মঙ্গলবার, ০২ আগস্ট, ২০১৬, ০৩:২৯:১৮

নিহত জঙ্গিদের পাঁচজনই ছিল আত্মঘাতী

নিহত জঙ্গিদের পাঁচজনই ছিল আত্মঘাতী

আতাউর রহমান: রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অপারেশন স্টর্ম ২৬-এ নিহত নয় জঙ্গির মধ্যে পাঁচজনই নিষিদ্ধ সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) একাংশ 'নব্য জেএমবি'র সুইসাইড স্কোয়াডের (আত্মঘাতী দল) সদস্য ছিল। দেশে বড় ধরনের আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য তাদের তৈরি করা হচ্ছিল।

রাজধানীর মিরপুরে একটি জঙ্গি আস্তানা ছাড়াও গাইবান্ধায় ওই জঙ্গিদের আত্মঘাতী হয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সর্বশেষ তাদের কল্যাণপুরের আস্তানায় রেখে চূড়ান্ত মগজধোলাইয়ে কাজ করছিল সংগঠনটির 'মনস্তাত্তি্বক প্রশিক্ষক' আবদুল্লাহ ওরফে মোতালেব।

এর আগে তাদের অস্ত্র ও বিস্ফোরকের প্রশিক্ষণ দেয় রায়হান কবির ওরফে তারেক। আত্মঘাতী গ্রুপের এসব সদস্য শিগগিরই রাজধানীর অন্তত দুটি এলাকায় হামলার পরিকল্পনাও করছিল বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য মিলেছে।


তদন্ত-সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নিহত নয়জনের মধ্যে তাজ-উল-হক রাশিক, আকিফুজ্জামান, সাজাদ রউফ ওরফে অর্ক ওরফে মরক্কো, মতিয়ার রহমান এবং জোবায়ের হোসেন সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য ছিল।


পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, কল্যাণপুর আস্তানা থেকে উদ্ধার করা বিভিন্ন আলামত বিশ্লেষণ ও গ্রেফতার জঙ্গি সদস্য রাকিবুল হাসান ওরফে রিগানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, নিহত নয়জনের মধ্যে অন্তত পাঁচজন সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য ছিল।

এ ছাড়া এখনও পরিচয় শনাক্ত না হওয়া নিহত জঙ্গি সদস্যও সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা শিগগিরই রাজধানীর জনসমাগমস্থলে আত্মঘাতী হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে তথ্য রয়েছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, নিহত অন্য তিনজনের মধ্যে রায়হান কবির তারেক 'নব্য জেএমবি'র অস্ত্র ও বোমা প্রশিক্ষক ছিল। তার সঙ্গে অপর একজন প্রশিক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। এ ছাড়া আবদুল্লাহ সংগঠনের সদস্যদের ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে মগজধোলাইয়ের কাজ করত। নিহত হাকিম নাইমও মধ্যমসারির নেতা ছিল।

কাউন্টার টেররিজমের অপর এক কর্মকর্তা জানান, গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁ ও শোলাকিয়ার ঈদগাহ ময়দানে জঙ্গিরা সরাসরি হামলা চালায়। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মাঠ পর্যায়ে হামলার দায়িত্ব পালন করা দুর্ধর্ষ বেশ কয়েক জঙ্গি নিহত হয়।

এরপরই তারা গ্রুপ করে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছিল বলে মনে হচ্ছে। এজন্য নিজেদের মধ্যে আত্মঘাতী গ্রুপ তৈরি করে একজন বা দু'জন করে হামলার পরিকল্পনা করছিল।


গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গুলশান হামলার পর মিরপুরের শেওড়াপাড়ার একটি জঙ্গি আস্তানা থেকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর ব্যবহৃত পোশাকের আদলে তৈরি বেশ কিছু কালো রঙের পোশাক পাওয়া যায়।

এরপর কল্যাণপুরে নিহত ৯ জঙ্গির পরনেও একই ধরনের পোশাক দেখা যায়। মূলত ঢোলা পায়জামা-পাঞ্জাবির এসব পোশাক আত্মঘাতী জঙ্গিরা ব্যবহার করে থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, দেশে 'নব্য জেএমবি'র সদস্যরা মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ওই সংগঠনটিকে অনুসরণ করছে।

তবে এখন পর্যন্ত তাদের কোনো আস্তানা থেকে সুইসাইডাল বেল্ট জাতীয় কিছু জব্দ করা যায়নি। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, হয়তো সুইসাইড স্কোয়াডের এসব সদস্য প্রশিক্ষণের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। অথবা তাদের সুইসাইডাল সরঞ্জাম অন্য কোনো আস্তানায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন জঙ্গি রাকিবুল হাসানের দেওয়া তথ্য ও তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের পৃথক দুটি গ্রুপ গত ২২ জুলাই মোহাম্মদপুরের একটি শিয়া মসজিদ ও মিরপুরের একটি মসজিদে হামলার প্রস্তুতি নেয়।

তবে এসব মসজিদে পুলিশের উপস্থিতি ও দেহ তল্লাশির কারণে সে পরিকল্পনা থেকে জঙ্গিরা ফিরে আসে। ওই সময় পলাতক জঙ্গি খালেদ ও আজাদুল কল্যাণপুরের আস্তানায় অবস্থান করছিল। এরপরই তারা ঢাকায় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় দুটি স্থাপনা রেকিও করে।

তবে ২৭ জুলাই ভোরে কল্যাণপুরের আস্তানায় পুলিশের অপারেশন স্টর্ম-২৬-এর কারণে জঙ্গিদের এসব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পাশাপাশি বড় ধরনের হামলা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তা ছাড়া গুলশান হামলার পর কয়েকটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দারাও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করেন।

হামলাকারী নব্য জেএমবির নেতৃত্ব থেকে অপারেশনাল শাখার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের নামও জানতে পারেন গোয়েন্দারা। এতে এসব গ্রুপ সংগঠিত হতে না পেরে আপাতত আত্মগোপনে চলে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশের বাইরে পালিয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

নিহত অর্কের বাবার শরীর থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ: এদিকে কল্যাণপুরে নিহত নয় জঙ্গির মধ্যে সাজাদ রউফ ওরফে অর্কের বাবা তৌহিদ রউফের শরীর থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। গতকাল সোমবার দুপুরে মালিবাগে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে এ নমুনা রাখা হয়। নিহত জঙ্গির পরিচয় নিশ্চিত হতে তদন্ত কর্মকর্তারা এ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এর আগে জঙ্গি আবদুল্লাহর ভাই ও মতিয়ারের বাবার শরীর থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়।


কল্যাণপুরের ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি আবদুল মান্নান জানান, অপর ছয় জঙ্গির স্বজনের শরীর থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। এর আগে ময়নাতদন্তের সময় নয় জঙ্গির মৃতদেহ থেকেই ডিএনএ নমুনা রাখা হয়। এসব নমুনার সঙ্গে স্বজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করা নমুনা মিলিয়ে জঙ্গিদের পরিচয় নিশ্চিত করা হবে।-সমকাল

২ আগস্ট, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/সবুজ/এসএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে