রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬, ০৮:২২:০৫

জীবনের শত বাধা জয় করে নায়ক মেহেদী

জীবনের শত বাধা জয় করে নায়ক মেহেদী

সত্যজিৎ কাঞ্জিলাল: ক্রিকেট বিশ্বের দুই বড় শক্তির বিপক্ষে দারুণ দুটি ইতিহাস রচিত হলো বাংলাদেশের জন্য। কার্ডিফে যেদিন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ সেদিন সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন বাংলাদেশের ‘লিটল মাস্টার’ খ্যাত মোহাম্মদ আশরাফুল। ২০০৫ সালের ১৮ জুন সেই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের ৫ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হয়েছিল ৮ বছর বয়সী এক শিশু। নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। কে জানত সেই শিশুই একদিন দুনিয়া কাঁপিয়ে নিজের আবির্ভাবের খবর জানান দেবে? তৈরি করবে নতুন ইতিহাস!

টেস্ট ক্রিকেটের জন্মদাতা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ধুমকেতুর মত আবির্ভাব ঘটে মিরাজের। চট্টগ্রামে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ৬ উইকেট তুলে ধসিয়ে দেন ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপ। দ্বিতীয় ইনিংসেও ১ উইকেট। যদিও সেই ম্যাচটা দুঃখজনকভাবে মাত্র ২২ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। এরপর? অনেক ক্রিকেটারই অভিষেকে চমক দেখান, কিন্তু তার ধারাবাহিকতা রাখেন কয়জন? মিরাজ সেই ধারাবাহিকতা রাখলেন। তাই দ্বিতীয় তথা শেষ টেস্টে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন মিরাজ। দুই ইনিংসেই ৬টি করে মোট ১২টি উইকেট দখল করেন তিনি! পুরস্কার স্বরুপ মেহেদীর হাতে উঠে দ্বিতীয় ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচ সহ সিরিজ সেরার পুরস্কার!

ক্রিকেটপাগল জনতার এই দেশে বাস্তবতার সাথে প্রচন্ড যুদ্ধ করে এই পর্যায়ে আসতে হয়েছে মিরাজকে। শত বাধা বিপত্তির পরেও যে হার মানেনি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের এই ছেলেটি। জন্মস্থান খুলনায়। খুব অভাবের সংসার ছিল মিরাজদের। আর দশজন বাবার মতই মেহেদীর বাবারও ইচ্ছা ছিল ছেলে পড়াশোনা করে বড় হোক। কিন্তু ছেলের মাথায় যে শুধু ক্রিকেট! বাবার চোখ এড়িয়ে পালিয়ে পালিয়ে ক্রিকেট খেলতেন মিরাজ। এরপরও ধরা পড়েছেন। খেয়েছেন পিটুনি। কিন্তু ক্রিকেট থেমে থাকেনি।

ক্রিকেটের প্রতি মেহেদীর এই প্রেম দেখে মন গলে তার বড় ভাই রাসেলের। তিনি মেহেদীকে মুসলিম একাডেমিতে ভর্তি করে দেন। শুরু হয় মেহেদীর জীবনের নতুন অধ্যায়। টাকা দেওয়ার সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। কয়েকদিন পরই অনূর্ধ্ব-১৪ দলের জন্য ক্রিকেটার বাছাইয়ে টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। মেহেদী ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়ে প্রথমবারের মত সাড়া ফেলে দেন। প্রাইজমানি হিসেবে পান ২৫,০০০ টাকা। বাবারও মন গলে।

টুর্নামেন্টের পরেই জাতীয় অনূর্ধ্ব ১৫ দলে ডাক পান মিরাজ। এরপর বয়সভিত্তিক দলগুলোতে সুযোগ পেয়ে দারুণ পারফর্মেন্স করে অনূর্ধ্ব ১৯ দলে ডাক পান মেহেদী। তখনই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ডাক পড়ে তার। যথারীতি ৯ ম্যাচের ১২ ইনিংসে চার হাফসেঞ্চুরিসহ ৪২৫ রান। একবার ১০ উইকেট সহ তুলে নেন ৩৭ উইকেট! এই ছেলে যে ভবিষ্যতে রাজত্ব করতে আসছে তা বুঝতে ক্রিকেটবোদ্ধা হওয়ার দরকার হয়না। হলোও তাই।

প্রিমিয়ার লিগে কলাবাগানের হয়ে মাঠে নামেন। যথারীতি স্বমহিমায় বিরাজ করেন মেহেদী। ২৩ ম্যাচে ৪১৮ রান এবং ২৩ উইকেট! এবার আরও একটি পালক যুক্ত হয় তার মুকুটে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান মেহেদি। তার নেতৃত্ব দেখে অনেকে বলেই দিয়েছিলেন এই ছেলে জাতীয় দলের পরবর্তী মাশরাফি বিন মুর্তজা হবে। তার নেতৃত্বে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে দেশের মাটিতে এবং আফ্রিকার মাটিতে পরপর সিরিজ হারায় বাংলাদেশ।

এরপর আসে দেশের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। মিরাজের নেতৃত্বে জুনিয়র টাইগাররা পৌঁছে যায় সেমিফাইনালে। তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হয় বাংলাদেশকে। শ্রীলংকাকে হারিয়ে ৩য় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় টাইগারদের। কিন্তু মেহেদী নিজেকে নিয়ে যান অন্য উচ্চতায়। ৫৩ ম্যাচ খেলে ৮১ উইকেট নিয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বনে যান তিনি!

এবার অনেকটা আশ্চর্যজনকভাবেই ডাক পান টেস্ট দলে। ইংল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষে এত কমবয়সী একটা তরুণকে অভিষিক্ত করার বিপক্ষে ছিলেন অনেকেই। কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে একাদশে জায়গা করে নেন মেহেদি! তারপর তো যা ঘটল সব ইতিহাস...। বাংলাদেশের গৌরবের ইতিহাস। হার না মানা একটি ছেলের ইতিহাস।-কালের কণ্ঠ
৩০ অক্টোবর, ২০১৬/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/আ শি/এএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে