শুক্রবার, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৫:৪২:৩৫

‘আমি চেয়েছিলাম আত্মহত্যা করতে’

‘আমি চেয়েছিলাম আত্মহত্যা করতে’

স্পোর্টস ডেস্ক : অতিরিক্ত সময়ে তার গোল। এমনটা সাইড বেঞ্চে বসে থাকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোও আশা করেননি হয়ত! বদলী এদার ওই গোলেই জুলাইয়ে পর্তুগালকে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন করেন। স্বাগতিক ফ্রান্সকে হারিয়ে পর্তুগালের জাতীয় বীর হন ফরোয়ার্ড এদার। ২৯তম ম্যাচে গিয়ে প্রথম বলার মতো কোনো গোল করেছেন। তাতেই পর্তুগাল সপ্তম স্বর্গে। অথচ এই এদারই জীবনের এমন অন্ধকার দিক দেখেছেন যে আত্মহত্যা করতে বসেছিলেন!

এখন ২৮ বছর। কিন্তু তাকে ইউরোপের খুব প্রতিষ্ঠিত ফুটবলার বলা যায় না। ২০১৫-১৬ মৌসুমে ইংলিশ দল সোয়ানসি সিটিতে ছিলেন ৫ মিলিয়ন পাউন্ডে। কিন্তু ১৩ ম্যাচে একবারও টার্গেটে শট নিতে পারেননি। কোচ ফার্নান্দো সান্তোস ইউরোতেও তাকে বদলী হিসেবে খেলিয়ে গেছেন। কোচকে ফাইনালে বলে গিয়েছিলেন, গোল করবেন। রোনালদোও নাকি বলেছিলেন এদার গোল করবে।

সেই রাতের কথা মনে পড়ে। বার্তার পর বার্তা। বাবা ফোনে কেঁদে ফেলেছিলেন। বাবা ফিলোমেনো আন্তোনিও লোপজে ২০০৩ সাল থেকে ইংল্যান্ডের জেলে। এদারের সৎ মা দমিঙ্গাস অলিভাইসকে খুন করার দায়ে আজীবনের সাজা খাটছেন। এই প্রসঙ্গে এসে এদার নিশ্চুপ হয়ে যান। পানি পান করেন। এখানেই এদার সুখী ফুটবল থেকে গভীর বিষণ্ন একজন।

১৯৮৭ সালের ডিসেম্বরে গিনি-বিসাউর পর্তুগিজ এক কলোনিতে জন্ম এদারের। ৩ বছর বয়সে পরিবারের সাথে পর্তুগালে স্থায়ী হন। পরিবার সন্তানের খরচ চালাতে পারে না। ৮ বছর বয়সে এদারের জায়গা হয় একটি এতিমখানায়। ‌‌‘মিথ্যে বলবো না। কঠিন জীবন ছিল।" খালি পায়ে ফুটবল খেলা শুরু। পরিবারের কেউ খোঁজ নেয় না। "বাবা-মাকে ছাড়া এতিমখানায় বড় হওয়া খুব কঠিন। আমার সেখানকার অনেক বন্ধুকে দেখি। ওরা ভালো নেই।’

বড় হলে মায়ের সাথে যোগাযোগ বাড়ল। তবে নিয়মিত না। তিনি ইংল্যান্ড চলে গেলেন। বাবাও সেখানে। ২০০৩ সালে পার্টনার অলিভাইসকে খুন করে নদীতে ফেলে দেওয়ার অপরাধ প্রমাণিত বাবার বিরুদ্ধে। বাবা স্বীকার করেননি। তিনি ইংল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে থাকছিলেন। তার আগে পর্তুগাল থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছিল তিনটি স্বশস্ত্র ডাকাতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে। ২২ বছর বয়স হলে বাবাকে জেলে দেখতে যাওয়া শুরু করেন এদার।

১৮ বছর বয়সে পর্তুগিজ একটি ক্লাবে মাসিক ৩৩০ পাউন্ডে খেলা শুরু এদারের। একটু একটু করে উন্নতি। আকাদামিকা হয়ে ব্রাহায় পরিচিতি পান। ২০১২ সালে জাতীয় দলে ঢুকে পড়েন। কিন্তু ১৮ ম্যাচ লাগে প্রথম গোল পেতে। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে বদলী হিসেবে তিনটি ম্যাচই খেলেন এদার। কিন্তু প্রথম রাউন্ডে বিদায় নেওয়া পর্তুগাল সমালোচনার মুখে পড়ে। সোশাল মিডিয়ায় হাসাহাসি হয় এদারকে নিয়ে। এদার নিজেকে নিয়ে নিজেই সন্দিহান হয়ে পড়েন। আনন্দময়, হাসিখুশি এদারের ভাষায়, ‘ওটা ভয়ংকর খারাপ সময় ছিল। আমি পালাতে চাইতাম। আত্মহত্যার ভূত চাপে মাথায়।’

একদিন তার এক নারী ভক্ত ফেসবুকে যোগাযোগ করে তাদের মনোবিদ লাগবে কি না জানতে চেয়ে। তার সহায়তায় এদার কাটিয়ে ওঠেন মানসিক বাধা। সোয়ানসি হয়ে এখন ফ্রান্সের লিলেতে। ইউরোর পর জীবন এখন আলোকিত। তার কাছে ক্ষমা চেয়ে পর্তুগিজ একটি ওয়বেসাইটও হয়েছে। আঁধার পেরিয়ে জীবনে ফেরা এদারের আরো অনেক কিছু দেবার বাকি।-কালের কন্ঠ
২ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এমকেএই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে