আরিফুর রাজু: দুইটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম বাংলাদেশে সফরে আসার কথা থাকলেও জঙ্গি হামলার ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে গত বৃহস্পতিবার দেশটির ক্রিকেট বোর্ড সফর স্থগিতের ঘোষনা দেয়। আর এতে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সম্মান যে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা বিসিবির পক্ষ থেকে মুখ ফুটে জোরালো কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না হলেও সাধারণ মানুষ তা সহজে বুঝতে সক্ষম হয়েছে আমাদের ইমেজের কতক্ষানি ক্ষতি হয়েছে। তবে অবশ্য বিসিবির সভাপতি পাপন জানিয়েছেন অজিদের না আসার সিদ্ধান্তটি দেশের ১৬ কোটি মানুষের ন্যায় তারাও অনেকখানি কষ্ট পেয়েছেন। পুণরায় আসিসির সাথে যোগাযোগ করবেন বলেও জানান বিসিবির এই কর্মকর্তা।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম বাংলাদেশ সফরে আসবে এ নিয়ে বাংলাদেশের বাতাসে বয়েছিলো খুশির বন্যা। অজিদের বাংলাদেশ সফর নিয়ে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের মত মাঠের বাহিরে অবস্থানকারী ক্রিকেটমোদীরা কল্পনায় কত শত চক কষেছেন তাদের ঘায়েলে তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু অবশেষে হলো কি, ক্রিড়াপ্রেমিদের সব জল্পনা-কল্পনার জ্বলমলে আকাশটায় কালো মেঘের আভাস দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড জানান দিল বাংলাদেশর মাটিতে তাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা ঘটতে পারে। তাই তারা আসবেন না।
বাংলাদেশে ক্রিকেট মানেই চায়ের কাপে ঝড়। খেলা চলাকলীন সময়ে গলির বৃদ্ধ হাসেম-করিম চাচার দোকান থেকে শুরু করে টিএসসিতে বড় পর্দায় চলে খেলা দেখার উৎসব। যায়গায় যায়গায় বিলবোর্ড আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলে প্রিয় বাংলাদেশকে সমর্থন জানিয়ে উৎসাহের বন্যা। এক কথায় বলতে গেলে ক্রিকেট বাংলাদেশি মানুষদের অন্তরের সাথে মিশে গেছে। অথচ ২৭ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে না আসার বিষয়টি এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমিদের মনে বিষের তীর হয়ে বিদ্ধ হয়েছে। বিসিবি থেকে শুরু করে এ দেশের সাধারণ মানুষ এমনকি খেটে খাওয়া দিন মজুর পর্যন্ত ক্ষিপ্ত টিম অস্ট্রেলিয়ার এদেশে সফর স্থগিতের বিষয়টি নিয়ে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যের দিকে টিএসসিতে আড্ডারত ছিলেন মাহাদি, জোনায়েদ এবং রাজু। তিন জনই একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের আড্ডার বিষয় ছিল অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের অনিশ্চিত সিরিজটি নিয়ে। কথার মাঝে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছেন মাহাদি। তার কথা একটাই জঙ্গি-আইএস কিছুই না এটি অস্ট্রেলিয়ার ন্যাকামো। তারা আমাদের টাইগারদের সম্প্রতি পারফরম্যানের কারণে ভয় পাচ্ছে। মাহাদির কথা শেষ না হতেই কথা কেড়ে নিয়ে রাজু জানালেন, আমরা যদি অস্ট্রেলিয়ার গত কয়েকটা ম্যাচের পারফরম্যান্স দেখি। তাহলে দেখা যাবে ওদের অবস্থা খুবই করুণ, অ্যাশেজে নিজেদের ব্যার্থতার দায়ে অধিনায়ক ক্লা্র্কের বিদায়। এছাড়াও অকেবারে নতুন একটা দল নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল নতুন অধিনায়ক স্মিথের। আরে জঙ্গি হামলা বলে কিছুই নেই মূলত অস্ট্রেলিয়া টিম আসবেনা যদি তাদের হাত থেকে সিরিজটা টপকে যায়। হেসে হেসে বলতে লাগলেন ‘মামা অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশরে ডরাইছে।’ তার কথায় সম্মতি দিয়ে জোনায়েদ উচ্চস্বরে বলে উঠলেন হ মামা ঠিক কইছস।
গণমাধ্যম কর্মী সীমান্ত প্রধানের চোখে অস্ট্রেলিয়া টিম বাংলাদেশ সফরে যে বিষয়টি উল্লেখ্য করেছে সেটি হলো জঙ্গি ভয়। মূলত এর মাধ্যমে বাংলাদেশের উপর জঙ্গি তকমাটা চাপিয়ে দিয়েছেন। এখন থেকে ভবিষ্যতে অন্য দল গুলো বাংলাদেশ সফরে আসতে বিষয়টি বিশেষ ভাবে বিবেচনা করবে।
মজার ব্যাপার হলো নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে সফর স্থগিত করার একদিন পরই জঙ্গি হামলায় কেঁপে উঠলো অস্ট্রেলিয়া। সিডনির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে পুলিশ সদর দপ্তরে গতকাল দুপুরে মর্মমান্তিক এই হামলা চালায় দেশটির অভ্যন্তরীণ জঙ্গিরা। এর এতে বিশ্ব ক্রিকেটে বরংবার প্রশ্ন উঠতে শরু করেছে এখন অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট তো দূরের কথা দেশটিতে সাধারণ জনগন কতটা নিরাপদ? পশ্চিমা মিডিয়া বাংলাদেশে এক জন বিদেশী নাগরিক খুনের বিষয়টি যে হারে প্রচার করেছে ঠিক তার তিন ভাগের এক ভাগও মিঠিয়ায় প্রচার করছেন না বিষয়টি নিয়ে। তাদের এমন অদ্ভুত আচরণকে সন্দেহের দৃষ্টিতে না দেখার উপায় নেই। কয়েক দিন পরই নিউজল্যান্ড ক্রিকেট টিম অস্ট্রেলিয়ার সফরে যাবে। দেখার বিষয নিউজল্যান্ড ক্রিকেট টিম স্বাগতিকদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেয়।
আমরা যদি অস্ট্রেলিয়ার পরাষ্ট্রমন্ত্রি জুলি বিশপের কথা ধরে নিয়ে তাহলে নিশ্চিত যে কেউই অবাক হব। তিনি সদ্য সমাপ্ত হওয়া জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে জানান, আইএস এবং বিশ্বের বিভিন্ন জঙ্গি জোষ্ঠির হয়ে তার দেশের প্রায় ১২০ জন নাগরিক কাজ করে যাচ্ছেন। আর সেই দিক বিবেচনা করলে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন নাগরিক আইএসে যোগ দেয়ার খবর পাওয়া যায়নি। যে কয়েকজন ধরা পড়েছে তারা বাংলাদেশি বংশদ্ভুত বিট্রিশ নাগরিক।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটর এমন অবস্থান নয় যে তারা অন্য ক্রিকেট দেশ গুলোর মুখের দিকে চেয়ে থাকবে। বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গন যোগ্যতার বলে তারা দেখিয়ে দিয়েছে তারা এখন আর করুণার পাত্র নয়। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটিতে ৭৫ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হলেও কোন প্রকার জঙ্গি হামলার ঘটনা দেখেনি বিশ্ববাসী। তার পর কেন ঠুনকো একটি অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম বাংলাদেশ সফরে আসবে না? আমাদের অবস্থান আফগানিস্তান কিংবা পাকিস্তানের মত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। তার পরও তাদের কাতারে ঠেলে নতুন তকমা লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে আমাদের উপর। এটি কি নিছক কোন ঘটনা নাকি গভীর ষড়যন্ত্র? তবে কি বিসিবির সভাপতি পাপনের ভাষায় অন্য কোন কোন কারণ। সত্যি প্রশ্নের আড়ালে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এদেশের কাবাড়ি জাতীয় খেলা হলেও ক্রিকেটটাই মূলত মিশে গেছে দেশের ৯০ ভাগ মানুষের অন্তরে। বলা যায় বর্তমান সময়ে ক্রিকেটের মাধ্যমে বিশ্ব দরবারে আমরা নিজেদের মাথা উঁচু করে দেশটাকে উপস্থাপন করতে পারছি। অস্ট্রেলিয়া টিমকে বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে বিসিবি পুণরায় আইসিসির শরণাপন্ন হবেন, তাদের সাথে অবারো যোগাযোগ করবেন। বিসিবি বলেছিলেন, টিম অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে না আসার কারণ হিসেবে জানিয়েছেন জঙ্গি হামলা হতে পারে। আমরা তাদেরকে চার স্তরের নিরাপত্তাও দিতে প্রস্তত ছিলাম। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৩ তম। আর তারা কিনা এটি নিযে সফর বাতিল করবে।
টিম অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে না আসার ঠুনকো জঙ্গি ইস্যুটি কি বিসিবির ভাষায় অন্য কোন কারণ, নাকি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মাহাদির মতে, ‘ মামা অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশরে ডরাইছে।’
৩ অক্টোবর ২০১৫,এমটি নিউজ২৪/আরিফুর/রাজু