মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৮:০৪:৫৭

ইতালীয় হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী যা বললেন

 ইতালীয় হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী যা বললেন

ঢাকা : প্রায় ৫০ বছর বয়সী চেসারি তাভেল্লা নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক খ্রিস্টধর্মীয় আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারচার্চ কো-অর্ডিনেটশন কমিশন ডেভোলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (আইসিসিও) খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মসূচি প্রফিটেবল অপরচ্যুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটির (প্রুফ) প্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন।

তাভেল্লা আইসিসিওতে ১৯৯৩ সাল থেকে কর্মরত আছেন। প্রফ প্রকল্পটি চার বছর মেয়াদি। ঢাকায় আইসিসিও’র কার্যালয়ের অবস্থান গুলশান-১ এর ৩০ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে।

তিনি বাংলাদেশে একাই বসবাস করতেন। গুলশান-২ নম্বর সার্কেলের ৫৪ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে তিনি থাকতেন।

সোমবার সন্ধ্যায় তিনি গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কের ফুটপাথ ধরে জগিং করছিলেন। ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখানে রাত পৌণে ৮ টার দিকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। তার বুকে একটি ও পীঠের দিকে দুইটি গুলিবিদ্ধ রয়েছে।

অন্যান্য দিন ওই এলাকায় রাস্তার বাতিগুলো জ্বলতে দেখলেও ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর থেকে বাতিগুলো নেভানো ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক মোবারক হোসেন জানিয়েছে, ৯০ নম্বর সড়কে গুলশান এভিনিউয়ের সংযোগস্থলে একটি মোটরসাইকেলের ওপর তিন যুবক বসেছিল। ওই সময় সড়কে বিদ্যুৎ ছিল না। অন্ধকারের ভেতর ঘটনাস্থলে আসামাত্র যুবকদের দু’জন খুব কাছ থেকে বিদেশী নাগরিককে লক্ষ্য করে এলাপাতাড়ি গুলি ছুড়ে মোটরসাইকেলে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরপরই এলাকায় বিদ্যুৎ চলে আসে।  

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট ও বেসরকারি ইন্টিগ্রেটেড সিকিউরিটি সার্ভিসেসের এরিয়া ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, তাভেল্লাকে হত্যার আগে দুই ব্যক্তি অনুসরণ করছিল।

মোশাররফ বলেন, “টিশার্ট ও থ্রিকোয়ার্টার প্যান্ট পরা ওই বিদেশি নাগরিক ৯০ নম্বর সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন। দুই ব্যক্তিকে তার পেছনে যেতে দেখেছি। সম্ভবত তারা তাকে অনুসরণ করছিল। আর ৮৩ নম্বর সড়কে নির্মাণাধীন জার্মান ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ভবনের সামনে মটরসাইকেলসহ দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ব্যক্তি। তবে সড়কবাতি নেভানো থাকায় তাদের চিনতে পারিনি।”

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মোশাররফ বলেন, “কিছুদূর এগোনোর পর পেছনে থাকা ওই দুই ব্যক্তির কেউ একজন গুলি ছুঁড়ে। পরপর তিনটি গুলির শব্দ আমি শুনেছি। ছুটে গিয়ে দেখি বিদেশি লোকটা মাটিতে পড়ে ছটফট করছে, তার সারা শরীর রক্তে ভিজে গেছে।”

এদিকে ৮৩ নম্বর সড়কের মাথায় কর্মরত রিকশা মেকানিক মো. জয়নাল জানান, তাভেল্লাকে হত্যার পর খুনিদের বন্দুক হাতে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যেতে তিনি দেখেছেন।

তিনি বলেন, “তিনটা থেকে চারটা গুলির আওয়াজ শোনার পরই দেখি হেংলা পাতলা দুইটা পোলা একটা মটরসাইকেলে উঠল। মাঝখানের পোলাডার হাতে একটা পিস্তল ছিল। ওগো জন্য রাস্তার কিছু দূরে একটা মোটরসাইকেলে মাঝবয়সী এক লোক অপেক্ষা করছিল।”

প্রায় চার দশক ধরে এই এলাকায় কর্মরত জয়নাল বলেন, “ওদের এই এলাকায় আগে কখনো দেখি নাই। ওদের দুইজন কালো গেঞ্জি ও প্যান্ট পড়া ছিল, আর মোটরসাইলে থাকা লোকটা একটা ডোরাকাটা গেঞ্জি পরছিল। ওদের মুখে কোন কাপড় বাঁধা ছিল না। দেখে বোঝার উপায় নাই ওরা খুন করতে পারে।”

গুলশান থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক তদন্তে পূর্বপরিকল্পিত বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ঘাতকরা অনেকদিন ধরেই তাকে অনুসরণ করছিল। ছিনতাইয়ের চেষ্টা হলে গুলি করার পর তারা ওই বিদেশী নাগরিকের কাছে থাকা মালামাল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করত। ঘটনার পর তার কাছ থেকে কিছুই খোয়া যায়নি বলে ওসি জানান।

এদিকে খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ভারপ্রাপ্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডে তিনজন অংশ নেয় বলে প্রাথমিক তথ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে দু’জন সরাসরি গুলি করে। বাকি একজন মোটরসাইকেলের ওপর বসেছিল।

ঘটনাস্থলের আশপাশে সিসি ক্যামেরা থেকে ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত আইজিপি বলেন, ঘটনা তদন্ত ও ঘাতকদের গ্রেফতারে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা মাঠে নেমেছে। খুব শিগগির ঘাতকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
২৯সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে