স্পোর্টস ডেস্ক : সেই মাপা পাস। দুরন্ত রিসিভ। অনবদ্য প্লেসমেন্ট। ঠিক যেন বিশ্বকাপ ফাইনালের রিপ্লে। তবে মারিও গটজে নয়। বুধবার গোলটা এল লিওনেল মেসির পা থেকে!
সে দিন গোল খাওয়ার দলে ছিলেন। এ দিন মেক্সিকোকে গোলটা দিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলিতে আর্জেন্তিনার সম্মান বাঁচালেন। কিন্তু যন্ত্রণা তাতে কমল কোথায়? বরং ম্যাচ শেষে যিনি সাংবাদিকদের সামনে এলেন তাঁকে কয়েকটা শব্দে তুলে ধরা যায়।
যন্ত্রণাবিদ্ধ লিওনেল মেসি।
ক্রুদ্ধ লিওনেল মেসি।
যে মেসি শপথ করছেন, যত দিন তাকে দেশের প্রয়োজন আছে, তিনি মাঠে নামতে প্রস্তুত। যে মেসি বলে দিচ্ছেন, ‘‘কখনও বলিনি আর্জেন্তিনার জার্সিতে আর খেলব না। কোচ চাইলে দেশের জার্সিতে আজীবন খেলে যেতে চাই।’’
কোপা আমেরিকা ফাইনালে হারের পর সেই যে তিনি মুখ বন্ধ করেছিলেন, নীরবতা ভাঙলেন ৭০ দিন পরে। মাঝে মাঝে ফেসবুকে দু’একটা টুকটাক পোস্ট ছাড়া ফুটবলের রাজপুত্র কী ভাবছেন, তা জানার কোনও উপায় ছিল না।
বিশ্বকাপের পর কোপা আমেরিকা ফাইনালেও হারের ধাক্কায় বেসামাল হয়ে গিয়েছিল মেসির আর্জেন্তিনা। খোদ আর্জেন্তিনীয় মহাতারকাও সমালোচনার তোড়ে এতটাই ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন যে জনসমক্ষে তার পর আর কথা বলেননি। এ দিন মেসির যন্ত্রণাটা তাই স্পষ্ট ফুটে উঠছিল তাঁর কথায়, ‘‘আর্জেন্তিনার প্রচুর সমালোচনা শুনেছি। সবাই কিন্তু এটা ভুলে যায়, আমরা এক বছরের মধ্যে দুটো ফাইনাল খেলেছি। যেটা যথেষ্ট কৃতিত্বের এবং কাজটা মোটেও সোজা ছিল না।’’
বিশ্বকাপের হারটা তবু কোনও ভাবে সামলানো গিয়েছিল। কিন্তু এর পর কোপা আমেরিকার ব্যর্থতায় আরও মুষড়ে পড়েছিল টিম। কেন, সেটাও জানিয়ে দেন এলএম টেন। টেক্সাসে মেক্সিকো ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের সামনে এসে বলেন, ‘‘বিশ্বকাপের পর আমাদের সময়টা ভাল যায়নি। তবে কোপা আমেরিকায় আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে কাপটা আমরাই জিতছি। প্রথম দিন থেকেই এই বিশ্বাসটা ছিল। ফাইনালে নামার সময়ও মনে হয়েছিল, চ্যাম্পিয়ন হয়েই মাঠ ছাড়তে পারব। তাই কোপা ফাইনালে হারটা বড় ধাক্কা ছিল সবার জন্য।’’
তবে তার থেকেও দেশের জার্সিতে আর খেলবেন না মেসি— বলে যা রটেছিল সেটা আরও বেশি ধাক্কা দিয়েছিল তাঁকে। এ দিন তারই ইঙ্গিত পাওয়া গেল মেসির কথায়। ‘‘দলের জন্য লড়তে আমি সব সময় প্রস্তুত। সেই হারের পর এত দিন শুধু দুঃখ, হতাশা ছাড়া আর কিছু ছিল না আমাদের জন্য। কিন্তু সেটা কাটিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সামনে আরও সুযোগ আসবে। আমরা গোল করছি, এগিয়ে যাচ্ছি। এই লড়াই চালিয়ে যাওয়াটাই সব।’’
বুধবার মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ০-২ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল দল। শেষ পর্যন্ত আগেরো আর মেসির গোলে ম্যাচ ২-২ ড্র হয়। টিমকে বাঁচানোর পাশাপাশি আর্জেন্তিনার সর্বোচ্চ গোলদাতা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার ৫৬ গোলের কৃতিত্ব স্পর্শ করার দিকে আরও এগোলেন আর্জেন্তিনার ক্যাপ্টেন। এ দিনের গোলের পর মেসির জাতীয় দলের জার্সিতে গোলের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৯। তবে ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, ক্যাপ্টেন মেসির মুখে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে দলের পরের টার্গেট। বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং পর্ব। অক্টোবরে আর্জেন্তিনার যে লড়াই শুরু হচ্ছে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে। ‘‘রেকর্ডটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশের হয়ে এ রকম নজির গড়ার ব্যাপারটা ভাবতে ভাল লাগলেও এখন আমাদের সামনে এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য আছে। সেটা বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার। যেখানে লড়াইটা কিন্তু ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠবে,’’ বলেছেন এলএম টেন।
যন্ত্রণাকাতর কিন্তু প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মেসি যেন একটা কথাই মনে করিয়ে দিতে চান। একবার হলেও দেশের জার্সিতে একটা ট্রফি তুলতে কতটা মরিয়া তিনি।
১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি