শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬, ০১:৩৩:২২

জঙ্গি হামলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল ‘দুই নাতি’

জঙ্গি হামলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল ‘দুই নাতি’

আবুল খায়ের: রাজধানীর কল্যানপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গির দুজনের নাম বিশেষ কারণে আলোচিত হচ্ছে। এরা হলেন সেজাদ রউফ ওরফে অর্ক ওরফে মরক্কো ও আকিফুজ্জামান খান। প্রথম জন সাবেক সেনা কর্মকর্তার নাতি।

দ্বিতীয় জন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের নাতি। গোয়েন্দা সূত্র জানাচ্ছে, পরবর্তী সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিলেন এরা দুজন।

একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আকিফুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। বিদেশ থেকে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার অর্থ আসতো তার মাধ্যমে। জঙ্গি হামলা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের                 রূপরেখাও তৈরি করতেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার সময় তত্কালীন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিএফআই (বর্তমান ডিজিএফআই) প্রধান ছিলেন আবদুর রউফ। নিহত জঙ্গি সেজাদ রউফ ওরফে অর্ক তার নাতি।

পঁচাত্তরে কর্নেল জামিল আহমেদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের কথা থাকলেও সময়মতো দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় আব্দুর রউফ ইতিহাসের পাতায় ‘বিতর্কিত’ সেনা কর্মকর্তা হিসেবেই পরিচিত। পরে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার সখ্য ছিল সবসময়ই।

জিয়ার শাসনামলে ডিএফআইকে ডিজিএফআই করা হলে কে এম আমিনুল ইসলামকে পরিচালক পদে দেয়া হয়। এর পরপরই অভিযোগ এনে তাকে সেখান থেকে সরানো হলে আব্দুর রউফ পরিচালকের দায়িত্ব পান।

অর্কের বাবা তৌহিদ রউফও ছিলেন সেনাবাহিনীর ঠিকাদার। এমনকি অর্ক নিজেও সেই অস্ত্র ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন। পুলিশ জানায়, অর্ক যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী বাংলাদেশি ছিলেন।

উইকিলিকস কর্তৃক ফাঁস করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের গোপন নথি (৮ সেপ্টেম্বর ২০০৯) অনুসারে, ১৯৭৭ সালের ৬ এপ্রিল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রউফ অস্ত্র ব্যবসার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিউ ভিক্টর লিমিটেড (এনভিএল) গড়ে তোলেন। তৌহিদ রউফ ১৯৮৮ সাল থেকে এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন। আর অর্ক এখানে পরিচালক পদে ছিলেন।

অর্কের জীবন বৃত্তান্ত থেকে তার কোম্পানির কাজ সম্পর্কে জানা যায়। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা (এনভিএল) এই ব্যবসা ক্ষেত্রে সবচেয়ে পুরোনো কোম্পানি। আমরা বিদেশ থেকে (চীন, ইংল্যান্ড, ইতালি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা) পুলিশ, আর্মি, র্যাব, নৌবাহিনীর কাছে টেন্ডার অনুযায়ী সেনা প্রতিরক্ষা সরঞ্জামাদি সরবরাহ করি’।

গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত যৌথবাহিনীর অভিযানে নিহত জঙ্গি নিবরাসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন অর্ক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে অর্ক নিখোঁজ ছিলেন বলে তার পরিবার সূত্র দাবি করেছে।

অর্কের বাসা রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় (বাসা-৩০৪, রোড-১০, ব্লক-সি)। সামপ্রতিক সময়ে নিখোঁজদের প্রকাশিত ছবির তালিকায় সাত নম্বরে ছিল তার নাম। তার নিখোঁজের ঘটনায় ভাটারা থানায় পরিবারের পক্ষ থেকে জিডি করা হয়।

কল্যাণপুরে নিহত অপর ৯ জঙ্গির অন্যতম আকিফুজ্জামান খান ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীর হাতে নিহত সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের নাতি।

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের মোনায়েম খান ছিলেন মুসলিম লীগের বড় নেতা। ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের দায়িত্ব পেয়ে বাংলার মানুষের স্বাধিকার আন্দোলন দমনে আইয়ুব খানের হাতিয়ার ছিলেন মোনায়েম খান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতায় নামা মোনায়েম খান ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর ঢাকার বনানীর বাসায় মুক্তিবাহিনীর গুলিতে আহত হন। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

আকিফুজ্জামান খানের বাড়ি বনানীতে। ওয়ারহাউজের পাশে রহস্যময় এক বাড়িতে তিনি থাকতেন। আকিফুজ্জামান আড়াই মাস ধরে নিখোঁজ ছিলেন। বাসা থেকে চলে যাওয়ার সময় মোবাইল রেখে গেছেন। সেটি ২৪ ঘন্টা খোলা ছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে কাউকে পায়নি।

একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আকিফুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি বিলাসবহুল গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করতেন এবং জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়টি তদারকি করতেন বলে জানা গেছে। বিদেশ থেকে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার অর্থ আসতো আকিফুজ্জামানের মাধ্যমে। তিনি নিজেও ছিলেন জঙ্গি অর্থের যোগানদাতা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের রূপরেখাও তৈরি করতো সে।

একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আটক বেশ কয়েকজন জঙ্গি জিজ্ঞাসাবাদে আকিফুজ্জামান সম্পর্কে এসব তথ্য দিয়েছে। কল্যাণপুরে জড়ো হওয়া জঙ্গিরা বড় হামলার পরিকল্পনা করেছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।-ইত্তেফাক

৩০জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে