ঢাকা : ছোট্ট একটা বেকি কটে গোলাপি ড্রেস আর একই রঙের টুপি মাথায় পরে তাকিয়ে আছে আয়ান। এই আয়ানই রাজধানীর বাড্ডার ডাস্টবিনে পলিথিনে মোড়ানো ছিল।
২৮ জুলাই বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে আয়ানের নাম রাখেন নবজাতক বিভাগের চিকিৎসকরা।
সেখানে তারা কেক কাটেন, নতুন পোশাক পরান আয়ানকে। বেলুন দিয়ে সাজানো হয় তার কক্ষটি।
গত ১০ জুলাই দুপুরে এক নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে কোলে করে নিয়ে আসেন কুড়িয়ে পাওয়া নবজাতককে। সঙ্গে ছিল পুলিশ।
ভর্তি খাতায় ‘আননোন’ লিখে শিশুটিকে সেদিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে শিশুটি এখানেই বড় হচ্ছে। চিকিৎসা চলছে তার।
শিশুটিকে ভর্তি করার পরদিন শাহবাগ থানায় একটি জিডি করেন হাসপাতালের পক্ষে নবজাতক ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান।
শিশুটিকে উদ্ধারকারী বাড্ডা থানার সাব ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ নওশাদ আলী বলেন, বাড্ডা এলাকার পোস্ট অফিস গলির ভেতর একটি ডাস্টবিনে শিশুটি পাওয়া যায় বলে স্থানীয়রা থানায় খবর দেয়।
পরে সেখানে গিয়ে দেখি, শিশুটিকে কোলে নিয়ে এক নারী বসে আছেন। একটি প্লাস্টিকের শপিং ব্যাগে শিশুটি মোড়ানো ছিল। ওই নারী এবং স্থানীয় মানুষের কাছে শুনেছি, শিশুটির কান্না শুনে লোকজন এগিয়ে আসে। পরে ওই নারী ডাস্টবিন থেকে তাকে তুলে নেয়।
তাকে নিয়েই হাসপাতালে এসে শিশুটিকে ভর্তি করা হয়। বাড্ডা এলাকাতে শিশুটির খোঁজ পেতে থানা থেকে মাইকিং করা হয়েছে বল জানান তিনি। বলেন, কে বা কারা শিশুটিকে এভাবে ফেলে গেছে সে বিষয়ে এখনো কিছুই জানতে পারিনি।
শিশুটির চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়।
শিশুটি বর্তমানে সুস্থ হলেও অধিকতরও চিকিৎসার জন্য তাকে এনআইসিইউয়ে (নিউনেট্যাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) রাখা হয়েছে।
অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জী বলেন, শিশুটি এখন অনেকটাই সুস্থ। তবে কিছু ইনফেকশন থাকায় তাকে এখন অ্যান্টোবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। আমরা সবাই মিলে তার জন্য কাজ করছি। তার সুস্থতা মানেই চিকিৎসকদের আনন্দ।
মনীষা ব্যানর্জী বলেন, শিশুটি সুস্থ হবার পর হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী সমাজসেবা অধিদফতরে যোগাযোগ করা হবে। এ জন্য আগামী রোববার হাসপাতালের পরিচালক বরাবর আবেদন করব। এরপর সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সমাজসেবা অধিদফতরের ‘শিশুমনি নিবাসে’ তাকে হস্তান্তর করা হবে।
শিশুটিকে এরই মধ্যে অনেকে দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান মনীষা ব্যানর্জী। বলেন, যেহেতু শিশুটি হাসপাতালে আসার পরে তার নামে একটি জিডি হয়েছে, সেক্ষেত্রে সরকারি কিছু নিয়ম মেনেই তাকে দত্তক নিতে হবে।
ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটির নাম রেখেছেন এনআইসিইউতে শিশুটির দেখাশোনা করছেন এমডি রেসিডেন্ট পেন্ডোরা গ্লোরি। গ্লোরি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমি বাচ্চাটির দেখাশোনা করছি। তাকে ওয়ার্ডে ডাকা হতো আননোন বেবি বা বেড নম্বর সেভেন বলে।
তিনি বলেন, এটা আমার খারাপ লাগতো। একটা সুন্দর নাম তাকে দেব বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। সবাই মিলে খুব ছোট একটা সেলিব্রেশনের মধ্যদিয়ে তার নাম রাখলাম। কাল থেকে কেউ আর ওকে আননোন বা বেড নম্বর সেভেন বলেন না। আয়ান বলে ডাকে।
২৯ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম