মঙ্গলবার, ০৯ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:৩০:৫৬

ঝিনাইদহের পান বিক্রেতার মেয়ে এখন অলিম্পিকের সাঁতারু

ঝিনাইদহের পান বিক্রেতার মেয়ে এখন অলিম্পিকের সাঁতারু

স্পোর্টস ডেস্ক : ঝিনাইদহ শহরের হাটখোলা বাজারে পান বিক্রি করতেন আনিসুর রহমান। পানের ডালা সাজিয়ে বসে থাকতেন, মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যেত রোদ-বৃষ্টি। ছেলেমেয়েদের মুখে খাবার জোগাতে কী যে কষ্ট করেছেন একসময়! এখন দিন বদলেছে।

ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে চলমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞ অলিম্পিকে বাংলাদেশ দলের হয়ে অংশ নিচ্ছেন ঝিনাইদহের আনিসুর রহমানের মেয়ে সাঁতারু সোনিয়া আক্তার।

সেই হাটখোলা বাজারেই এখন বড়সড় মুদি দোকান দিয়েছেন আনিসুর রহমান। বাড়িতে উঠেছে পাকা ঘর। দুঃখ ঘুচেছে। সবই সম্ভব হয়েছে মেয়ে, সাঁতারু সোনিয়া আক্তারের সুবাদে। সোনিয়া দারিদ্র্য জয় করেছেন ‘সাঁতরে’। মুখে সোনালি হাসি এঁকে এখন অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে যাচ্ছেন ব্রাজিল। দারিদ্র্য আর বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে ঝিনাইদহের মেয়ে এখন রিও ডি জেনিরোতে।

সোনিয়া প্রথম আন্তর্জাতিক মিটে অংশ নেন সিঙ্গাপুরে ২০১০ যুব অলিম্পিক গেমসে, ২০১১-তে যুক্তরাজ্যের আইল অব ম্যানে অংশ নেন কমনওয়েলথ যুব গেমসে। এরপর সাঁতরেছেন ২০১৪ কাতার বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপ ও ২০১৫ কাজান বিশ্ব সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে।

সোনিয়ার বাবা আনিসুর রহমান জানান, বড় ছেলে সাঁতার শিখতেন জাহিদ স্যারের কাছে। সোনিয়াও বায়না ধরেন সাঁতার শেখার। বায়নার কারণেই সোনিয়াকে কোচের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বড় ভাই। ২০০৩ সালে যশোর শিক্ষা বোর্ড দলের হয়ে বয়সভিত্তিক সাঁতার দিয়ে সোনিয়ার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ শুরু। জাতীয় পর্যায়ে জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে ২০০৬ সালে জেতেন ১১টি সোনা, দুটি ব্রোঞ্জ। আর ২০১০ সালে ১১টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে দশটিতেই জেতেন সোনা। এর মধ্যে ৯টিতে ছিল জাতীয় রেকর্ড। ঘরোয়া টুর্নামেন্টে এমন সাফল্যই তাকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

বিশ্ব ফুটবলের বড় তারকা ব্রাজিলিয়ান নেইমারকে ভীষণ পছন্দ। নেইমারের দেশে অলিম্পিকে যাওয়ার রোমাঞ্চে রাতের ঘুমই যেন চলে গেছে সোনিয়ার!

সোনিয়ার বাড়ি ঝিনাইদহ শহরের পাশে ভুটিয়ারগাতি গ্রামে। ওই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই রক্ষণশীল। সোনিয়া ওই গ্রামেরই মাদ্রাসায় আলিম পড়ছেন। অনুশীলনের শুরুতে ‘ইভ টিজিংয়ের’ শিকার হয়েছেন যে কত, ঠিক নেই। প্রতিবেশীরা সোনিয়ার বাবাকে ডেকে বলত, ‘মেয়ে মানুষ সাঁতার শিখে কী হবে?’ কিন্তু বাবা কখনোই মেয়েকে বাধা দেননি। ঝিনাইদহের নবগঙ্গা সাঁতরানোর পর মাতিয়েছেন মিরপুরের জাতীয় সাঁতারপুল। এতদিন বাংলাদেশ আনসারের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, এ বছর স্থায়ী চাকরি পেয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে।

৯ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস‌‌‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে