সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৮:৫২:৩১

শুধু জয়ই নয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ড গড়ার জন্যও লড়ছেন মাশরাফিরা

শুধু জয়ই নয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ড গড়ার জন্যও লড়ছেন মাশরাফিরা

স্পোর্টস ডেস্ক: নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ড গড়ার জন্য লড়ছে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে নেমেছেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। কিউই ব্যাটসম্যান টম ল্যাথামের সেঞ্চুরি আর কলিন মানরোর ফিফটিতে প্রথম ওয়ানডেতে বড় সংগ্রহ পেয়েছে নিউজিল্যান্ড। জিততে হলে বাংলাদেশকে গড়তে হবে রেকর্ড।

ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে ল্যাথামের ১৩৭ আর মানরোর ৮৭ রানের সুবাদে নিউজিল্যান্ড ৭ উইকেটে তুলেছে ৩৪১। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে ১৯৯০ সালে শারজায় দুই দলের প্রথম দেখায় কিউইরা ৪ উইকেটে করেছিল ৩৩৮।

হ্যাগলি ওভালে ৩০০ রান তাড়া করে জিততে পারেনি কোনো দল। বাংলাদেশ নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসেই সর্বোচ্চ ৩১৯ রান তাড়া করে জিততে পেরেছে। সেটি অবশ্য নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই, ২০১৫ বিশ্বকাপে নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। আজ সেরকম কিছুর পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারবেন তামিম-সাকিবরা? কাজটা বেশ কঠিন। তাদের যে সামলাতে হবে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদির মতো গতি তারকাদের!

বাংলাদেশ সময় আজ ভোর ৪টায় শুরু ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। টসের সময় বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা জানান, জিতলে তিনি বোলিংই বেছে নিতেন।

দীর্ঘ ৯ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার শুরুটা দুর্দান্ত করেন মুস্তাফিজুর রহমান। ‘কাটার মাস্টার’ ইনিংসের ষষ্ঠ আর নিজের তৃতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে সফলতা এনে দেন। ঝড় তোলার আগেই মার্টিন গাপটিলকে ফিরিয়ে দেন বাঁহাতি এই পেসার। তার স্লোয়ার বল লং অফ দিয়ে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন গাপটিল। কিন্তু টাইমিং হয়নি, বল উঠে যায় আকাশে। মিডঅনে বলটি সহজেই তালুবন্দি করেন সৌম্য সরকার। ১৯ বলে একটি করে চার, ছক্কায় গাপটিল করেন ১৫। নিউজিল্যান্ডের স্কোর তখন ১ উইকেটে ৩১।

গাপটিলের বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেটে ল্যাথামকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়েন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে গাপটিলের উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজকে সরিয়ে আরেক পেসার তাসকিনকে আক্রমণে আনেন মাশরাফি। সেই তাসকিনই নিজের তৃতীয় ওভারে উইলিয়ামসনকে ফিরিয়ে ভাঙেন ৪৮ রানের জুটি। তাসকিনের বাউন্সার কিউই অধিনায়কের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। ৩৬ বলে ৫ চারে উইলিয়ামসন করেন ৩১। নিউজিল্যান্ডের স্কোর তখন ২ উইকেটে ৭৯।

ছয় বছর পর এদিন নিউজিল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে খেলতে নামেন নিল ব্রুম। ৩৩ বছর বয়সি ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফিরতে পারতেন ব্যক্তিগত ১৭ রানেই। কিন্তু সাকিবের বলে ডিপ মিড উইকেটে ব্রুমের ক্যাচ ফেলেন মাহমুদউল্লাহ। অবশ্য নিজের পরের ওভারেই ব্রুমকে (২২) এলবিডব্লিউ করে সাজঘরের পথ দেখান সাকিব। নিজের এক ওভার পরে এসে নতুন ব্যাটসম্যান জেমস নিশামকেও (১২) এলবিডব্লিউ করেন সাকিব। নিউজিল্যান্ডের স্কোর তখন ৪ উইকেটে ১৫৮।

এরপরই মানরোর সঙ্গে জুটি বেঁধে দলের স্কোর ২০০ পার করেন ল্যাথাম। ৪০তম ওভারে তাসকিনের বল ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলে ঠিক ১০০ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরিও তুলে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। আর মানরো ৪৪ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। তাতে ৪২ ওভারেই আড়াই শ’ পেরোয় নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ। মাইলফলক ছোঁয়ার পর আরো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন এই দুজন। ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে মাশরাফিকে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের স্কোর ৩০০ পার করেন ল্যাথাম।

ঝড় তোলা মানরোকে ফিরিয়ে ১৫৮ রানের বড় জুটি ভাঙেন সাকিব। তাসকিনকে ক্যাচ দেওয়া মানরো ৬১ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় করেন ৮৭। পরের ওভারে ল্যাথামকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ। ১২১ বলে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ১৩৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন ল্যাথাম। ততক্ষণে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ উঠে যায় চূড়ায়।

সাকিব ১০ ওভারে ৬৯ রানে নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। ৫২ রানে ২ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। তাসকিন ২ উইকেট পান ৭০ রানের বিনিময়ে।

এই ম্যাচ দিয়েই গত ২৬ মার্চের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেন মুস্তাফিজ। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাদ পড়া সৌম্য সরকারও দলে ফিরেছেন। আছেন ইমরুল কায়েসও। তিন পেসার নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। অধিনায়ক মাশরাফির সঙ্গে আছে মুস্তাফিজ ও তাসকিন আহমেদ।

ছয় বছর পর নিউজিল্যান্ডের হয়ে ওয়ানডে খেলছেন নিল ব্রুম। তার সঙ্গে জেমস নিশাম ও লুক রনকিও দলে ফিরেছেন। ২০১৪ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর এই প্রথম দেশের বাইরে কোনো পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ।

ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান দুর্দান্ত। দুই দলের ফল হওয়া শেষ আট ওয়ানডের সাতটিই জিতেছে বাংলাদেশ, একটি নিউজিল্যান্ড। তবে বাংলাদেশ সব ম্যাচই জিতেছে ঘরের মাঠে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এখন পর্যন্ত তাদের হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার অতীত রেকর্ড ভাঙতে চায় মাশরাফির দল।

বাংলাদেশ দল:
মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান।

নিউজিল্যান্ড দল:
কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), ট্রেন্ট বোল্ট, নিল ব্রুম, লকি ফার্গুসন, মার্টিন গাপটিল, টম ল্যাথাম, কলিন মানরো, জেমস নিশাম, লুক রনঞ্চি, মিচেল স্যান্টনার, টিম সাউদি।
২৬ ডিসেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে