বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৬, ১১:০৩:৩৬

১৪০ বছরে পঞ্চমবারের মত লজ্জায় ডুবল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল

১৪০ বছরে পঞ্চমবারের মত লজ্জায় ডুবল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দল

স্পোর্টস ডেস্ক: তিন বা তার অধিক টেস্টের সিরিজ খেলে ১৪০ বছরের ইতিহাসে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল মাত্র চারবার। অস্ট্রেলিয়া এই সময়ের মধ্যে ১৭৭টি টেস্ট সিরিজ খেলেছে।

বিশ্ব ক্রিকেটে দীর্ঘ সময় ধরে দাপট দেখিয়ে চলা সেই অজিদেরই পঞ্চমবারের মতো একই লজ্জায় ডোবাল শ্রীলঙ্কা। তিন টেস্ট সিরিজের শেষটিতে বুধবার ১৬৩ রানের অসাধারণ এক জয়ে সফরকারীদের পঞ্চম হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দিয়েছে লঙ্কানরা।

কলম্বো টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ের শুরুর দিকটা ছাড়া কখনোই চালকের আসনে ছিল না অস্ট্রেলিয়া। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা সেখানে সিরিজ জুড়েই ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে এসেছে।

স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ তো অজিদের জন্য আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছেন সিরিজ জুড়েই। শেষটাতেও তিনিই আধিপত্য দেখালেন। এদিন অজিদের দেড়শর সামান্য ওপরে (১৬০ রানে) গুটিয়ে দেওয়ার ইনিংসে নিলেন ৭ উইকেট। সেটিও মাত্র ১৮.১ ওভার বল করে। প্রথম ইনিংসেও ৬ উইকেট নিয়েছিলেন হেরাথ।

পাল্লেকেলেতে প্রথম টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট, গলেতে দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেট নেওয়ার পর কলম্বোতে ১৩! সব মিলিয়ে এই সিরিজে ২৮ উইকেট প্রাপ্তি হেরাথের। সেইসঙ্গে অজিদের বিপক্ষে কোনো লঙ্কান বোলারের সেরা টেস্ট বোলিংও।

কলম্বোতে ১৪৫ রান খরচায় ১৩ উইকেট নিয়েছেন হেরাথ। পেছনে ফেলেছেন কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরণকে। মুরালি ২০০৪ সালে গলেতে অজিদের বিপক্ষে ২১২ রানে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন। এমন সাফল্য ৩৮ বর্ষী হেরাথকে ম্যাচ ও সিরিজ সেরার দুই খেতাবই এনে দিয়েছে।

হেরাথের স্পিন ঘূর্ণি শুরুর আগে অজিদের সামনে ৩২৪ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে কৌশল সিলভার (১১৫) দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে ২৮৮ রানের লক্ষ্য দাঁড় করিয়ে চতুর্থদিন শেষ করেছিল তারা। শেষদিনে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে সেটার সঙ্গে যোগ করেছে আরো ৩৬ রান।

এতে ৮ উইকেটে ৩১২ রান নিয়ে পঞ্চমদিন শুরু করা শ্রীলঙ্কা ৩৪৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। অপরাজিত থাকা ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৬৫ ও সুরঙ্গা লাকমাল তখন ৪ রানে। এরপর হেরাথের ভেলকির জন্য অবশ্য খানিকটা অপেক্ষা করতে হয়েছে স্বাগতিকদের।

অজিদের জন্য লক্ষ্যের পেছনে ছোটার থেকে ম্যাচ বাঁচানোটাই সহজ পথ হতে পারতো। আর লঙ্কানদের জন্য সহজ হতো দুই প্রান্ত থেকেই স্পিন আক্রমণ চালানো। শুরু থেকে দুদলই সেই ‘সহজ’ পথে হেঁটেছে! লঙ্কানরা যেমন দুই স্পিনারে আক্রমণ শুরু করেছে। দুই অজি উদ্বোধনী শন মার্শ ও ডেভিড ওয়ার্নারও দেখেশুনেই এগোচ্ছিলেন।

এসময় ৭৭ রানের জুটি গড়েন মার্শ-ওয়ার্নার। এরপর প্রথম দুটি আঘাত আসে দিলরুয়ান পেরেরার থেকে। ২৩ রান করা মার্শকে মেন্ডিসের ক্যাচ বানিয়ে স্বাগতিকদের প্রথম সাফল্য এনে দেন তিনি। পরের আঘাতটিও পেরেরারই দেওয়া। দারুণ খেলতে থাকা ওয়ার্নারের (৬৮) স্ট্যাম্প ভেঙে দেন এই ডানহাতি অফস্পিনার। ইনিংসের বাকিটা হেরাথের কাব্য-গাঁথা।

অ্যাডাম ভোজেসকে (১) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে শুরু, পরে একে একে স্টিভেন স্মিথ (৮), মিচেল মার্শ (৯), পিটার নেভিলকে (২) ফিরিয়ে ধ্বংসযজ্ঞের পথে এগোতে থাকেন হেরাথ।

হ্যাজেলউডকে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলে অতিথিদের শেষটাও টেনেছেন তিনিই। সেখানে মিচেল স্টার্কের ২৩ রানের ইনিংসটি মাঝে কেবল দলীয় সংগ্রহটাকে দেড়শর ওপারেই নিতে সাহায্য করেছে। তবে সেটা লজ্জা এড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না।

এর আগে রঙ্গনা হেরাথের মায়াবী স্পিন-জাদুতে নিজেদের প্রথম ইনিংসেও বড় লিড নিতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। হেরাথের তোপের মুখে পড়ে মাত্র ২৪ রানের লিড পায় তারা। শ্রীলঙ্কার করা ৩৫৫ রানের জবাবে শেষ দিকে পথ হারিয়ে প্রথম ইনিংসে ৩৭৯ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া।

তাতে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে সফরকারীদের পৌনে চারশো পেরোনো ইনিংসের ভিত গড়ে দেন শন মার্শ ও স্টিভেন স্মিথ। মার্শ ১৩০ ও স্মিথ করেন ১১৯ রান। শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রথম ইনিংসেও ৮১ রানে ৬ উইকেট নিয়ে নায়ক ছিলেন হেরাথই।

আর নিজেদের প্রথম ইনিংসে দিনেশ চান্ডিমাল ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৩৫৫ রানের লড়াকু সংগ্রহ গড়েছিল শ্রীলঙ্কা। চান্ডিমাল ১৩২ ও ধনঞ্জয় ১২৯ রানের ইনিংস খেলেন। দুজনে ২১১ রানের অনবদ্য জুটি গড়েন।

প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সফলতম বোলার ছিলেন মিচেল স্টার্ক। ৬৩ রানে পাওয়া তার ৫ উইকেট অজি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ভুলে যাওয়া পারফরমেন্স হয়েই থাকল।

উল্লেখ্য, তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে ১০৬ রানে হারার পর দ্বিতীয়টিতেও ২২৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরে আগেই সিরিজ হাতছাড়া করে অস্ট্রেলিয়া। কলম্বো টেস্টের বড় পরাজয় তাদের এনে দিল নিজেদের ইতিহাসে পঞ্চমবারের মতো হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পড়ার স্মৃতি।

যার কারণে আইসিসি টেস্ট টেবিলের শীর্ষস্থানটিই হাতছাড়া হতে পারে অস্ট্রেলিয়া দলের। আর প্রথমবারের মত অজিদের হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পাওয়া শ্রীলঙ্কা এক লাফে উঠে যেতে পারে টেবিলের অনেকটা ওপরে।
১৮ আগস্ট,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে