মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:৪১:১৮

সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ঢাকা মহানগর আ.লীগের

সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ঢাকা মহানগর আ.লীগের

এমরান হোসাইন শেখ : গঠনতন্ত্র অনুসারে আওয়ামী লীগের প্রতিটি শাখা সংগঠনের মেয়াদকাল ৩ বছর। নিয়ম-অনুযায়ী সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিটি স্তরের নতুন কমিটি গঠিত  হবে। এই মেয়াদ শেষে হবে আবার নতুন সম্মেলন। কিন্তু দলটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা ঢাকা মহানগর এক যুগ আগের গঠিত কমিটি দিয়েই চলছে। শেষ হয়ে যাচ্ছে এই কমিটির সম্মেলনের মেয়াদও।

গত রোজার ঈদের আগে শোনা যাচ্ছিল ঈদের পর কমিটি গঠিত হবে। এখনও শোনা যাচ্ছিল, কোরবানির ঈদের পরে কমিটি হবে। এভাবে ঈদের পর ঈদ যায়, পার হয়ে যায় একের পর এক বেঁধে দেয়া  সময়ও। কিন্তু ঘোষণা  আসে না মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠনের। এবারও কমিটি গঠনের বিষয়টি আলোচনার মধ্যে থাকবে  কি না—তা নতুন ডেটলাইন পার না হওয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না।

অবশ্য, ইতোমধ্যে বিভক্ত ঢাকা সিটির দুটি কমিটির প্রস্তাবিত নেতৃত্বের তালিকা দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে জমা দেয়া হয়েছে। এর ফলে শিগগিরই কমিটি ঘোষণার উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রস্তাবিত কমিটির কয়েকজনের বিরুদ্ধে নগর নেতাদের আপত্তি উঠেছে। এছাড়া নগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও বিদায়ী অবিভক্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ঢাকা উত্তরের সভাপতি হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ কারণেই নগরীর মূল কমিটির পাশাপাশি  থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের নতুন নির্দেশনায় আবারও সময় ক্ষেপণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও নগর ও কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন, আগের টাইমফ্রেমগুলো অতিক্রম হলেও এবারে তা মিস হওয়ার শঙ্কা নেই। তারা জানান, চলতি বছরের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে অবশ্যই নগর কমিটি ঘোষণা করা হবে।

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এর দুদিন আগে ২৯ ডিসেম্বর দলের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা কমিটি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তিন বছর মেয়াদি ওই সম্মেলনটি হয় দীর্ঘ সাড়ে ৯ বছর পর ২০০৩ সালের ১৮ জুন নগরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে, সম্মেলন হলেও তখন কোনও কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। সম্মেলন থেকে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রীকে নগরের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষমতা দেয়া  হয়। পাশাপাশি নগর বিভক্ত হবে  না কি, অবিভক্ত থাকবে, সেই এখতিয়ারও প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পরপরই ঢাকা মহানগরের কমিটি গঠন করা হবে।

কেন্দ্রীয় ও নগর দুটি কমিটিই দলীয় সভাপতি একই সঙ্গে ঘোষণা করবেন—এমন তথ্যের কথা ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছিলেন। কিন্তু ঘটনার পর পৌনে তিন বছর পার হলেও আলোর মুখ দেখেনি নগর কমিটি। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সংগঠনের প্রতিটি পর্যায়ে তিন বছর পর পর সম্মেলনের  বিধান রয়েছে। অথচ নগর আওয়ামী লীগ তার সম্মেলনের পর কমিটি ছাড়াই আরেকটি সম্মেলনের সময় ঘনিয়ে এসেছে।

২০১২ সালের সম্মেলনের পর এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ‘শিগগিরই নগরীর নতুন কমিটি ঘোষণা’-এর কথা শোনা গেছে। বিশেষ করে ঈদ এবং শোকের ‍মাস আগস্টের আগে ও পরে খবরটি বেশি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত   এর কোনও বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা ‍যায়, কমিটি গঠনের প্রথম প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় ঢাকা মহানগরী অখণ্ড থাকবে, না কি সিটি করপোরেশন ও অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের মতো বিভক্ত করা হবে, এ  নিয়ে। ঢাকাকে ভাগ করার বিষয়ে শুরুর দিকে দলের হাইকমান্ডও দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন বলে জানা গেছে। এছাড়া নগর কমিটির একজন প্রভাবশালী নেতাও নগরীকে অবিভক্ত রেখে তার সভাপতির দায়িত্ব পেতে চেয়েছিলেন।

দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলীয় হাইকমান্ড প্রথমে অখণ্ড নগর আওয়ামী লীগের পক্ষে থাকলেও সিটি করপোরেশনকে বিভক্ত করার পরিপ্রেক্ষিতে নগরের সংগঠনকেও বিভক্ত করার পক্ষে মত দেন। ফলে  গত বছর অক্টোবরে অনুষ্ঠিত দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় নগর আওয়ামী লীগকে বিভক্ত করার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তও  নেওয়া হয়।

এদিকে, নগরীকে বিভক্ত করার সিদ্ধান্তের পর দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম চলতি বছরের শুরুতে নগরীতে পৃথক দুটি কমিটি করার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে সরকার পতনের  আন্দোলনের ডাক দিলে নগর কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া থমকে যায়। মার্চে এসে বলা হয়, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরপরই কমিটি গঠন করা হবে।  এরপর মে/জুনে বলা হয়, ঈদুল ফিতরের পর হবে নতুন কমিটি কিন্তু তার কোনওটাই হয়নি। এবার খুব জোরেশোরে শোনা যচ্ছে আসন্ন কোরবানির ঈদের আগে বিভক্ত নগরীর কমিটি গঠনের বিষয়টি।

অবশ্য এবারের খবরের সঙ্গে কিছু দৃশ্যমাণ কার্যক্রমের কথাও শোনা যাচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনার জন্য দলের যে দুই কেন্দ্রীয় নেতা কর্নেল ফারুক খান ও ড. আবদুর রাজ্জাককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ওই দুই নেতাকে নগর আওয়ামী লীগের কমিটির নেতৃত্ব বাছাইয়ের দায়িত্বও দেয়া হয়। ইতোমধ্যে তারা দুটি পৃথক খসড়া কমিটি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছেন। সভাপতির নতুন নির্দেশে তারা এখন ওয়ার্ড ও থানা কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচনে কাজ করছেন বলে সূত্র জানায়।

সূত্র মতে, প্রাথমিক পর্যায়ে থানা ও ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি, সিনিয়র সহ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ১ নম্বর সাংগঠিক সম্পাদক নির্বাচন করছেন বলে জানা গেছে। নগরের নেতারা মনে করছেন সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এবার সত্যিই তারা নগর শাখার জন্য নতুন কমিটি পাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ জানান, তাদের কাছে কমিটি ঘোষণার বিষয়ে কোনও খবর নেই। তবে সহসা কমিটি হতে পারে, এমন খবর অন্যদের মতো তারাও শুনেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে, উনি ভেবে-চিন্তে যেটা ভালো মনে করেন, সেটাই করবেন। রাজধানীর মতো স্পর্শকাতর শাখায় নেত্রী নিশ্চয়ই অনেক ভেবে-চিন্তে কমিটি দেবেন। নেত্রী যে কমিটি দেবেন, আমরা সেটাকে স্বাগত জানাব।

এম এ আজিজ আরও বলেন, শেখ হাসিনা কবে ও কখন কমিটি দেবেন, এটা সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার। তবে বিগত দিনে দেখে আসছি, নগরের কমিটি গঠনের আগে আমাদের ডেকে কথা বলেন। এবারও আশা করছি, কমিটি ঘোষণার আগে আমাদের ডাকবেন।

ঢাকা উত্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান প্রতিবেদককে বলেন, আমিসহ কয়েকজনকে তিনি কমিটি গঠনের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি মহানগর উত্তরের একটি খসড়া কমিটি করে দলীয় সভাপতিকে দেখিয়েছি। ওই তালিকা দেখানোর পর তিনি আমাদের আবার থানা ও ওয়ার্ডগুলোর কমিটি তৈরির দায়িত্ব দিয়েছেন। ওই নির্দেশনার পর আমরা এখন কাজ করছি। আশা করি, কিছু দিনের মধ্যে এই তালিকাও সভানেত্রীর কাছে দিতে পারব।

অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের সমন্বয়ে কমিটির তালিকা তৈরি করছেন বলে জানান ফারুক খান। তিনি বলেন, আশা করছি শিগগিরই কমিটি ঘোষণা করা হবে।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কমিটিতে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন এমন খবরের জবাবে ফারুক খান বলেন, এ ব্যাপারে তার সঙ্গে কোনও কথা হয়নি। যতদূর জানি, মায়া ভাই অবিভক্ত ঢাকার দায়িত্ব পেতে চান। কিন্তু আমাদের দলে তো ঢাকাকে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে দলের এই নেতা বলেন, মায়া ভাই দলের পরীক্ষিত ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতা। তাকে নগরের দায়িত্ব দেবেন কি না, সেটা নিশ্চয়ই দলীয় সভপতি চিন্তা করবেন। তবে তাকে নিয়ে কোনও মুখরোচক গল্প রচনার সুযোগ আছে বলে মনে করি না। আর তিনি তো এ বিষয়ে নিজ থেকে কিছু বলেননি।

নতুন কমিটি গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে প্রস্তাবিত যে কমিটির তালিকা জমা দেয়া হয়েছে, তাতে ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে এমএ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শাহে আলম মুরাদ এবং ঢাকা উত্তরে সভাপতি হিসেবে একেএম রহমতুল্লাহ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাদেক খানের নাম রয়েছে।

এরই মধ্যে ১২ সেপ্টেম্বর, ঢাকা মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে  দেখা করে মহানগরের প্রস্তাবিত কমিটির ব্যাপরে নগর নেতাকর্মীদের মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে উত্তরের প্রস্তাবিত সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদকের ব্যাপারে তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। পাশাপাশি এ সময় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া উত্তরের সভাপতির দায়িত্ব পেতে চান, এমন মনোভাবের কথাও জানানো হয়েছে।-বাংলা ট্রিবিউন
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে