স্পোর্টস ডেস্ক: এমন দর্শক দেশের প্রতিটি শহরে আছে এমন দর্শক দেশের প্রতিটি শহরে আছে। নিউজিল্যান্ড এর জনসংখ্যা কত? ৪৬ লাখের মত হবে। আমাদের ঢাকা শহরে থাকা মানুষের সংখ্যার অর্ধেকেরও কম মানুষ নিয়েই সেই দেশ। সেই নিউজিল্যান্ড এর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠ এর সংখ্যাটা হচ্ছে ১৫।
অস্ট্রেলিয়ায় একটা শহর আছে নাম ডারউইন; খুব ছোট্ট শহর এবং ছবির মত সুন্দর। উত্তর অস্ট্রেলীয় এই শহরে মানুষ থাকে মোটে ১ লক্ষ ৩০ হাজারের মত। অস্ট্রেলিয়ায় যে ২১ টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু আছে তার একটি এই ডারউইনে।
যদি ভুল না করে থাকি বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় একটা টেস্ট ম্যাচ এর হোস্ট ছিল এই ডারউইন। ২০০৩ সালের সেই ম্যাচে বাংলাদেশ তারকায় ঠাসা অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারে ইনিংস ও ১৩২ রানে।
এবার একটু কাছাকাছি আসি, ভারত। এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয়েছে এমন মাঠের সংখ্যা প্রায় ৪৬ টা যার মধ্যে ২২ টা আবার টেস্ট ভেন্যু। একটু খুব চলতি তথ্য দেই, বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ড ক্রিকেট টিম সিরিজ শেষে গেছে ইন্ডিয়ায়, সেখানে তারা টেস্ট- ওডিআই- টি-২০ মিলিয়ে মোট ম্যাচ খেলবে ১১ টা। এখন এই ১১ ম্যাচের ভেন্যুর নাম বলা যাক- রাজকোট,বিশাখাপত্তম,মোহালি,মুম্বাই,চেন্নাই,পুনে, কটক,কলকাতা,কানপুর,নাগপুর,ব্যাঙ্গালুরু। মানে এগারো ম্যাচ, এগারো ভেন্যু। ইংল্যান্ড যদি এগারো ম্যাচ না খেলে ২২ টা ম্যাচ খেলতো তাতেও ভারত ২২ টা মাঠ রেডি করতে পারতো!
ভেন্যু লিস্টের মজার ব্যাপারটা হচ্ছে সেখানে দিল্লির নাম নেই, হায়দারাবাদের নাম নেই; ৫০ হাজার লোক ধরতে পারে এমন মাঠ আহমেদাবাদ এর নাম টাও নেই!
এবার বাংলাদেশ।
ক্রিকইনফোর তথ্য মতে বাংলাদেশে ক্রিকেট ভেন্যু ৮ টি। যার মধ্যে চট্টগ্রামের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম এবং বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের নাম আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজনে অক্ষম এই দুটি মাঠ বাদ দিলে মাঠের সংখ্যা ৬; যার মধ্যে শেরে বাংলা আর ফতুল্লাহ কে ঢাকার মধ্যের স্টেডিয়াম হিসাবেই ধরা যায়।
বগুড়ায় আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়না অনেক দিন আর ভবিষ্যতে হবে কি না তাতে সংশয় আছে। কক্সবাজার স্টেডিয়াম কে এখনো হিসাবের মধ্যে আনার সময় আসেনি বোধ হয়। সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়াম বাংলাদেশের সবচাইতে সুন্দর ভেন্যু হলেও এতে টেস্ট খেলাটাই হয় নাই। সেই হিসাবে দেশের ক্রিকেট টিকে আছে মোটে তিনটি শহরের চার টি মাঠে। মিরপুর , ফতুল্লাহ, চট্টগ্রাম, খুলনা।
দীন্যতা কি চোখে পড়ে? বাংলাদেশে কোন ট্যুর প্ল্যান রেডি করা সম্ভবত সবচাইতে সহজ কাজ। কারন ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম অথবা খুলনা কে জুড়ে দিলেই হয়। কিন্তু এই দেশের ১৬ কোটি লোক কে এক করে দেয়ার জিনিস ওই ক্রিকেটটাই।
কি আশ্চর্য! দেশে যে আরো শহর আছে বিসিবি তা জানে না মনে হয়। এই জায়গায় জিম্বাবুয়ে আর আমাদের বিশাল মিল। ওরা হারারে আর বুলাওয়ে ছাড়া নড়তে পারে না আর আমরাও এই ঢাকা - চট্টগ্রাম থেকে নড়তে পারি না। ইংল্যান্ডের সেরা ভেন্যু হচ্ছে লর্ডস, আর সেই লর্ডসে কোন ম্যাচ ই হবে না ২০১৭ এর চাম্পিয়ান্স ট্রফির! এতে লর্ডস এর মান ইজ্জত ধুয়ে যায় না।
নিউজিল্যান্ড এর নেলসন শহরের ক্রিকেট মাঠে বিশ্বকাপ ম্যাচ হয় যেই শহরে থাকে মোটে ২০ হাজার মানুষ আর আমাদের দেশের ১৭ কোটি মানুষ ক্রিকেট দেখে চার টা মাঠে! নেলসন শহরটা কে চিনতো? দরকারটাই বা কি? কিন্তু ক্রিকেট চিনিয়েছে। এখানে ব্র্যান্ডিং হচ্ছে; শহরের ব্র্যান্ডিং, দেশের ব্র্যান্ডিং ।
বাংলাদেশের রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ বিভাগে বর্তমানে ক্রিকেটের কোন আন্তর্জাতিক মানের মাঠ আছে কি? থাকলেও তাতে খেলা হয় কি? কিংবা ভবিষ্যতে হবার সম্ভাবনা আছে কি? সবগুলির উত্তর নেতিবাচক।
বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটিতে ক্রিকেট সমান জনপ্রিয় হলেও দেশের বিশাল অংশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয় না। বিসিবি বলতে পারে অবকাঠামো নেই। সেটা দীনতা; কিন্তু সেই দৈন্য ঘোচানোর কোন চেস্টা বিসিবির, এন এস সি বা সরকার কারোও নেই।
আচ্ছা সিলেটে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলে সমস্যা কোথায়? বরিশালে মাঠ কি তৈরী করা যায় না? কিংবা রাজশাহীতে? একটু ঘষে মেজে নিলেই হয়। কিন্তু বিসিবি নড়বে না। তারা ঢাকা- চিটাগং হাইওয়েতে থাকবে একটু বিপদে পড়লে খুলনায় যাবে। এতে বিসিবির পয়সা বাচে, ঝামেলার হাত থেকেও কিছুটা বাচা যায় হয়তো কিন্তু ক্রিকেটটা বাচে কি?
১৬ কোটি ক্রিকেট পাগল মানুষ এর দেশের প্রধান মাঠ দর্শক বইতে পারে ত্রিশ হাজারেরো নিচে! সেই দেশের মানুষ ভোররাত লাইন ধরে দুপুরে টিকেট পেয়ে ম্যাচ দেখতে মাঠে ঢুকেছে এই ঘটনা অনেক ঘটেছে। দর্শকদের অধিকার আছে আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখার কিন্তু বিসিবির এ ব্যাপারে ভাবার সময় নেই সরকারের ও নেই।
তাদের ভাবনায় বিপিএল, বিদেশী স্টাফ, ক্লাব রাজনীতি! এই দেশটা কে দুনিয়া দেখুক না একটু, সেটা ক্রিকেট ভেন্যুর মাধ্যেমেও তো হয়। এই যেমন আমি নেলসন, ডুনেডিন কিংবা সেইন্ট কিটস এন্ড নেভিস কে চিনি এই ক্রিকেট ভেন্যুর জন্যে। তেমন করে বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী কে কোন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী চিনলে ক্ষতি আছে কি কোন?
সারা দেশের কোটি কোটি লোক ক্রিকেটটা নিজ শহরে দেখার অধিকারটুকুও কি পাবে না?
একটা ঘটনা বলে শেষ করি, আমার এক বন্ধু কয়েকদিন আগে ফোন করে বললো- সে চিটাগাং যেতে চায় ইংল্যান্ড - বাংলাদেশের ম্যাচ দেখতে ( ওয়ানডে)! সে থাকে ময়মনসিংহে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কেন তার চিটাগাং যেতে হবে? ক্রিকেট কেন তার কাছে যাবে না? এমন ক্রিকেটপাগল লোকে এই দেশ ভরা কিন্তু বিসিবির মতে তিন শহরেই ক্রিকেট চলে আর বাকি শহরে ডাংগুলি।
ক্রিকেট বোর্ডের প্রতি অনুরোধ, আপনারা একটু ঘুম থেকে জাগুন প্লিজ। ঢাকা- চট্টগ্রাম- খুলনা ছাড়াও দেশে আরো শহর আছে, আর সেখানে লক্ষ লক্ষ ক্রিকেট পাগল মানুষ বুকে হাহাকার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, নিজ শহরে ক্রিকেট না দেখার হাহাকার।-খেলাধুলা
১৮ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর