স্পোর্টস ডেস্ক: মন খারাপ সৌম্য সরকারের। তা স্পষ্ট তার মুখের আবহ দেখে। কারণ হাজার চেষ্টা করেও ব্যাটে কথা বলছে না তার। নির্বাচক-অধিনায়ক সবাই তাকে মেন্টালি সার্পোট দিলেও খেই হারিয়ে চুপচাপ জাতীয় দলের এই তারকা ক্রিকেটার। তবে যত মন খারাপই হোক না কেন মুখে তার এক চিলতে হাসি লেগেই আছে।
গতকাল যখনই সংবাদমাধ্যমের কারো সঙ্গে দেখা হলো বা কথা, মুখে সব সময়ই এক চিলতে হাসি ঝুলিয়ে রাখলেন। রান কবে করবেন? আপনার দিকে তো সবাই তাকিয়ে আছে। কারো কারো এমন জিজ্ঞাসার জবাবও হাসতে হাসতেই দিলেন, ‘চেষ্টা তো করছি, বাকিটার জন্য ঈশ্বরের দিকে তাকিয়ে আছি।’
সবার মনে প্রশ্ন উঁকি দিতেও পারে গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক থাকবেন তো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে? তবে আর যাই হোক এসব ভেতরের খবরে না যাওয়াই ভালো। তবে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ইনডোর সংলগ্ন মাঠে কাল মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের নেট অনুশীলন একটি বার্তা অবশ্য দিচ্ছে। প্রস্তুতি ম্যাচে ইংলিশ বোলারদের তুলাধোনা করা ইমরুল কায়েস থেকে শুরু করে দলের প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের কেউই নেটে ব্যাটিং করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হননি। হলেন কেবল একজন, যিনি ইনডোরে বোলিং মেশিন থেকে ছোড়া বলেই ব্যাটিং অনুশীলন করে গেলেন শুধু।
সামনেই শারদীয় দুর্গোৎসব আর এর আগে যেখানে উৎসবের রঙে রঙিন হওয়ার কথা সৌম্যর, সেখানে উল্টো বিবর্ণ হওয়ার নমুনাই যেন হয়ে উঠছেন তিনি। অথচ ইংলিশদের বিপক্ষে রণপরিকল্পনার পুরোভাগেই থাকার কথা ছিল সাতক্ষীরার এই তরুণের। কি অস্ট্রেলিয়ার উইকেট, কি দেশের উইকেট, সবখানেই অবাধে স্ট্রোক খেলতে অভ্যস্ত এই বাঁহাতির ব্যাটে রানখরা এমন প্রবল যে টিম ম্যানেজমেন্টকেও সম্ভবত অন্য রকম করে ভাবতে হচ্ছে। যদিও নিজেদের মাঠে যেমন উইকেটে খেলার ভাবনা বাংলাদেশ শিবিরের, তা তো সৌম্যর মতো দলের আরো স্ট্রোক প্লেয়ারদের কথা ভেবেই। যাঁদের স্বাচ্ছন্দ্যই পাচ্ছে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারও।
ফতুল্লার প্রস্তুতি ম্যাচের পর সেটি খুব স্বাভাবিকও। সেখানকার উইকেটে বল খুব ভালো ব্যাটে এসেছে। ব্যাটসম্যানরাও প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলেছেন। ফ্রন্টফুটে ‘ভি’-র মধ্যে খেলে অভ্যস্ত ইমরুল কায়েসকে দেখেও মনে হয়েছে তাঁর শটের ভাঁড়ার কত সমৃদ্ধ! নিজের সীমাবদ্ধতা ঝেড়ে ফেলে তিনিও অনায়াসে পুল খেলেছেন, ইংলিশ বোলারদের শর্ট পিচ বল নিয়মিত বিরতিতে আছড়ে ফেলেছেন সীমানার বাইরে। ব্যাটিং করতে নেমে ইমরুলের রণমূর্তি ধারণ টিম ম্যানেজমেন্টকেও একাদশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।
অবশ্য বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ইমরুলের সেঞ্চুরির বাইরেও প্রস্তুতি ম্যাচে রানে না থাকা কারো কারো ব্যাটে রানের দেখা মিলেছে। আফগানিস্তান সিরিজে মলিন মুশফিকুর রহিম ফিফটি করেছেন। ফিফটি না করলেও ৪৬ রানের ইনিংসে ঝরঝরে মনে হয়েছে নাসির হোসেনকেও। যিনি কিনা ম্যাচ খেলারই সুযোগ পান কদাচিৎ। অথচ রান না করেও ম্যাচের পর ম্যাচ সুযোগ দেওয়া হয়েছে যাঁকে, সেই সৌম্যই ফিরতে পারেননি রানে। সেটি তাঁর রানের ফুলঝুরি ছোটানোর পক্ষে অনুকূল উইকেট পেয়েও। সে জন্যই বোধ হয় একই রকমের উইকেটে প্রথম ওয়ানডে খেলার ভাবনায় খুব সহজে ঠাঁই করে নিতে পারছেন না তিনি।
৬ অক্টোবর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর