আরিফুর রাজু: আসি আসি করেও অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট টিম বাংলাদেশে আসলোনা। কারণ, জঙ্গি হামলার ঠুনকো অজুহাত। অস্ট্রেলিয়া বোর্ডের এমন উজবুক সিদ্ধান্তে শুধু যে বিসিবি ও জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের স্বপ্ন ভেঙেছে তা কিন্তু নয়। বরং স্বপ্ন ভেঙেছে ১৬ কোটি বাঙালির। যারা ক্রিকেটকে ভালোবেসে মনে প্রাণে লালন করে নিজের ভেতর। রক্তের সাথে মিশে যাওয়া ক্রিকেটের এই দুর্দিনে কতখানি কষ্ট পেয়েছে এ জাতি তা হয়তো বিন্দু মাত্র আঁচ করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ান বোর্ড।
দুইটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম গত মাসের ২৭ তারিখে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল। কিন্তু তাদের নিজস্ব গোয়েন্দা এজেন্সির তথ্যের ওপর ভিত্তি করে অনেক জল গোলা করে অবশেষে জানান দিল এই মুহূর্তে তাদের টিমকে বাংলাদেশ সফরে পাঠাবে না। নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে সফর স্থগিত করার ঠিক একদিন পরই জঙ্গি হামলায় কেঁপে উঠলো অস্ট্রেলিয়া। সিডনির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে পুলিশ সদর দপ্তরে পরের দিন দুপুরে মর্মমান্তিক হামলার চালায় দেশটির অভ্যন্তরীণ জঙ্গিগোষ্ঠি।
অথচ বাংলাদেশের রাজধানীতে একজন ইতালিয়ান নাগরিকের খুন হওয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস গুলো একযোগে যে হারে নাক ছিটকিয়েছে তা অবাক করেছে বাংলাদেশের ষোল কোটি জনগনকে। অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশ সদর দপ্তরে জঙ্গি হামলার পরও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোকে একেবারে নীরব থাকতে দেখা গেছে। অস্ট্রেলিয়া তথা পশ্চিমা বিশ্বের এই আচরণকে সন্দেহের চোখে না দেখে কোন উপায় নেই। দেশটিতে জঙ্গি হামলার পর জনমতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় বিদেশি খেলোয়াড় তো দূরের কথা নিজ দেশের খেলোয়াড়রা কতটুকু নিরাপদ?
পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী চলতি মাসে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল অস্ট্রেলিয়া সফর যাওয়ার কথা রয়েছে। প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। যেখানে জঙ্গি হামলা ঘটতে পারে এমন সংবাদের ভিত্তিতে অস্ট্রিলিয়া ক্রিকেট বোর্ড তাদের দল পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। সেখানে কিভাবে জঙ্গি হামলা ঘটার পরও অন্য দেশের ক্রিকেটাররা সফরে যাবেন এবং যাওয়াটাই বা কতটুকু নিরাপদ?
মূলত ম্যাচ বাতিল করা অস্ট্রেলিয়ার একটি রোগে পরিণত হয়ে গেছে। সেই প্রথম ১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কাতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বোমা হামলার ঘটনায় সফর বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া। এর পর একে একে ২০০২ সালে জিম্বাবুয়ে সফর বাতিল এবং ০৮ সালে পাকিস্তান সফর বাতিল করে সমালোচিত হয় অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ড। প্রত্যেক সফর বাতিলের ব্যাপারে তারা একটাই যুক্তি দেখিয়েছে। তা হলো নিরাপত্তার অভাব ও জঙ্গি ভয়। তেমনই একই অপরাদে সবস্ত্য করে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে কোনঠাসা করল অস্ট্রেলিয়া।
সফর বাতিলের পর অস্ট্রেলিয়া বোর্ড খেকে বাংলাদেশকে জানিয়েছিল ভিন্ন ভ্যানুতে তারা সিরিজ চালিয়ে নিতে চায়। যদি তাতে বাংলাদেশ সম্মতি দেয়। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের এমন অফারকে সরাসরি না করে দেন বিসিবি। বিসিবি জানায়, সিরিজ বাংলাদেশের ভ্যানুতেই হবে এবং এর জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা দিতেও প্রস্তুত বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের এমন সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানিয়েছেন ক্রিড়াবোদ্ধারা। অনেকে মনে করছেন এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডকে উল্টো লাল কার্ড দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এখন বিশ্ব তাকিয়ে আছে তাদেরকে পরবর্তী লাল কার্ড কে দেখায়!
লেখক: সাংবাদিক
৫ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/আরিফুর/রাজু