বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ০১:৩৮:৪৫

খালেদা জিয়াকে এতিমখানা করতে টাকা দেয়া হয়েছিলো, তিনি সেটা করে দিয়েছেন এখানে বিশ্বাস ভঙ্গ হয়নি: দুদক

খালেদা জিয়াকে এতিমখানা করতে টাকা দেয়া হয়েছিলো, তিনি সেটা করে দিয়েছেন এখানে বিশ্বাস ভঙ্গ হয়নি: দুদক

এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় শুনানি শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ সময় আপিল বিভাগকে দুদক জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এতিমখানা করতে টাকা দেয়া হয়েছিলো, তিনি সেটা করে দিয়েছেন এখানে বিশ্বাস ভঙ্গ হয়নি। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) শুনানি হয়।

এর আগে বুধবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিলের পক্ষে শুনানি শেষ হয়। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়। বুধবার (৮ জানুয়ারি) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে আসামিপক্ষের আপিল শুনানি শেষ হয়। 

এদিকে আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। এ ছাড়াও আইনজীবী গাজী কামরুল ইসলাম সজল, আমিনুল ইসলাম, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, মাহবুবুর রহমান খান, ষ জাকির হোসেন, ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী, মাকসুদ উল্লাহ, আজমল হোসেন খোকন উপস্থিত ছিলেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হোসাইন। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ এ মামলায় খালেদা জিয়াকে যে সাজা দিয়েছেন তাতে আইনের মারাত্মক ব্যত্যয় হয়েছে। শুধু তাই নয়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের যে অর্থ আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে, সেই অর্থও সুরক্ষিত আছে, সেই অ্যাকাউন্টে তা সুরক্ষিত আছে। তারা আরও বলেন, খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই এ রায় দেওয়া হয়। আমাদের প্রত্যাশা আমরা এ মামলায় ন্যায় বিচার পাব।

এর আগে ১১ নভেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে করা আবেদন) মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেন আদালত। পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে আপিলের সারসংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা:
২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ মামলাটি দায়ের করেছিল। পরে ২০০৯ সালে এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়। এর মাঝে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদলতের নির্দেশে স্থগিত ছিল।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ হলো- এতিমদের জন্য সহায়তা হিসেবে আসা ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কুয়েতের আমির ওই টাকা দিয়েছিল। সৌদি আরবের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যম ওই টাকা ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে সোনালী ব্যাংকের হিসাবে জমা হয়।

এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমান অভিযুক্ত হন। চূড়ান্ত অভিযোগে ছয় জনের মধ্যে আরও আছেন মমিনুর রহমান, সাবেক এমপি কাজী সলিমুল হক, শরফুদ্দীন আহমেদ এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী।

মামলায় ২৩৬ কার্যদিবসে ৩২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়, ২৮ কার্যদিবসে আত্মপক্ষ সমর্থন এবং ১৪ কার্যদিবস যুক্তি তর্ক শুনানি হয়। পরে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন বিচারিক আদালত। 

রাজধানীর বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান এ কারাদণ্ড দেন।

একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

রায়ে খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অর্থদণ্ডের টাকা প্রত্যেককে সম-অঙ্কে প্রদান করার কথা বলা হয়।

পরে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া আপিল করেন। কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ পৃথক আপিল করেন।

এরপর ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই তিন আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন।

একই বছরের ২৮ মার্চ মামলার আসামি খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকের রিভিশন আবেদনে রুল দেন হাইকোর্টের একই বেঞ্চ। খালেদা জিয়ার সাজা কেন বৃদ্ধি করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসসহ উভয়পক্ষ মোট ৩২ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।

এরপর সাজা বৃদ্ধিতে দুদকের আবেদনে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।

এছাড়া পাঁচ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া এবং ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের আপিল খারিজ করেন আদালত। পরে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ আপিল বিভাগে দুটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন খালেদা জিয়া।

 

 

 

 

 

 

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে