মঙ্গলবার, ০৪ অক্টোবর, ২০১৬, ০২:৪৮:২৭

এবারও কি উপেক্ষিত হবেন ইমরুল?

এবারও কি উপেক্ষিত হবেন ইমরুল?

রবিউল ইসলাম: পুরো ক্যারিয়ারে জুড়েই জাতীয় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন ইমরুল কায়েস। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০০৮ সালে। এই আট বছরে ইমরুল খেলেছেন ৫৯টি ওয়ানডে। যেখানে ২০১১ সালে অভিষেক হওয়া নাসির খেলেছেন ৫৬টি ওয়ানডে ম্যাচ। ২০১১ সালের পর ২ বছর ছিলেন দলের বাইরে্। অবশ্য কারণও আছে। ওই বছর ১৮টি ম্যাচ খেলে তার হাফসেঞ্চুরি ছিল মাত্র ৩টি। সর্বোচ্চ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৯৩ রান।

ওই দুই বছর অনেক পরিশ্রম করে ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্স করে ফেরেন ফের জাতীয় দলে। ২০১২-১৩ মৌসুমে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের হয়ে খেলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রাহক হয়েছিলেন তিনি। এক সেঞ্চুরি ও চার হাফসেঞ্চুরিতে করেছিলেন ৬৫৫ রান। ওই মৌসুমে ভালো ক্রিকেট খেলার ফল স্বরূপ সুযোগ হয় ২০১৪ সালের এশিয়া কাপে। যদিও মাত্র একটি ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ পান তিনি। সুযোগ পেয়েই ৫৯ রানের ইনিংস আসে তার ব্যাট থেকে।

এশিয়া কাপ শেষে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। অথচ এশিয়া কাপে একটি মাত্র ম্যাচে সুযোগ পেয়েও ভালো খেলা ইমরুলের সুযোগ হয়নি ভারতের বিপক্ষে ১৪ জনের স্কোয়াডে। উপেক্ষিত হওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে আবারও ‍‘কোন সুযোগের’ অপেক্ষায় থাকেন ইমরুল।

ভারতের বিপক্ষে সিরেজের পরেই আবারও ফেরেন জাতীয় দলে। কিন্তু সেবার  ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে গিয়ে টেস্ট ও ওয়ানডেতে পুরোপুরি ব্যর্থ হন। সেই ব্যর্থতা টেনে নিয়ে যান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও।

বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচটি ওয়ানডে খেললেও ইমরুল সুযোগ পান একটি ওয়ানডেতে। সেখানে অবশ্য ভালো করতে পারেননি। স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে স্কোয়াডে ছিলেন না ইমরুল।

কিন্তু এনামুলের ইনজুরিতে ভাগ্য খুলে ইমরুলের। একদিনের নোটিশে উড়াল দেন অস্ট্রেলিয়ায়। তখন অবশ্য ব্যর্থ হয়েই ফিরলেন। এরপর ঘরের মাঠে পাকিস্তান-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট স্কোয়াডে থাকলেও ছিলেন না ওয়ানডে দলে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত বছরের শেষের দিকে ওয়ানডে সিরিজে ব্যাক টু ব্যাক হাফসেঞ্চুরি পেয়েছিলেন তিনি।

এই সাফল্যের মন্ত্রণা শিখিয়ে দিয়েছিলেন মূলত তার ‘বস’। ইমরুলের বস মাশরাফির অনুপ্রেরণাতেই তিনি সাফল্য পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। মাশরাফি তাকে বলেছেন ক্রিকেট মানেই জীবন নয়; ব্যর্থ হলে সমস্যা নেই। যা হওয়ার তাই হবে। নিজের সহজাত খেলা খেলতেই ইমরুলকে উদ্বুব্ধ করেন মাশরাফি।

গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে প্রথম উইকেট জুটিতে তামিমের সঙ্গে ৩১২ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন ইমরুল। ওয়ানডেতে সুযোগ না পেলেও টেস্টে অটোমেটিক চয়েজ হিসেবে দলে সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। তাইতো ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ হচ্ছে না তার। এই আক্ষেপটা অবশ্য দূর করেছিলেন গত বিপিএল-এ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলে। সেখানে দেশীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩১২ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। সে হিসেবে ইমরুলকে কি টেস্ট ক্রিকেটার বলা হবে? যা নিয়ে প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

সম্প্রতি তামিমের পর ওপেনার হিসেবে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান বলা চলে ইমরুল কায়েসকে। কিন্তু টিম কম্বিনেশনের কারণ দেখিয়ে ইমরুলকে বসিয়ে রাখা হয় সাইড বেঞ্চে! আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৩৭ রানের ইনিংস খেলার পর আবার উপেক্ষিত করা হয় তাকে। সাইড বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয় পরের দুটি ম্যাচে।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ শেষে ইমরুলের একাদশে না থাকা নিয়ে মাশরাফির ব্যাখ্যা ছিল, ‘ইমরুলের বাদ পড়া দুর্ভাগ্যজনক। ব্যাটিং পজিশনের কারণেই ইমরুলকে খেলানো হয়নি। ওর জায়গা থেকে অবশ্যই এটা হতাশাজনক। আশা করছি সামনে খেললে আরও ভালো করবে।’

মাঝে মাঝে ইমরুল আক্ষেপ করেই বলেন, ‘এটা আমি মেনে নিয়েছি। এখন আর কষ্ট লাগে না। শুধু পরিকল্পনা থাকে যেখানেই, যখন সুযোগ পাবো নিজের সেরাটা দিবো’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হয়তো আবারও সাইড বেঞ্চে বসে থাকতে হবে ইমরুলকে টিম কম্বিনেশনের অজুহাতে! তারপরও নিজের প্রস্তুতি ম্যাচটায় দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে নির্বাচক কিংবা টিম ম্যানেজম্যান্টের কাছে প্রশ্ন রেখে দিলেন ইমরুল। মঙ্গলবার ওকস-ওয়ালি-স্টোকস-রশিদদের পিটিয়ে ১২১ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলেন তিনি। ১১ বাউন্ডারি ও ৬টি ওভার বাউন্ডারিতে তিনি তার ইনিংসটি সাজিয়েছেন।

মাশরাফির কথা অনুযায়ী ইমরুল যেখানেই সুযোগ পাবে, সেখানেই ভালো করবে। কিন্তু এরজন্য ইমরুলকে সুযোগতো দিতে হবে। কিন্তু টিম ম্যানেজম্যান্ট কি ইমরুলকে সুযোগ দিচ্ছে প্রস্তুত? যার উত্তর মিলবে আগামী ৭ অক্টোবর!-বাংলা ট্রিবিউন
৪ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে