সোমবার, ০৩ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৩৬:৩১

সাফল্যর রহস্য জানালেন তামিম ইকবাল

সাফল্যর রহস্য জানালেন তামিম ইকবাল

স্পোর্টস ডেস্ক : ম্যাচ কিংবা সিরিজ সেরা—কোনোটাই তামিম ইকবালের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা নয়। তবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের দশম বর্ষে পা রাখা মৌসুমে নতুন লক্ষ্য ধরে এগোচ্ছেন তিনি।

গতকাল ক্রিকেটের ছুটির দিনে অতীত-বর্তমানের চেয়ে অনাগত ভবিষ্যতের কথাই সাইদুজ্জামানকে বলেছেন বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক রান ও সেঞ্চুরির মালিক
 
প্রশ্ন : আফগানিস্তান এতটা লড়াই দেবে, আগে ভেবেছিলেন?

তামিম ইকবাল : সত্যি বলতে কি, এতটা আশা করিনি। ওরা খুব ভালো খেলেছে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে আমরা অনেক দিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নেমেছিলাম। কিন্তু অনভ্যস্ততার চ্যালেঞ্জ তো ছিলই। সেটার অনেকটা ওভারকাম করে সিরিজটা জিতেছি।

প্রশ্ন : তৃতীয় ওয়ানডের পর বলেছিলেন কিছু জায়গায় ঘাটতি রয়ে গেছে। একটু নির্দিষ্ট করে যদি জানতে চাই...

তামিম : গত এক-দেড় বছরে পেস বোলাররা খুব ভালো করেছে। কিন্তু এ সিরিজে সেটা হয়নি। পেস বোলিংয়ে উন্নতি করতে হবে। আসলে উন্নতির তো শেষ নেই। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সব বিভাগেই উন্নতি করতে হবে। এই সিরিজে আমরা যদি সেরা ক্রিকেটটা খেলতাম তাহলে তো ৩-০ ব্যবধানেই জিততাম। ওপেনিং, মিডল অর্ডার, বোলিং— অনেক জায়গায় উন্নতি করতে হবে।

প্রশ্ন : আফগানিস্তান সিরিজ নতুন সমস্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল, লেগ স্পিন। এটার সমাধান কী?

তামিম : লেগ স্পিনাররা এমনই বোলার যে, ওরা ভালো জায়গায় বোলিং করলে খেলা কঠিন। এই একটা রেয়ার ব্র্যান্ড। বাংলাদেশে লেগ স্পিনের খুব ভালো ইতিহাসও নেই। ঘরোয়া ক্রিকেটে সেভাবে খেলিনি। এ কারণেই সমস্যাটা বেশি হয়েছে। এর সমাধান একটাই, দেশে ভালো লেগ স্পিনার তৈরি করতে হবে।

প্রশ্ন : এবার আপনার ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে আসি। আরেকটি জায়গায় একা হলেন, ওয়ানডে সেঞ্চুরি সংখ্যায় টপকে গেলেন সবাইকে। এটা কি বাড়তি আনন্দ দেয়?

তামিম : দেখুন, কাকে টপকালাম, আমি এসব ভাবি না। এমনিতে একটু তো ভালো লাগেই। সেঞ্চুরি করেছি, দল জিতেছে এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আর সবাই জানতে চান আমার কোন সেঞ্চুরিটা বেশি স্পেশাল। আমি কিন্তু ‘রেট’ করি না। সবগুলো সেঞ্চুরির জন্য আমাকে হার্ডওয়ার্ক করতে হয়েছে। তাই প্রতিটি সেঞ্চুরিই স্পেশাল।

প্রশ্ন : এ যুগে তো ওপেনারদের চোখ থাকে ডাবল সেঞ্চুরির দিকেও। কখনো কি মনে হয়েছে তামিম একটা ডাবল সেঞ্চুরি মিস করে ফেলেছেন! বলতে চাচ্ছি, তামিমের কি ওয়ানডেতে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা?

তামিম : সুযোগ মিস না করলে ডাবল হান্ড্রেড হতেও পারে। তবে বলে-কয়ে করা সম্ভব না। কাল (পরশু) যেমন সুযোগ ছিল। অবশ্য ডাবল সেঞ্চুরির কথা ভেবে খেলিনি। চেষ্টা করেছি দ্রুত রান তুলতে। শেষ পর্যন্ত জানতাম না কী হবে। তবে দুই-তিনটা ছক্কা মেরে আউট হয়ে গেলে হবে না। আমারও হয়নি।

প্রশ্ন : উত্তরটা আরো সোজাসুজি জানতে চাচ্ছি। পারবেন ডাবল সেঞ্চুরি করতে? অত বড় ইনিংস খেলার জন্য যে সামর্থ্য, অভিজ্ঞতা আর ফিটনেস দরকার, সেসব কি আছে?

তামিম : আমার বিশ্বাস আমি অনেক বড় রান করতে পারব। আমি চাই বড় ইনিংস খেলতে, তবে ‘নাম্বার’ দিয়ে বলতে চাই না। ১৫০-১৬০ নাকি ২০০, ওভাবে ভাবি না। অনেকেরই স্বপ্ন থাকে। আমিও ওয়ানডেতে বড় ইনিংস খেলতে চাই। তাই বড় ইনিংসটা কত বড়, সে ঘোষণা দিতে পারছি না।

প্রশ্ন : ম্যাচের সঙ্গে সিরিজ সেরাও। আশপাশে আর কেউ নেই। কেমন লাগে এসব সময়ে?

তামিম : অবশ্যই ভালো লাগে। ম্যাচ ও সিরিজ সেরা স্পেশাল অনুভূতি। মেমোরি হয়ে থাকবে। যে সিরিজই এমন গেছে, সেগুলা খুব মনে আছে। দলের জন্য কনট্রিবিউ করতে পারার আনন্দ আসলে অন্য রকম।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের ক্রিকেটে দীর্ঘ সময় ধরে সাকিব আল হাসানের খুব কাটতি। মাশরাফি বিন মর্তুজা, এখন মুস্তাফিজুর রহমান চলছেন দেদারসে! লম্বা মৌসুমের এমন শুরুটা কি তামিমের প্রচারণা যুগেরও ইঙ্গিত?

তামিম : (হাসি) আমি এভাবে ভাবি না। আমি মনে করি এ মৌসুমে হয়তো দেখা যাবে সাকিব-মুস্তাফিজসহ আরো দুই-তিনজনের শুরু হবে। মুশফিকেরও দুর্দান্ত একটা ফেজ গেছে। তো, যত এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা বাড়বে ততই দলের জন্য ভালো।

প্রশ্ন : ইংল্যান্ড প্রতিপক্ষ হলেই তো জিকির শুরু হয় তামিমকে নিয়ে!

তামিম : ইংল্যান্ডের সঙ্গে এক-দুটি সিরিজ ভালো করেছি মানে এই না যে আমি এই দলটাকে পছন্দ করি। এ ব্যাপারটাকে আমি গুরুত্বই দেই না। ওগুলো অতীত। আমি মনে করি বর্তমান এবং ভবিষ্যতে ভালো করতে হলে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হবে। প্রতিপক্ষ কোন দল বড় কথা নয়, বর্তমান ফর্মটাই ইম্পরট্যান্ট।

প্রশ্ন : আজকে (গতকাল) তো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছে। এমন আরো অনেকবার হয়েছে। কেমন লাগে এমন ঊর্ধ্বতনদের সংস্পর্শ?

তামিম : সত্যি বলতে উনি (প্রধানমন্ত্রী) খুব ফ্রেন্ডলি। উনি যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, সেটা বুঝতেই দেন না! আজ গিয়েছিলাম একটা অন্য কারণে (স্মার্ট কার্ড উদ্বোধন)। তিনি অসম্ভব ক্রিকেট ফ্যান। ম্যাচ জেতার পর প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পাই। তৃতীয় ওয়ানডের পর যেমন পাপন ভাই (নাজমুল হাসান) পাশে ডেকে মোবাইলে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দনবার্তা দেখালেন। এতে হয় কি আমরা সবাই অনুপ্রাণিত হই। দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষ আমাদের শুভেচ্ছা জানান নিয়মিত, এটা গর্বের।

প্রশ্ন : আপনারা ক্রিকেটাররা তো তুমুল ভাগ্যবানও। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সর্বমহলেও বাড়তি যত্নআত্তি পান।

তামিম : অস্বীকার করার উপায় নেই। আমরা মন্ত্রী-ব্যবসায়ী না, কিন্তু যেখানেই যাই পর্যাপ্ত সম্মান করেন, খাতির করেন। আমরা অনেক বেশি লাকি বলেই এটা পাই।

প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন। লম্বা মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। যদি আপনাকে আলাদা করে জানতে চাই লক্ষ্যের কথা। প্রধানতম লক্ষ্য কী আপনার?

তামিম : ফিট থাকাটাই প্রধান লক্ষ্য। এটা আমার একার না, মনে হয় সবারই তাই। ফর্ম কখনো ভালো যাবে, কখনো খারাপ যাবে। ফিট থাকলে খারাপ সময় থেকে বেরোনোর সুযোগটা অন্তত পাবেন। কিন্তু ফিট না থাকলে সে সুযোগটাও মিলবে না। টানা ম্যাচ খেলার জন্য ফিটনেস ধরে রাখাই প্রধান লক্ষ্য।-কালেরকন্ঠ
৩ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে