বুধবার, ০৫ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:৫৫:৫৭

আমি সমানে কাঁদছি কিন্তু সুমি নরম্যালি: মাশরাফি

আমি সমানে কাঁদছি কিন্তু সুমি নরম্যালি: মাশরাফি

আরিফুল ইসলাম রনি : বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক; তবে ক্রিকেটের সীমানা ছাড়িয়েছেন তিনি অনেক আগেই। জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই কোটি কোটি মানুষের অনুপ্রেরণার নিরন্তর উৎস মাশরাফি বিন মুর্তজা। জীবনের পথচলায় তার ৩৩ পূর্ণ হলো ৫ অক্টোবর। দুই বছর আগে একই দিনে পৃথিবীর আলোয় এসেছে তার দ্বিতীয় সন্তান। দীর্ঘ আড্ডায় মাঠের ক্রিকেট থাকল কমই। উঠে এল মাশরাফির জীবনবোধ, মূল্যবোধ, পরিবার-সমাজ ও চারপাশের নানা বাস্তবতা নিয়ে তার ভাবনা।

পেছন ফিরে তাকালে, কি মনে হয়, জীবনটা কেমন কাটলো?

মাশরাফি: জীবন নিয়ে আমি খুবই তৃ্প্ত। আমার তেমন কোনো আফসোস নেই। বিখ্যাত কে একজন বলেছিলেন না, ‘হয়ত এখন আমি অনেক বিখ্যাত, কিন্তু আমি আনন্দ পাই আমার শৈশবের দুষ্টুমিগুলো থেকে।’ আমারও সে রকমই। জীবনের বেশিরভাগ সময় আমার যেটা মন চেয়েছে, সেটাই করেছি। বন্ধু, পরিবারের সঙ্গে দারুণ সময় কাটিয়েছি। আমার আক্ষেপ নেই।

দেশের মাটিতে ২০১১ বিশ্বকাপ খেলতে না পারা বা ইনজুরি, এমন অনেক খারাপ সময় গেছে। মাঠের বাইরেও খারাপ সময় এসেছে সময়ের স্রোতে সেসব চলেও গেছে। আমি আফসোস করি না।

জীবনের অর্থ আপনার কাছে কি?

মাশরাফি: সিম্পলি বললে, আমার কাছে জীবন মানে ঠিকভাবে বেঁচে থাকা। মূল্যবোধ ঠিক রাখা। আমাদের দেশে সমালোচনা করতে বা বিষয়বস্তু হয়ে উঠতে সময় লাগে না। অনেক ভেবেছি সেসব নিয়ে। এখন আর ভাবি না। লাভ নেই।

জীবনের অর্থ আমার কাছে সিম্পল চলা। জীবন তো ক্ষণস্থায়ী। কারও সঙ্গে ঝামেলা না বাধানো। সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা, কারও ক্ষতি না করা। কেউ যদি এক্সট্রা অর্ডিনারিভাবে চলতে চায়, সেটা তার ব্যাপার। হয়ত সেটার মাঝেই সে সিম্পপ্লিসিটি খুঁজে নিয়েছে। আমি আমার মতো সিম্পল।

চড়াই-উৎরাইয়ের পথচলায় আপনার স্ত্রীর অবদান তো অবশ্যই অনেক। তার কথা উঠে আসে সামান্যই!

মাশরাফি: সত্যিকার অর্থে সংসারটা সেই সামলায়। বাসায়, ঘরের সব কিছু তার হাতে গড়া। বাচ্চা-কাচ্চা, সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকে। মাঠ, খেলা এসব নিয়ে আগ্রহ তার খুব একটা নেই। হয়ত আমার সঙ্গে সব জায়গায় যায় না। এজন্য লোকে জানে কম।

এমনিতে আমাকে নিয়ে তো কনসার্ন আছেই। আমাকে যতটুকু সম্ভব হেল্প করে। সম্পর্কের গাঁথুনিটা অনেক সময় এভাবে বোঝা যায় যে, দূরে থাকলেও পাশে অনুভব করা যায়। ওর ব্যাপারে আমি সেটা পাই।

হতে পারে ইচ্ছে করেই ক্রিকেট নিয়ে কম আগ্রহ দেখায়। অনেক সময় আবার নিজ থেকেই বলে। সবসময় পজিটিভ কথাই বলে।

আপনার কঠিন সময়গুলো তিনি কিভাবে সামলান?

মাশরাফি: বুঝতে দেয় না আমাকে। সুমি মানসিকভাবে অনেক শক্ত। আমাদের প্রথম সন্তান হওয়ার সময় ও যখন, ক্লিনিকালি ডেড পর্যায়ে চলে যাচ্ছে, ডাক্তার কেন জানি ওকে বলে ফেলেছিল যে ‘আপনার সন্তান বাঁচবে, তবে আপনাকে হয়ত বাঁচাতে পারব না।’ আমি তখন ব্লাড নিয়ে মাত্র এসেছি। ও আমার হাত ধরে বললো, ‘কোনো ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিও।’ আমি সমানে কাঁদছি। কিন্তু ও এতটা নরম্যালি, এতটা স্থির থেকে বলল, তখন বুঝেছি ও কতটা শক্ত। সবাই বলে আমি মানসিকভাবে শক্ত। সুমি আমার চেয়ে তিনগুণ বেশি শক্ত।

আমার খেলা থাকলে, ওর যত বড় অসুখই হোক, যত সমস্যা হোক, জানায় না কখনোই। বাচ্চাদের খুব বড় কোনো সমস্যা হলেই কেবল জানায়। আর সব নিজেই সামলায়। বিডি নিউজ

 ৪ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে