বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:১১:৫৬

মেসির ফায়দা তুলে গোলের মুকুট এখন রোনালদোর

মেসির ফায়দা তুলে গোলের মুকুট এখন রোনালদোর

স্পোর্টস ডেস্ক: তিনি নাকি পাস দিতে চান না সতীর্থদের। তাঁর থেকে কাউকে বেশি ভাল বললে সেই কোচের চাকরি যাওয়া অনিবার্য। তাঁর পছন্দের ফুটবলারকে প্রথম দলে খেলাতেই হবে।

তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে দাঁড়িয়ে গর্ব সহকারে বলবেন, ‘‘হ্যাঁ আমার মতো আরও দশটা ফুটবলার থাকলে দল নিশ্চয়ই জিতত।’’হ্যাঁ, তিনি— ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো হওয়া সত্যিই খুব ঝামেলার!

তাঁর হাজার দোষ আছে। তাঁকে বারবার গ্যালারি থেকে শুনতে হবে তুমি মেসি নও। তাঁর মাঠের পারফরম্যান্সের থেকেও সবাই বান্ধবীর তালিকা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাবে। কিন্তু এই ঔদ্ধত্যের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে সর্বোচ্চ মানের এক গোলস্কোরারও। যে মাঠে নামা মানে এখন দাঁড়িয়ে গিয়েছে গোল হবেই।

পঁচিশ গজ থেকে হোক বা পনেরো। ফ্রি-কিক থেকে হোক বা দূরপাল্লার শট থেকে। গোলস্কোরারের তালিকায় রোনাল্ডো-র নাম থাকাটা সলমনের খানের ছবি ২০০ কোটি কামানোর মতোই। দেখে দেখে মানুষদের অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে এক প্রকার। এই মুহূর্তে অন্তত কোনও সন্দেহ ছাড়াই বলা যায়— গোলের রাজা রোনাল্ডোই।
 
তিনি খুব অলস প্রকৃতির ফুটবলার। খুব বেশি নড়াচড়া করেন না। পেনাল্টি বক্সের মধ্যে ঠায় থাকেন। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে রোনাল্ডো প্লে-মেকার ছিলেন। গোল যেমন করতেন, তেমন করাতেন। সঙ্গে সেই সব সূক্ষ্ম স্কিল। কিন্তু রিয়াল মাদ্রিদের রোনাল্ডো পুরোপুরি মনোযোগ দেন গোল করায়। গ্যালাকটিকো রোনাল্ডোর নীতিই হচ্ছে, সতীর্থকে পরে সাহায্য করব, আগে নিজে গোলটা তো করি।

সারা বিশ্বের কাছে রোনাল্ডো হিংসুটে। কিন্তু ময়দানের ‘সবুজ তোতা’ জোসে রামিরেজ ব্যারেটোর মতে গোলস্কোরারের ‘হিংসুটে’ হওয়াটাই স্বাভাবিক। ‘‘গোলস্কোরার মানেই সুযোগসন্ধানী। আর রোনাল্ডোর মুভমেন্ট এত নিঁখুত বলেই ও ঝুড়ি ঝুড়ি গোল পায়। অসাধারণ অনুমানক্ষমতা বরং তার গুণ।’’

আটলেটিকো দে কলকাতার সহকারি কোচ থাকার সময় মাদ্রিদে প্রাক্ মরসুমে গিয়েছিলেন ব্যারেটো। সান্তিয়াগো বের্নাবাওতে বসেই মাদ্রিদ ডার্বি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। রিয়াল গ্যালারি তখন ‘রোনাল্ডো রোনাল্ডো’ চিৎকারে ফেটে পড়েছে। কিন্তু স্বয়ং সিআর সেভেন কোনও দিকে কান না দিয়ে মাঠে প্রবেশ করলেন। গ্যালারির দিকে তাকিয়ে একবার হাতও নাড়ালেন না। গ্যালারি থেকে সিআর দর্শনের পর ব্যারেটোর মনে হয়েছিল, প্রতিটা ম্যাচেই পর্তুগিজ মহাতারকা নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে চান। তিনি যে সেরা সেটা মাঠে নামার আগে মাঠের বাইরেই ফেলে আসেন!

ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য আবার মনে করছেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মেসি প্লে-মেকারের ভূমিকা নেওয়ায় রোনাল্ডোর সুবিধে হয়েছে। তাঁর মতে মেসি এখন স্কিমার বেশি। অনেক নীচে নেমে খেলেন। রোনাল্ডো কিন্তু গোলের আশেপাশেই থাকেন। তাই গত কয়েক বছরে গোলও বেশি করেছেন।

সত্যিই তো তাই। এক সময় পাল্লা দিয়ে রোনাল্ডো এবং মেসি গোল করতেন। মেসি হ্যাটট্রিক করলে জবাবে আসত রোনাল্ডোর হ্যাটট্রিকও। মেসি এখন প্লে-মেকার বেশি। গোল করার থেকেও বেশি গোল সাজান। আর সেই ফায়দাটাই তুলেছেন রোনাল্ডো। কিন্তু সেটাও তো মুখের কথা নয়। শেষ তিন মরসুমে শুধু মেসির থেকে বেশি গোলই করেননি রোনাল্ডো। প্রায় অধিকাংশ রেকর্ডের পাশে নিজের নাম বসিয়েছেন।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল কার? রোনাল্ডো। রিয়ালের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল কার? রোনাল্ডো। লা লিগার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক কার? রোনাল্ডো। ইউরোর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গোল কার? রোনাল্ডো। এক মরসুমে সবচেয়ে বেশি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোল কার? রোনাল্ডো। শেষ পাঁচ মরসুমে পঞ্চাশের বেশি গোল কার? রোনাল্ডো।

আসলে সবাই রোনাল্ডোর বান্ধবীর খোঁজে বেশি ব্যস্ত। কেউ বলেন না রোনাল্ডো আজও তাঁর কোচকে প্রতিটা ম্যাচের আগে জিজ্ঞেস করেন, স্যর আমি আর কী ভাবে উন্নতি করতে পারি? সবাই বেরিয়ে গেলেও তিনি ট্রেনিং করে যাবেন। বান্ধবীকে বসিয়ে রেখেও আইসবাথ নেবেন।

রোনাল্ডো লাতিন আমেরিকান নন। তাই শিল্পী কথাটা তাঁর পাশে কোনও দিন বসবে না। কিন্তু এটা তো বলাই যায়, বিশ্ব ফুটবলে এখন গোল মানেই সিআর সেভেন। যার উল্টো করে বলা যায়, সিআর সেভেন মানেই গোল!-আনন্দবাজার
২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে