরও মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শুনছি।  আতঙ্ক কাটছেই না।’

৮টা ১৫ মিনিটে শামসুল আলম তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ঘটনার শুরু রাত সাড়ে ১২টার দিকে। আমাদের বিল্ডিংয়ের তিনতলা থেকে এক মহিলা চোর চোর বলে চিৎকার করতে থাকে। এরপর আমরা এবং আশপাশের বিল্ডিং থেকেও চোর চোর বলে চিৎকার করতে থাকি। কিছু সময় হইহল্লা চলল। হঠাৎ স্লোগান, ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’। ভাবলাম, চোর ধরা পড়েছে। চোর দেখতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় কয়েকবার বিকট শব্দ হলো’।

এরপর লিখেছেন, ‘আমরা ৪র্থ তলায় থাকি, জঙ্গিরাও ৪র্থ তলায়। স্বাভাবিকভাবেই জঙ্গিদের রুম থেকে আমাদের রুমের ব্যবধান ৫-১০ হাত। এ সময় হঠাৎ পাশের রুম থেকে বড় ভাইয়েরা এসে বলল জঙ্গি হামলা। এরপর সব নিস্তব্ধ। শুধু জঙ্গিদের স্লোগান আর গুলির শব্দ। ১০-১৫ মিনিট পরপর জঙ্গিদের স্লোগান আর গুলির শব্দে রাত পেরিয়ে ভোর ৬টা। এরপর শুরু হলো মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। জানতে পারলাম, ৯ জন জঙ্গিই মারা গেছে। অভিযান সমাপ্ত। কিন্তু অভিযান সমাপ্তির আধা ঘণ্টা পরও প্রায় ১০-১৫ রাউন্ড গুলির শব্দ পেলাম। কী যে আতঙ্ক আর উদ্বেগের মধ্যে রাতটা গেল আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানে। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সুস্থ আছি। তবে এ ঘটনা এখানেই শেষ না। আমাদের বিল্ডিংয়ের সব ফ্ল্যাটেই বাহির থেকে তালা দেওয়া। রুম থেকে বের হতে পারছি না। পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য আপনাদের দোয়া প্রার্থনা করছি।’
২৭ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে