শুক্রবার, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৬:০১:৫৪

ওই সেঞ্চুরিটার কারণেই মানুষ আমাকে এখনো মনে রেখেছে: আশরাফুল

ওই সেঞ্চুরিটার কারণেই মানুষ আমাকে এখনো মনে রেখেছে: আশরাফুল

স্পোর্টস ডেস্ক : বলা হয়, বয়স, স্থান কিংবা কাল; কোনটাই মানে না ইতিহাস । সেই প্রমাণই দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। গোঁফের রেখাটা তখনও দৃশ্যমান। ২০০১ সালে ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে অভিষেক টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেছিলেন ১১৪ রানের ইনিংস। জিতেছিলেন, সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানের খেতাব।

দিনটা ঠিক কাঁটায় কাঁটায় আট সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ, আজকের দিনই। ঘুরেফিরে আবারো সামনে কলম্বোর সিনহালিস স্পোর্টিং ক্লাব গ্রাউন্ডের সেই ঐতিহাসিক ইনিংসটি। এ স্মৃতি নিয়ে আশরাফুল বলেছেন, ওই সেঞ্চুরিটির কারণেই মানুষ আমাকে এখনো মনে রেখেছে, তাই তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা।

১৩৫ রান ও এক ইনিংস ব্যবধানে হারলেও, আশরাফুলের কারণেই স্মৃতির পাতায় ঝলমলে সেই টেস্ট। আশরাফুলের ভাষায়, ‘ওই ইনিংসটি যেমন আমার জন্য ইতিহাস, পুরো বাংলাদেশের জন্যও তাই।’

ক্যালেন্ডারের পাতা বলছে, ১৫টি বছর কেটে গেছে। দীর্ঘ এই সময়ে আশরাফুলের ক্যারিয়ারে ভাঙ্গন ধরেছে, ভিত গড়েছে, আবার তা অন্ধকারে মিলিয়েও গেছে। সাবেক এই অধিনায়কের সর্বশেষ খবরটি সবারই জানা। ক্রিকেটের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এখন ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরার পথে তিনি। এর মাঝেই আলোচনায় ২০০১ সালের কলোম্বোর সেই ইনিংসটি।

অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৬ রান করে আউট হয়েছিলেন। তারপরও দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ছিলো সেটি। পরের ইনিংসেই ১১৪ রান! আশরাফুলের কতটুকু মনে আছে সেদিনের কথা? এক একান্ত আলাপকালে এক কথায় উত্তর দিলেন, ‘একটুও ভুলিনি, পুরো সময়টা মনে আছে আমার।’

বলছেন সময়টাও বড্ড দ্রুত গেছে, ‘দেখতে দেখতে ১৫ বছর হয়ে গেলো। খুব ভাগ্যবান মনে হয় আমার কাছে। ওই সেঞ্চুরির কারণেই মানুষ এখনো মনে রেখেছে আমাকে। প্রথম ইনিংসে সাত নম্বরে নেমেছিলাম। পরের ইনিংসে, ছয় নম্বরে। অধিনায়ক ছিলেন দূর্জয় ভাই। তার জায়গাতেই তিনি আমাকে নামিয়েছিলেন। বুলবুল ভাই আমার রোল মডেল, সেঞ্চুরির ইনিংসে তাকে উইকেটে পেয়েছিলাম। তাছাড়া সবার ছোট ছিলাম, অনেক সমর্থন পেয়েছি।’

মজার ব্যাপার হলো, অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি হওয়াটা যেমন ইতিহাস ছিলো; সেঞ্চুরিটি যে হবে সেটা নিয়ে খানিকটা আত্মবিশ্বাসও ছিলো আশরাফুলের! আশরাফুলের ভাষায়, ‘সবার সমর্থন ছিলো।

আগের দিন চার রানে অপরাজিত ছিলাম। অনেক রোমাঞ্চিত ছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা, আমি জানতাম কিভাবে সেঞ্চুরি করতে হয়। কারণ, টেস্টে সুযোগ পাওয়ার আগে আমি অনূর্ধ্ব-১৭ বলেন, প্রথম শ্রেণির ম্যাচ বলেন;  সেঞ্চুরি করেই এসেছিলাম। তো, সবমিলিয়ে খুব একটা সমস্যা হয়নি।’
 
তখনকার লঙ্কান দলে ছিলো তাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা বোলিং লাইনআপ। মুত্তিয়া মুরলিধরণ, চামিন্দা ভাস, পুসপ কুমারাদের মতো বোলাররা ছিলেন ব্যাটসম্যানদের জন্য সাক্ষাৎ যম। আশরাফুল তো মুরলিধরণের চেহারা দেখেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন।

জানালেন মজার সেই অভিজ্ঞতা, ‘আমি ভয়ে মুরলিধরণের মুখের দিকে তাকাতাম না,  হাতের দিকে তাকাতাম। তাছাড়া আমার প্লাস পয়েন্ট ছিলো। আমি যেখানে বড় হয়েছি সেই অঙ্কুর ক্রিকেটার্সে অনেক ধরণের বোলার ছিলো। সাগর নামে একটা ছেলে ছিলো, সে সাকলাইন মুশতাকের কাছে দুসরা শিখে বল করতো। এসব কারণেই সামলাতে খুব একটা সমস্যা হয়নি আমার।’

আরো একটা কীর্তি গড়ে ফেলার পথে ছিলেন আশরাফুল। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ডটিও হতে পারতো তারই। কাকতালীয়ভাবে সেবারও প্রতিপক্ষ ছিলো শ্রীলঙ্কা। আশরাফুলের দাবি, ১৯০ রানে আউট হওয়ার আক্ষেপ এখনো তাড়িয়ে ফেরে তাকে,  ‘১৮৯ রান করার পর তো নটআউট ছিলাম। সারারাত ঘুমই হয়নি।

শুধু চিন্তা হতো, কখন ২০০ হবে। একটা চাপ ছিলো যে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০০ রান করবো এক ইনিংসে। কিন্তু সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছিলো ওইদিনই ইনিংসটি শেষ না করা। পরের দিন পর্যন্ত টানা উচিত হয়নি। কারণ আমি আগের দিন অনেক খারাপ বলে পেয়েছিলাম, কিন্তু মারিনি। পরের দিন যখন রিভার্স সুইং ব্যাটে লাগাতে পারিনি, তখনই মনে হয়েছিলো যে আর হবে না। খারাপ শটটা খেলার পরই মনে হয়েছিলো ব্যাপারটা।’
 
খেলেছেন সবমিলিয়ে ৬১টি টেস্ট। ২৪.০০ গড়ে মোট রান ৫৯৪০। সেঞ্চুরি ছয়টি, হাফ সেঞ্চুরি আটটি। পরিসংখ্যানটি আরো বাড়তে পারতো। কিন্তু বিপিএলে ফিক্সিংয়ের  অভিযোগে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা, সেই সুযোগটি আর করে দেয়নি আশরাফুলকে।

এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘যখন নিষেধাজ্ঞায় পড়লাম, তখন আমি আন্তর্জাতিক ম্যাচে আবারো ভালো করা শুরু করছিলাম। হয়তো আরো ভালো হতে পারতো। কিন্তু কি করা যাবে। এখন সামনের পথে চোখ আমার। আবারো ফিরে আসতে চাই। সবকিছু পুষিয়ে দিতে চাই। দোয়া চাই।’

আবারো একুট পেছনে ফিরে গেলেন বাংলাদেশ দলের এক সময়ের আশার ফুল। অভিষেক টেস্ট নিয়ে আরো একটি বিষয় জানালেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করার জন্যই শুধু নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন না তিনি।

আরো একটি কারণ হলো, অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলার সৌভাগ্য হয়েছে তার, ‘আমি এটা গর্ব করে বলতে পারি, আমি আরো অনেক কারণেই ভাগ্যবান। আমিই একমাত্র ক্রিকেটার, যে কিনা এতোগুলো সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে খেলেছি।-প্রিয়
৯ আগস্ট ২০১৬/এইচআর২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে