বুধবার, ০৫ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:১৮:৫৫

মায়ের সঙ্গে ছোট্ট মাশরাফি

মায়ের সঙ্গে ছোট্ট মাশরাফি

স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় মাশরাফি বিন মর্তুজর আজ ৩৪তম জন্মদিন। ১৯৮৩ সালের এই দিনে নড়াইলে জন্মগ্রহন করেন তিনি।

ব্যক্তি মাশরাফি সবার অন্তরে। সবার মনে স্থান করে নিয়েছেন। কারণ বিশেষ কারণ সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারেন তিনি। মাশরাফি যেমনই প্রতিভা, তেমনই ব্যক্তিত্ব। নড়াইলের জন্মগ্রহন করা সেই দুরন্ত কিশোর কৌশিক এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের আইকন, কোটি মানুষের নয়নের মনি।

তবে এবার ভক্তদের কল্যাণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন জনের টাইমলাইনে ভেসে বেড়াচ্ছে মায়ের সঙ্গে মাশরাফির ছোট বেলার এই ছবিটি। অনেকে তাতে আদর মাথা ক্যাপশনও জুড়ে দিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৩ সালের আজকের এই দিনে নড়াইলে জন্মগ্রহন করা মাশরাফি ছোটবেলা থেকে ছিলেন দুরন্ত। সারাক্ষণ মেতে থাকতেন বন্ধুদের নিয়ে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে যেতেন ক্রিকেট খেলতে। মজার ব্যাপার হলো শুরুতে মাশরাফি কিন্তু ব্যাটিংয়ে পারদর্শী ছিলেন। বোলিংয়ের প্রতি ছিল তার অনীহা। তবে এভাবেই একদিন সুযোগ পেয়ে গেলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। সেখান থেকেই তিনি চোখে পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং কোচ অ্যান্ডি রবার্টসের। তার হাতে পড়েই ক্যারিয়ার বদলে যায় মাশরাফির। যে কারণে, তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাচ না খেলেই টেস্টে অভিষিক্ত হন।

২০০১ সালের ৮ নভেম্বর সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয় মাশরাফির। ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত খেলাটিতে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। বৃষ্টিবিঘ্নিত হওয়ার কারণে বোলিং করার সুযোগ পেলেন মাত্র এক ইনিংসে, ৩৬ ওভার। একই বছর ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের সঙ্গে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সঙ্গে বোলিং ওপেন করে তিনি ৮.২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে দুই ফরম্যাটেই গ্রান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন মাশরাফির প্রথম শিকার! সেই যে শুরু পথচলা, এরপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১৫টি বছর পার করে ফেলেছেন ক্যারিয়ারের।

ইনজুরি যেন তার আজন্ম সঙ্গী। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে যেভাবে ইনজুরিতে কাটিয়েছেন- তাতে করে বাংলাদেশ হারিয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ ক্যারিয়ারের দিনগুলো। এই সময়গুলো তিনি যদি খেলদে পারতেন, তাহলে নিশ্চিত বাংলাদেশ অনেকদুর এগিয়ে যেতে পারতো। নিজের তৃতীয় টেস্ট খেলার সময়ই আঘাত পান হাঁটুতে। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ছিলেন মাঠের বাইরে- প্রায় দুই বছর। এরপর মাঠে ফিরেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট; কিন্তু আবারো আঘাত পেলেন হাঁটুতে। এ যাত্রায় তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হয় প্রায় বছরখানেক।

২০০৬ সালে এক পঞ্জিকাবর্ষে মাশরাফি ছিলেন একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলার। তিনি ওই বছর নিয়েছিলেন ৪৯ উইকেট। কিন্তু বারবার ইনজুরির থাবা তাকে মাঠের বাইরে ঠেলে দেয়। সব জয় করে তিনি মাঠে ফেরেন। সব দুঃখ, কষ্ট পেছনে ঠেলে তিনি ঠিকই এগিয়ে চলছিলেন; কিন্তু মাশরাফি চূড়ান্ত আঘাতটা পেলেন ২০১১ বিশ্বকাপের সময়। নিজ দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের দলে ঠাঁই না পেয়ে। সেদিন নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। মিরপুরের অ্যাকাডেমি মাঠে অঝোর ধারায় কেঁদেছিলেন।

মাশরাফি সম্ভবত তখনই আরো পোক্ত হয়েছিলেন। নিজেকে মানসিকভাবে আরো শক্ত করে নিয়েছিলেন। দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন, এই উপেক্ষার জবাব দিতে হবে একদিন। তিনি পেরেছেন। চার বছর পর তারই নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ খেলেছিল কোয়ার্টার ফাইনাল।

এরপর মাশরাফি হয়ে গেলেন যেন পরশ পাথর। তার ছোঁয়ায় একের পর এক হাতের মুঠোয় ধরা দিতে থাকলো সাফল্য। পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তিকে টেনে নামিয়েছেন মাটিতে। দিয়েছেন ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের স্বাদ। তার হাত ধরে টানা ৬টি সিরিজ জয় এলো ঘরের মাঠে। এবার সামনে ইংল্যান্ড। দেখা যাক, এবার কতদুর যেতে পারে বাংলাদেশ।

ইনজুরি তার টেস্ট ক্যারিয়ার দীর্ঘ হতে দেয়নি। মাত্র ৩৬ টেস্ট খেলে নিয়েছেন ৭৮ উইকেট। একই সঙ্গে তিনটি হাফ সেঞ্চুরিসহ রান করেছেন ৭৯৭। বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ওয়ানডে খেলেছেন তিনি- ১৬৩টি। উইকেট পেয়েছেন ২০৮টি, আর রান ১,৪৫০। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হিসেবে সাকিবের পরই তার অবস্থান।
৫ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে