মঙ্গলবার, ০১ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৩৬:২৫

মানুষ মনে রাখে না কিন্তু আমি তো শান্তি পাই

মানুষ মনে রাখে না কিন্তু আমি তো শান্তি পাই

স্পোর্টস ডেস্ক: হোটেল ছেড়ে বাসায় ফিরতে না ফিরতেই সম্ভবত স্ত্রী বাজারের ফর্দ ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তা নিয়েই মিরপুরের এক সুপারশপে যাওয়া ইমরুল কায়েস-এর সঙ্গে সেলফি তুলতে কেউ হুমড়ি খেয়ে পড়েনি। অথচ তিনিও পারফরমার কিন্তু জনপ্রিয় নন। মাসুদ পারভেজ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তা নিয়ে দুঃখবোধ তাড়ানোর নিজস্ব পন্থার কথাই শুধু বলেননি, বাংলাদেশ দলের ওপেনার বলেছেন আরো অনেক কথাও।

প্রশ্ন : যত দূর জানি একটা বড় ইনিংস খেললে আনন্দের চেয়ে স্বস্তিই বেশি হয় আপনার। ঠিক কি না?

ইমরুল কায়েস : (হাসি...) ভুল জানেন না! যখনই জাতীয় দলের হয়ে খেলি, মাথায় থাকে যে এটাই আমার শেষ ম্যাচ হতে পারে। এভাবেই নিজেকে মানসিকভাবে তৈরি করে আমি খেলে আসছি। আর ভালো একটা ইনিংস খেললে মনে হয়, ‘যাক, আরো কয়েকটি ম্যাচ তাহলে দলে থাকছি।’

প্রশ্ন : ঠিক কবে থেকে এমন অনুভূতি হচ্ছে আপনার?

ইমরুল : আসলে বাদ পড়তে পড়তেই এই অভ্যাসটা হয়ে গেছে আমার।

প্রশ্ন : এটা কি ২০১০-এর নিউজিল্যান্ড সফরের ক্রাইস্টচার্চ ওয়ানডের পর থেকেই? ওই ম্যাচের আগেই তো কোচ জেমি সিডন্স বলেছিলেন যে সেটি আপনার শেষ ওয়ানডে হতে চলেছে। অথচ ওই ম্যাচে আপনি সেঞ্চুরিই করে বসলেন!

ইমরুল : এর আগে ঢাকায় ত্রিদেশীয় সিরিজে ভারতের বিপক্ষে ৭০ রানের ইনিংস খেলে নিউজিল্যান্ড সফরের দলে সুযোগ পাই। তার পরও সিডন্স হয়তো ভেবেছিলেন আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত নই। তবে উনি বিপক্ষে থাকলেও ভাগ্য আমার পক্ষেই ছিল। না হলে কোচ ওরকম কথা বলে দেওয়ার পরও আমি সেঞ্চুরি করে বেরোলাম কী করে?

প্রশ্ন : জবাব ব্যাট হাতেই দিয়েছিলেন। তবু জানতে চাই, সেদিন সেঞ্চুরি করে সিডন্সকে মুখেও কি দু-একটা কথা শুনিয়ে দেননি?

ইমরুল : আসলে ওই কথা বলার পর জেদ চেপে গিয়েছিল। ওই সেঞ্চুরি করার পর আমার মুখে হাসি দেখেছেন, এমন দাবিও কেউ করতে পারবেন না। সেঞ্চুরি করে আমি ব্যাটটা সিডন্সের দিকেই তুলেছিলাম। এরপর মাঠ থেকে হোটেলে ফেরার সময় অবশ্য তিনি ভালো ভালো কিছু কথা আমাকে বলেছিলেন।

প্রশ্ন : তখন পাল্টা জিজ্ঞেস করেননি যে কেন আপনার ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন তিনি?

ইমরুল : আসলে ওরকম কথা তো শুধু জেমি সিডন্সই বলেননি। অনেক কোচই বলেছিলেন। আমাকে প্রতিবার নিজেকে প্রমাণ করে দলে ফিরতে হয়েছে। পরে আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চাওয়া কোচেরাই আবার প্রশংসা করেছেন।

প্রশ্ন : চন্দিকা হাতুরাসিংহেরও তো সেই কোচদের দলেই পড়ার কথা।

ইমরুল : আমি তাঁকে দোষ দেব না। দোষটা আমি নিজেকেই দেব। উনি আসার পরই আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিলাম। আমি ওই সময়ে ভালো কিছু করে দেখাতে পারিনি। এটা স্বাভাবিক, একজন কোচ এসেই ক্রিকেটারদের দেখেন আগে। এক দিন, দুই দিন, তিন দিন দেখার পর যখন দেখেন পারফর্ম করতে পারছে না, তখন ধারণা বদলে যায়। আমাকে নিয়েও তাঁর ‘ফার্স্ট ইমপ্রেশন’ ভালো ছিল না।

প্রশ্ন : তা বর্তমান হেড কোচের মন পেতে শুরু করলেন কবে থেকে?

ইমরুল : গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে দেড় শ করার পর থেকেই। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমার নাকি এমন সামর্থ্য ও প্রতিভা আছে, যা বাংলাদেশ দলের অনেক খেলোয়াড়েরই নেই। আসলে দুনিয়াটাই এরকম যে কেউ ভালো করলে তার কাছেই সবাই ছুটে যায়।

প্রশ্ন : কিন্তু ভালো খেলার পরও সব কিছু বোধ হয় আপনার পেছনে ছোটেনি। এই যে বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় আপনার কোনো চাহিদাই তৈরি হয়নি।

ইমরুল : আসলে ওপরওয়ালা সবাইকে সব কিছু দেন না। হয়তো আমার জন্য এর চেয়েও ভালো কিছু তিনি রেখেছেন। যার জন্য এটা দেননি। এসব না পেয়েও তো দিব্যি ভালো আছি। কই, আমার ক্ষতি তো কিছু হচ্ছে না!

প্রশ্ন : এ জন্য মনের কোণে দুঃখ উঁকিঝুকি দেয়নি কোনো দিন?

ইমরুল : এটা ঠিক যে অন্যদের মতো বিজ্ঞাপন করতে পারিনি বলে আমার পাবলিসিটি কম। এসব ভেবে একটা সময় খুব খারাপও লাগত। তবে এখন বুঝি এসব ভাবা অর্থহীন। রাস্তায় আমাকে দেখে কে সেলফি তুলল আর কে তুলল না, এসব ভেবে এখন আর আক্রান্ত হই না। আমার জবাবদিহি নিজের কাছেই। ক্যারিয়ার শেষে যদি নিজেকে বলতে পারি যে হ্যাঁ, আমি দলের জন্য অবদান রাখতে পেরেছি, তাহলেই আমি খুশি। দেশের জন্য অবদান রাখাটাই আসল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের যত বড় অর্জনই বলুন না কেন, বেশির ভাগগুলোতেই আমার অবদান আছে। এটা আমি গর্ব করেই বলতে পারি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার ওয়ানডে জেতার দিনও আমার রান ছিল। ২০১১ বিশ্বকাপের জয়েও আমার রান আছে। বাংলাদেশ বড় ম্যাচ জিতলে আমার অবদান কিছু না কিছু থাকেই। মানুষ হয়তো এই ব্যাপারগুলো মনে রাখেনি। না রাখুক, আমি তো ভেবে শান্তি পাই।

প্রশ্ন : বারবার বাদ পড়তে পড়তে নিজের মানসিকতা বদলেছেন। বিশেষ কিছু কি করেছেন?

ইমরুল : এই সুযোগে ভিভ রিচার্ডসের কথা না বললেই নয়। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে বার্বাডোজে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ওনার কিছু কথাই বদলে দিয়েছিল আমার মনোজগৎ। ২৮ বছর বয়স শুনে বলেছিলেন, আমার খেলা খুলতে শুরু করবে ৩০-এর পর। এর আগে যা খেলব, সেটা বোনাস। তাঁর ওই কথাগুলো এখন প্রতিটা পদক্ষেপে আমি মনে রাখি। সেই অর্থে এখন আমার সবে শুরু। ভালো খেলার সঠিক সময়। সাঙ্গাকারার ক্যারিয়ারের সেরা সময় কিন্তু ৩৩-র পরই এসেছিল। তামিম ইকবালের দিকেই তাকান না। একটা সময় কী ব্যাটিং করত আর এখন কী করে! কী সেনসিবল ব্যাটিং করে! বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ওর ব্যাটিংও পূর্ণতার দিকে যাচ্ছে। হ্যাঁ, মেহেদী মিরাজ এখন ভালো খেলছে। আমি অবশ্যই ওর প্রশংসা করি। তবে সে কিন্তু এখন অনেক কিছু না বুঝেই ভালো খেলছে। এই মিরাজেরই যখন ২৮-৩০ বছর বয়স হবে, তখন সে চাইলেই মাঠে যা ইচ্ছা তা করতে পারবে, যেটা এখন সাকিব পারে। সাকিব কালকেও (ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনের বিকেলে) তা করে দেখিয়েছে।-কালের কন্ঠ
১ নভেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে