মঙ্গলবার, ০১ নভেম্বর, ২০১৬, ০৬:১২:৩৬

মারাদোনা মানেই ফুটবল মাঠে অবিশ্বাস্য কিছু!

মারাদোনা মানেই ফুটবল মাঠে অবিশ্বাস্য কিছু!

গ্লেন মুর : গত কয়েকবছর ধরেই বিতর্কের আগুনটা ধিকিধিকি জ্বলছে। এবং বলাই বাহুল্য, ক্রমশই তার গনগনে আঁচটা বেড়েই চলেছে। মাঝে মাঝে সত্যিই বেশ অবাক লাগে। আরে, ওরা তো একই দেশের মানুষ। জন্ম, বেড়ে ওঠা একই ভূখন্ডে। তারচেয়েও বড় কথা, দুজনে দুই ভিন্ন প্রজন্মের প্রতিনিধি। তারপরেও এত তুলনা-‌ প্রতিতুলনা?‌ ফুটবল দেবতার দুই সেরা বরপুত্রের অনুরাগীদের মধ্যে এত আকচা-‌আকচি?‌

দেড় দশক আগেও পেলে বনাম মারাদোনা নিয়ে বিশ্ব ফুটবল তোলপাড় হত। এখন ঠিক এমনভাবেই দিয়েগোর সঙ্গে কারণ-‌ অকারণে লড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয় লিওনেল মেসিকে। কে কোথায় এগিয়ে, কার কীর্তি কত বেশি ঝলমলে খামোখা এসব নিয়ে দুই আর্জেন্টিনীয়কে দাঁড়িপাল্লায় তোলা অনেকের কাছেই বেশ অসহ্য মনে হয়। তবুও, কিছু করারও নেই। বিশ্ব ফুটবলের চিরকালীন দুই মহাতারকা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঠিক এভাবেই আপামর ফুটবল ভক্তদের কাছে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকে যাবেন।

আমি দিয়েগো মারাদোনার একান্ত অনুরাগী। তাই স্পষ্টই বলে রাখছি, এই প্রতিবেদনে মারাদোনার প্রতি পক্ষপাক্ষিত্ব বারবারই প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং সেজন্য বিন্দুমাত্রও অপরাধবাধ নেই আমার। ভবিষ্যতে লিওনেল মেসি হয়ত এই গ্রহের সেরা ফুটবলার হিসেবে জনমানসে বিরাজ করবেন। তবে, আপাতত আমার মন আর মণণ জুড়ে শুধুই দিয়েগো মারাদোনা!‌ সাম্প্রতিককালে বার্সিলোনার মেরুন-‌ নীল জার্সি গায়ে মেসির পরের পর ম্যাচ জেতানোর কথা সবাই তুলে ধরতে পারেন। আমার যুক্তি, এব্যাপারটায় ‘‌এল এম টেন’‌-‌এর হয়ে গলা ফাটানোর আগে ভেবে দেখুন মেসি যে ক্লাবের হয়ে খেলেন তার তূণে মজুত অস্ত্রগুলো ঠিক কতটা শানিত!‌ সতীর্থ হিসেবে কাদের কাদের পেয়েছেন শুধু একবারটি ভাবুন!‌ জাভি, ইনিয়েস্তা থেকে শুরু করে এখনকার সুয়ারেজ, নেইমার!‌

এমন একটা দল যারা আর্জেন্টিনার অধিনায়ককে ছাড়াই দিনের পর দিন দিব্যি আলোর মঞ্চে নিজেদের তুলে আনতে পারে!‌ আরেকটা ব্যাপার খেয়াল রাখতে হবে বার্সার জার্সিতে মেসিকে যতটা বিধ্বংসী লাগে আর্জেন্টিনার আকাশী-‌ নীল জামায় ততটা কি?‌ আমার তো এব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে!‌ কয়েক বছর আগেও তো জাতীয় দলের জামায় মেসির ধারাবাহিক অনুজ্বল থাকাটা ফুটবল গ্রহে রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছিল। এখন অনেকে বলতে পারেন, ইদানীংকালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বা ইউরোপের সেরা লিগগুলো মানের নিরিখে বিশ্বকাপের চেয়েও এগিয়ে। তা সত্বেও বিশ্বকাপের গরিমা খর্ব একটুও খর্ব হয়েছে একেবারেই মেনে নিতে রাজি নই।

বিশ্বকাপের প্রসঙ্গ আলোচনার টেবিলে উঠে এলে বেঁটেখাটো লোকটার ছবি এতটাই চোখ ধাঁধিয়ে দেয় যে আপনি না চাইলেও সেই তীব্র ঝলকে চোখে হাত চাপা দিতে বাধ্য হবেন। একটা সাধারন, নিতান্তই মামুলি একটা দলকে নিজস্ব ঔজ্বল্যে আলোকিত করে কোন উচ্চতায় তুলে দিয়েছিলেন মারাদোনা, ছিয়াশির বিশ্বকাপ তার জ্বলজ্যান্ত প্রমান। আমি নিজে ইংরেজ।

এবং লন্ডনের একটা জনপ্রিয় দৈনিকে কর্মরত। তাই বোধহয় আরও ভালো বুঝতে পারি, মারাদোনার সম্পর্কে গড়পড়তা ইংরেজদের অসূয়াটা কী ভীষনই প্রবল। নেপথ্যে?‌ নতুন করে বলার দরকার আছে?‌ সেই ‘‌হ্যান্ড অব গড’‌!‌ মেক্সিকো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের দোদ্দটা বাজিয়ে ছেড়েছিল যে গোল!‌ চিনচিনে রাগটা তাই রয়েই গিয়েছে।

দিয়েগোর সেই ‘‌গেমসম্যানশিপ’‌-‌কে যদি উপেক্ষা করতে পারেন কোনও ইংরেজ (‌‌ বোধহয় তা সম্ভব নয়!‌)‌‌, তাহলে কিন্তু সকলেরই উচিত বেঁটে লোকটার সামনে হাঁচু মুড়ে বসে কূর্ণিশ জানানো। ভাবুন তো, শুধুই জাতীয় দল?‌ ইতালির সিরি-‌ এ’‌তে নাপোলির মত অখ্যাত, প্রায় অনামা একটা ক্লাবকে যেভাবে আলোর উঠোনে এনে দিয়েগো দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন তারজন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। আর সত্যি কথা বলতে, নাপোলিতে মারাদোনা পর্ব সম্পর্কে চিরকাল ফুটবল বিদগ্ধরা আবেগাপ্লুতই থাকবেন।

সেটা বোধহয় অস্বাভাবিকও কিছু নয়। প্রায় একার কাঁধে নাপোলিকে বিশ্বের দরবারে এনে তুলেছিলেন মারাদোনা। নাপোলির ইতিহাসে প্রথমবার ঘরোয়া লিগ খেতাব জিতেছিল দল ১৯৮৬-‌’‌৮৭ মরুশুমে। তার পরের বছর আবারও ‘‌স্কুডেটো’‌ পেল নাপোলি। সঙ্গে এবার উয়েফা কাপও। যা নাপোলির কর্তারা তার আগে কখনও কল্পনাও করতে পারতেন না। মারাদোনাই একা সম্ভব করেছিলেন এগুলো। নাপোলি থেকে ওঁর বিদায়ের পর এতবছরেও নাপোলি আর ট্রফির মুখ দেখল না!‌

মেক্সিকো বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ১৪ টা গোল করেছিল যারমধ্যে মারাদোনা অন্তত দশটা গোলের পিছনে অবদান রেখেছিলেন। নিজে করেছিলেন ৫ টা। ফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে জোর্গে বুরুচাগাকে বাড়ানো সেই সোনার পাসটা এখনও চোখে লেগে রয়েছে!‌ এবং ভুলে যাবেন না, গোটা টুর্নামেন্টে মারাদোনাকে খেলতে হয়েছিল হাঁটুতে পাওয়া একটা পুরনো চোটকে সঙ্গী করে। অবিশ্বাস্য!‌

হ্যাঁ, দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনার কীর্তিকলাপ দেখে সাধারন মানুষের এমন প্রতিক্রিয়া হওয়াটাই বোধহয় স্বাভাবিক। আমরাও হাঁ করে শুধু গিলে গিয়েছি ওঁকে আর ভেবেছি এমনও সম্ভব?‌ তবে, এখন বারবারই মনে হয় মারাদোনার মত মানুষকে দেখে অবাক হওয়াটা আসলে নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছুই নয়!‌ ফুটবল মাঠে শুধু বিপক্ষ ডিফেন্ডারদেরই নয়, আসলে বারবার তিনি নির্বোধ প্রমান করে ছেড়েছেন আমাদেরকেও।     আজকাল

০১ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে