শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:১৭:৪৪

রনিকে একাদশে নেয়নি বরিশাল, হৃদয় ভাঙ্গা কষ্টে যা বললেন

 রনিকে একাদশে নেয়নি বরিশাল, হৃদয় ভাঙ্গা কষ্টে যা বললেন

স্পোর্টস ডেস্ক: এবারের বিপিএলে নিজেদের প্রথম ম্যাচের আগে ওয়ার্মআপে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। একাডেমি মাঠে অনুশীলন শেষে সেখানে উঁকি বরিশাল বুলসের ক্রিকেটারদের। ওই ঝাঁকের মধ্যেও একজনকে ঠিক আলাদা করে খেয়াল করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। চিৎকার করে বলেন, ‘আমাদের দলের সবাই তোকে মিস করছে।’ আসহার জায়েদি, মারলন স্যামুয়েলসের মতো বিদেশি ক্রিকেটাররাও একই কথা বলে যান যেচেপড়ে। পিঠ চাপড়ে।

এর ঠিক দিন দুয়েক পরের ঘটনা। শেরেবাংলা স্টেডিয়াম চত্বরে বিসিবির আয়োজনে বিশাল মেজবান। ক্রিকেটারদেরও নিমন্ত্রণ করা হয়েছে, যে নিমন্ত্রণপত্রে পরিচয় হিসেবে লেখা, ‘সাবেক ক্রিকেটার’। ভুল! অবশ্যই ভুল। তবে তাতে প্রতীকী ব্যঞ্জনা খুঁজে নিতে চাইলে কাউকে দোষ দেওয়ার উপায় নেই।

এক বিপিএল থেকে আরেক বিপিএল আসতেই যে সেই ক্রিকেটারের নাম বাংলাদেশ ক্রিকেটের সদর-অন্দরে বিস্মৃত অক্ষরে লেখা হওয়ার জোগাড়—আবু হায়দার!

মাশরাফি-জায়েদি-স্যামুয়েলসরা তাঁকে মনে রেখেছেন। না রেখে উপায় আছে! গতবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বড় ভূমিকা তো ওই বাঁহাতি পেসারের! ১২ ম্যাচে ১৫.০৫ গড়ে, ৬.৯১ ইকোনমিতে ২১ উইকেট শিকারে। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ শিকারির তালিকায় কেভিন কুপারই কেবল হায়দারের ওপরে। আর শুধু তো উইকেট সংখ্যা নয়, তাঁকে মনে রাখতে হবে গত বিপিএলের পোস্টার হয়ে যাওয়া সেই ছবিটির কারণেও। যেখানে হায়দারের সুইঙ্গিং ইয়র্কার সামাল দিতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়ে যান রংপুর রাইডার্সের লেন্ডল সিমন্স।

বছর ঘুরে আরেক বিপিএল আসতে হায়দারের ক্যারিয়ার ‘মুখ থুবড়ে’ পড়েছে, অমনটা হয়তো বলা যাবে না। তবে আগের আসরের সাফল্যে জাতীয় দলে ঢোকা এই বাঁহাতি পেসারকে এবার যখন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ধরে রাখে না, একটু খটকা লাগে। আর নতুন দল বরিশাল বুলসও প্রথম ম্যাচে তাঁকে একাদশের বাইরে রাখলে ধোঁয়াশার কুয়াশা হয় ভারী। আবু হায়দার কি তবে এক বিপিএলের বিস্ময় হয়েই থাকবেন? যাঁর মাঝে ছিল ধ্রুবতারার প্রতিশ্রুতি, তিনি কি হয়ে রইবেন উল্কাপাতের উদাহরণ?

আবু হায়দায় হাসেন—কষ্টের কাষ্ঠহাসি। যেন হৃদয় ভাঙ্গা কষ্ট আর আক্ষেপ তার। হয়তো মনশ্চক্ষে গত এক বছরের চলচ্চিত্রের চালচিত্র দেখে ফেলেন মুহূর্তে। হাহাকার ছড়িয়ে বলেন এরপর, ‘আসলে গত বিপিএলে যা যা করেছি, সব পক্ষে গেছে। বোলিং করলেই পেয়েছি উইকেট। দলও হয় চ্যাম্পিয়ন। এরপর তো জাতীয় দলে ঢুকে পড়ি। এখন আবার বিপিএলে নতুন দলে প্রথম ম্যাচে একাদশে থাকতে পারি না। আসলে এই ছোট্ট ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন অনেক কিছু দেখে ফেলেছি।’ সেই উত্থানের উত্তুঙ্গ চূড়া নিঃসন্দেহে জাতীয় দলে খেলা। বিপিএল শেষের মাসখানেক পরই বাংলাদেশের জার্সিতে পথচলা শুরু হায়দারের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে খেলেন দুই ম্যাচ। এরপর ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপ ফাইনাল। সেখানে এক ওভারে ১৪ রান দেওয়ার পর অধিনায়ক আর তাঁকে বল দিতে সাহস করেননি। তবু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপগামী বিমানে জায়গা হয়। বাছাই পর্বের ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে ছিলেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বোলিংয়ের সুযোগ পাননি। ওমানের বিপক্ষে সে সুযোগ পান। কিন্তু দুই ওভারে ১৫ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য। ব্যস, মূল পর্বে তাই আর একাদশের বিবেচনায় আসেননি। এই রোলার-কোস্টার ভ্রমণে এখন তো হায়দারের বিবেচনাবোধ বলে অন্য কথা, ‘জাতীয় দলে বোধহয় একটু তাড়াতাড়িই খেলে ফেলেছি।’

কেন? মুস্তাফিজুর রহমানের মতো তাঁর বয়সভিত্তিক দলের সতীর্থ তো ঠিকই বাংলাদেশের জার্সিতে মাঠ মাতাচ্ছেন। প্রতিপক্ষ কাঁপাচ্ছেন। কিন্তু মুস্তাফিজের সঙ্গে তো সবার তুলনা চলে না। ঠিক যেমনি বিপিএলের সঙ্গে জাতীয় দলের তুলনায় পার্থক্যটা বুঝছেন হায়দার, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট আর জাতীয় দলে খেলা এক নয়। বাংলাদেশের খেলার সময় ১৬ কোটি মানুষ তাকিয়ে থাকে মাঠের ১১ জনের দিকে। সেটিই আমি বোধহয় ঠিকঠাক সামলাতে পারিনি।’ জাতীয় দলে নিজের ভুলগুলোও এখন শনাক্ত করতে পারছেন তিনি, ‘জাতীয় দলে অবশ্যই ভুল ছিল। ওখানে আমি একটু যেন ভয়ে ভয়ে থাকতাম। এর বাইরে স্কিলের তেমন কোনো সমস্যা না। তবে মানসিকভাবে শক্তপোক্ত না হলে মাঠে স্কিলের প্রদর্শনী করা কঠিন। আমি যেমন ভালো ইয়র্কার মারতে পারি। কিন্তু জাতীয় দলে গিয়ে মনে হয়, ইয়র্কার করতে গেলে যদি হাফ ভলি হয়ে যায়! এ সমস্যা কিন্তু বিপিএলে ছিল না। সেখানে নির্ভার হয়ে ভয়হীন ক্রিকেট খেলতে পেরেছি।’

হায়দারের এখন লক্ষ্য সেই ডরভয়হীন ডাকাবুকো ক্রিকেট খেলা। আর নতুন দল বরিশাল বুলসে নিজেকে উজাড় করে দেওয়া, ‘কুমিল্লার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমার কিছু অবদান রয়েছে। ওরা না রাখায় তাই একটু খারাপ লেগেছে। তবে আমি পেশাদার ক্রিকেটার। এসব মেনে নিয়েই এগোতে হবে। সব কিছু শুরু করছি শূন্য থেকে। আর বরিশাল আমার ওপর যে আস্থা রেখেছে, তার প্রতিদান দিতে চাই। প্রথম ম্যাচে একাদশে না থাকলেও সামনে নিশ্চয়ই অনেক সুযোগ আসবে।’ আর মনের ঘুলঘুলি দিয়ে উত্তুরে হাওয়ার মতো আসা জাতীয় দলের ভাবনাকেও আপাতত দূরে সরিয়ে রাখতে চান তিনি, ‘এই মুহূর্তে জাতীয় দল নিয়ে ভাবছি না। আমি বরং আবার আগের বিপিএলের মতো হতে চাই। যেখানেই খেলি পারফর্ম করতে চাই। তাহলে জাতীয় দলে আবার হয়তো সুযোগ পাব।’

না হয় আবু হায়দারের নাম এখন বিস্মৃত অক্ষরে লেখা। কিন্তু তা তো আর হায়ারোগ্লিফিকস হয়ে ওঠেনি! ফর্মের পাঠোদ্ধার করতে পারলেই আবার তা জ্বলজ্বলে হয়ে উঠবে সবার সামনে। ঠিক ওই গতবারের বিপিএলের মতো।

শূন্য থেকে নতুন শুরুতে তা কি পারবেন না আবু হায়দার?-কালেরকন্ঠ
১১ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে