মঙ্গলবার, ০১ নভেম্বর, ২০১৬, ০৩:১২:০৭

বাঘ তো ছিলই, এসে গেছেন বাঘিনীরাও

বাঘ তো ছিলই, এসে গেছেন বাঘিনীরাও

নাইর ইকবাল: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিন মাঠের একটি কোণে দৃষ্টি যাচ্ছিল সবারই। একদল বাঘ বোধ হয় সোজা সুন্দরবন থেকেই শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারি দখল করে বসেছিল। হলুদের মধ্যে কালো ডোরাকাটা শরীর। কখনো কখনো উত্তুঙ্গ হুংকার। মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, ইমরুল কায়েসরা মাঠে খেলবে আর গ্যালারিতে বাঘেরা থাকবে না—এটা তো অসম্ভব এক ব্যাপার। কী আশ্চর্য, সেদিন প্রথমবারের মতো বাঘেদের সঙ্গে দেখা মিলল বাঘিনীদেরও!

টেলিভিশন ক্যামেরা বারবারই মুখ ঘুরাচ্ছিল বাঘ-বাঘিনীর দলটির দিকে। ক্যামেরা ঘুরতেই আবার হুংকার। জো রুট ফেললেন, ফেললেন বেন ডাকেট—ডাকেটের ক্যাচটি যেন হুংকারের ভয়েই ফেলে দেওয়া! রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হুংকার বলে কথা! তা না হলেও বাংলাদেশ দলকে প্রতি মুহূর্তে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার কাজটি দারুণভাবে করেছেন এঁরা।


হঠাৎ এতগুলো বাঘিনীর আগমন ক্রিকেট মাঠে! এটি একটি নতুন ব্যাপারই। ক্রিকেট মাঠে মেয়েদের আসাটা নতুন কিছু নয়, কিন্তু একেবারে বাঘের পোশাকে মাঠে আসার ব্যাপারটি সত্যিই নতুন। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সত্যিই এ দেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। দেশের ক্রিকেটের দুই ‘বাঘ’ সমর্থক, যাঁরা ‘টাইগার’ শোয়েব আর ‘টাইগার’ মিলন নামে পরিচিত, তাঁরা নিশ্চয়ই এমন দৃশ্যে খুশিই হয়েছেন। কত কাঠখড় পুড়িয়ে শুরু করেছিলেন তাঁরা। শুরুর দিকে কত বাঁকা চাহনি এমন বেশের কারণে! কিন্তু আজ পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।

বাঘের সাজে এখন আর কাউকে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মুখোমুখি হতে হয় না। দেশের ক্রিকেটারদের প্রেরণা জোগানোর যেন এটাই সবচেয়ে ভালো উপায়! যাতে সানন্দে অংশ নিচ্ছেন মেয়েরাও।

সেদিনের বাঘিনী দলের সকলেই কলেজ-পড়ুয়া ছাত্রী। ক্রিকেটের পাঁড় সমর্থক। সাকিব-মাশরাফি-মুশফিকদের পাগল ভক্ত। দেশের ক্রিকেট তো এঁদের আবেগেরই অংশ। তবে মাঠে বসে অনেকবার খেলা দেখলেও জ্যোতি, মিম, রিমা, স্বপ্না, শরিফা, প্রীতিরা কোনো দিন ভাবেননি, রীতিমতো বাঘের পোশাক পরে, বাঘের ডোরাকাটা মুখে এঁকে কোনো দিন গ্যালারিতে বসবেন। ৩০ অক্টোবর, রোববার, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনটি ছিল জ্যোতি-মিম-রিমা-স্বপ্নাদের কাছে রীতিমতো স্বপ্নের এক দিন।


সুমন রেজা নামের এক তরুণ পুরো ব্যাপারটির মূল উদ্যোক্তা। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই সুমন মাঠে আসা মেয়েদের শিক্ষক। রাজধানীর মিরপুরের একটি কোচিং সেন্টারের শিক্ষক সুমন রেজাই মেয়েদের পরিবারকে রাজি করিয়ে বাঘের পোশাকে মাঠে নিয়ে গেছেন। কিছু কাঠখড় পোড়াতে তো হয়েছেই।

ক্রিকেটের পোকা বললেও কম বলা হয় সুমনকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিসংখ্যানে স্নাতক সুমন অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্তঃ প্রাণ। এমনই যে ২ শ টাকার টিকিট ৫ হাজার টাকা দিয়েও কিনে খেলা দেখতে যাওয়ার রেকর্ড আছে। দল বেঁধে খেলা দেখতে দেখতেই বাঘ সাজার পরিকল্পনা এই সুমনের। অনেক ম্যাচেই তিনি নিজে বাঘ সেজে মাঠে গেছেন। হয়তো শোয়েব-মিলনের দিকে ​সবার চোখ পড়ে বলে আলাদা করে নজর কাড়েননি। তবে সেদিন দল বেঁধে একসঙ্গে এতগুলো ‘বাঘ-বাঘিনী’, গ্যালারিতে চোখ গেল সবার।


বাঘিনী দলের অন্যতম জ্যোতি বলল, ‘কোচিংয়েই সুমন স্যার আমাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমরা কে কে যেতে চাই! আমরা কয়েকজন মেয়ে হাত তুলি। তিনি বলেন, বাঘ সেজে যেতে হবে কিন্তু! আমরাও রাজি হই। আমাদের অবশ্য পরিবারকেও রাজি করাতে হয়েছে। স্যার রাজি করিয়েছেন সবার পরিবারকে।’

জ্যোতি আগেও মাঠে গেছেন। কিন্তু বাঘ সেজে যাওয়াটা আলাদা রোমাঞ্চই তৈরি করেছে তার মধ্যে। একই ব্যাপার মিম, রিমা, স্বপ্নাদেরও। প্রত্যেকেই মাশরাফি বিন মুর্তজার ভক্ত। বাংলাদেশের জয়ের সঙ্গে তুলনীয় কিছুই নেই, তারপরেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ে মাশরাফি মাঠে খেললে বেশি খুশি হতেন বলেই জানালেন।

সুমন রেজার দলটা অনেক বড়ই। নাঈম, খোকন, ইফতি, সোহেল, রিয়াজ, মেহেদী, সবুজ, মাসুদ, তোফাজ্জেল, সুলভ, রাসেল, ইমরান—সবাই গ্যালারির বাঘ। এদের সঙ্গে সেদিন যোগ হয়েছিল ছয় বাঘিনী। মাঠের বাঘেরা যেমন শক্তি অর্জন করছে, ঠিক তেমনি শক্তি অর্জন করছে গ্যালারির বাঘেরাও।

বাংলাদেশের এই ক্রিকেট সমর্থকেরা এখন আলাদা করে নজর কাড়ছেন বিশ্ব সংবাদমাধ্যমেরও। যেমনটা পাচ্ছে বাংলাদেশের ​​ক্রিকেটও। ক্রিকেটার-সমর্থক হাতে হাত রেখেই তো এগিয়ে নিচ্ছেন বাংলাদেশ দলকে।-প্রথম আলো
১ নভেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে