সোমবার, ০৩ অক্টোবর, ২০১৬, ০৭:১৫:০২

মাশরাফিকে নিয়ে সিনেমা বানানোর দাবি

 মাশরাফিকে নিয়ে সিনেমা বানানোর দাবি

স্পোর্টস ডেস্ক: ক্রিকেটপাগল ছেলে। পায়ে ৭ বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তবুও খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন দৃঢ় প্রত্যয়ে। হাজারবারও যদি পায়ে অস্ত্রোপচার হয় তবুও দেশের পতাকা হাতে দৌঁড়াতে চান। তিনি বাংলাদেশের সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। মাত্র ৩১টি একদিনের ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ২২টি জয়ের স্বাদ পাইয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ টি২০ তে ৯টি ম্যাচ জিতেছে মাশরাফির নেতৃত্বে। যা বাংলাদেশী অধিনায়ক হিসেবে সর্বাধিক জয়।
 ২০১৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি দলের দায়িত্ব তুলে দেন দেশসেরা পেসার মাশরাফির হাতে। আর এই দুই বছরে পুরো বাংলাদেশ টিমকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন তিনি।
 
গত একদিনের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। যেখানে মাশরাফির নেতৃত্ব ছিল অসাধারণ। এরপর ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে তার নেতৃত্ব প্রশংসার দাবি রাখে। তার নেতৃত্বে আইসিসির একদিনের ম্যাচের র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছে সাত নম্বরে। ঝিমিয়ে পড়া টাইগারদের প্রাণবন্ত করে তুলেছেন মাশরাফি। মাশরাফি দলে থাকা মানেই দল যেন প্রাণ ফিরে পায়। পুরো টিমকে উজ্জীবিত করে তোলেন তিনি। জয়ের ক্ষুধা তার মাঝে যেন খুব কাজ করে। বিপিএলের তৃতীয় আসরে ঝিমিয়ে পড়া দল কুমিল্লার শিরোপা জয়ের ক্ষেত্রেও বড় অবদান মাশরাফির। খেলার মাঠে একটু পড়ে গেলেই যেন কোটি কোটি বাঙালির মনে ভয় ধরে যায়-এই বুঝি আবারও ইনজুরিতে পড়লেন মাশরাফি। কেউ কেউ আবার বলেন, ওর বোলিং ব্যাটিং করার কোনো দরকার নেই। শুধু মাঠে থাকলেই চলবে।
 
তবে ইনজুরিতে পড়ার ভয় নিয়ে কখনও মাঠে নামেন না এ ডানহাতি বোলার। বল হাতেও আগুন ঝরান তিনি। অধিনায়ক হিসেবে দলের দায়িত্ব নেয়ার আগে বাংলাদেশের পেস আক্রমণে বিপ্লব আনেন মাশরাফি।
 
৮ নভেম্বর, ২০০১ এ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে। একই ম্যাচে খালেদ মাহমুদেরও অভিষেক হয়। বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচটি অমীমাংসিত থেকে যায়। মাশরাফি অবশ্য অভিষেকেই তার জাত চিনিয়ে দেন ১০৬ রানে ৪টি উইকেট নিয়ে। গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন তার প্রথম শিকার। একই বছর ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের সাথে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সাথে বোলিং ওপেন করে তিনি ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে বাগিয়ে নেন ২টি উইকেট।
 
ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশে ভালো পেস বোলারের ঘাটতি ছিল। বাংলাদেশে মোহাম্মদ রফিকের মতো আন্তর্জাতিক মানের স্পিনার থাকলেও উল্লেখযোগ্য কোনো পেস বোলার ছিল না। মাশরাফি বাংলাদেশের সেই শূন্যস্থান পূরণ করেন। ২০০৬ ক্রিকেট পঞ্জিকাবর্ষে মাশরাফি ছিলেন একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট শিকারী। তিনি এসময় ৪৯টি উইকেট নিয়েছিলেন। ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে ১১ বার চোটের কারণে দলের বাইরে যেতে হয়েছে মাশরাফিকে। চোটই তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল ২০১১ সালের দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ। তখন মাশরাফির কান্না পুরো বাঙালি ক্রিকেট ভক্তকে কাঁদিয়েছে।

চোটের কারণে অপারেশন টেবিলে তাকে যেতে হয়েছে সাতবার। ফাস্ট বোলারদের ক্ষেত্রে এতোবার অপারেশনের পরও দেশের জন্য খেলার ইতিহাস বিশ্বে বিরল। আর মাশরাফির এই উঠে আসার কাহিনী নিয়েই ছবি নির্মাণের দাবি উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। যেখানে দেখানো হবে ক্রিকেট পাগল এক মাশরাফিকে। ৭ বার অস্ত্রোপচারের পরও দেশের জন্য কীভাবে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে মাঠে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেন তা নিয়ে ছবি নির্মাণের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে উঠছেন ভক্তরা।
 
অনেকেই বলেছেন, ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির জীবনী নিয়ে যদি সিনেমা নির্মাণ করা হয় তাহলে মাশরাফিকে নিয়ে কেন সিনেমা বানানো হবে না। ধোনির বায়োপিককেও হার মানাবে মাশরাফির বায়োপিক। এমন মন্তব্যও করেছেন অনেকে।
 
সাদিয়া আফরোজ নামের একজন লিখেছেন, কোনো একদিন এমনভাবে মাশরাফিকে নিয়ে সিনেমা হবে। আমি শিওর প্রতিটা দৃশ্যে নিঃশ্বাস আটকে থাকবে, একটু পর পর চোখের পানি মুছবো। ম্যাশকে নিয়ে মুভি হবে শোনার পর থেকেই অপেক্ষার প্রহর গুনবো দেখার অপেক্ষায়।
 
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচ জয়ের পর সম্রাট খান নামের একজন ফেসবুকে লেখেন, ক্রিকেটপাগল জাতি আমরা। ক্রিকেট নিয়ে বলাটা কি 'অফ টপিক' হবে! অন টপিকই হওয়ার কথা..দেশে দেশে বায়োপিক সিনেমা তো হচ্ছেই। আমাদের কেন হবে না! প্রথমটা মাশরাফিকে দিয়ে হতেই পারে। আজ বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচের দ্বিতীয় পর্বের ২৯ ওভারে এ দর্শক (মাঠে ঢুকে পড়া যুবক) যা ঘটাল তাতেই বোঝা যায় মাশরাফি জাতির কতটা জুড়ে আছে।বায়োপিক হতেই পারে.. ।
 
স্বজন মাহমুদ নামের একজন লেখেন, মাশরাফিকে নিয়ে একটি সিনেমা বানানো জাতীয় দাবি হওয়া উচিৎ বলে মনে করি। অনেক প্লট পাওয়া যাবে, যা মাহেন্দ্র সিং ধোনির থেকেও টাচিং স্টোরি হবে বলে বোধ করি। এমন লিজেন্ড আমি জীবনেও দেখিনি। অবিশ্বাস্য। তার আচরণ, তার বোধ, তার সিরিয়াসন্যাস, ওভারঅল সবকিছু এক কথায় অতুলনীয়। সেলাম ক্যাপ্টেইন!
 
ফাহিম মাশরুর নামের একজন লিখেছেন, আমাদের দেশে হবে সেই পরিচালক কবে...... "সুন্দরবনের সিংহ" নিয়ে সিনেমা না বানিয়ে মাশরাফিকে নিয়ে বানাবে!!!!
 
আকিব আল মোহাইমেন নামের একজন লিখেছেন, আমি বাজি ধরে বলতে পারি- যদি মাশরাফিকে নিয়ে কোনো সিনেমা করা হয়, সেটা হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যবসা সফল সিনেমা !
 
এমন আরও অনেকেই দাবি তুলেছেন মাশরাফিকে নিয়ে একটা সিনেমা বানানোর। তবে তাকে নিয়ে ভবিষ্যতে সিনেমা হবে কি না সেটা সময়ই বলে দেবে।-যুগান্তর
৩ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে