বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৭, ১২:৫৯:২০

যেসব কারণে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়াচ্ছেন ক্রিকেটাররা

যেসব কারণে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়াচ্ছেন ক্রিকেটাররা

নিউজ ডেস্ক : পেসার রুবেল হোসেন ও মডেল হ্যাপিকে নিয়ে ২০১৫ সালটি ছিল আলোচনা-সমালোচনায় ভরা। প্রেমিকার মামলাতে বিশ্বকাপ খেলার আগমুহূর্তে ক্রিকেটার রুবেল হোসেনকে জেলও খাটতে হয়। শুধু দেশেই নয় বিশ্ব মিডিয়াতেও এই খবরটি বড় করে আসে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আরেক পেসার শাহাদাত হোসেন রাজীবের বাসার শিশু গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা নাড়িয়ে দেয় দেশ। এই পেসার ও তার স্ত্রীকেও জেল খাটতে হয়।

যদিও শেষ পর্যন্ত আদালতের রায়ে বেকসুর খালাস পেয়েছেন তারা। এরমধ্যে বছরের শেষ দিকে নারী কেলেঙ্কারিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কর্তৃক ১৩ লাখ টাকা করে জরিমানা গুনতে হয় তরুণ ক্রিকেটার সাব্বির রহমান ও আল আমিন হোসেনকে। আর নতুন বছরের শুরুতেই এক নারীর তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলখানায় আছেন আরেক ক্রিকেটার আরাফাত সানি। সেই নারী নিজেকে সানির স্ত্রী বলে দাবি করেছেন। এমন একের পর এক ঘটনাতে নড়েচড়ে বসেছে বিসিবি।

কঠিন শাস্তির বিধানও করতে যাচ্ছেন ক্রিকেটারদের জন্য। কিন্তু কি কারণে ক্রিকেটাররা জড়াচ্ছেন এমন ঘটনাতে?  হঠাৎ করে তারকা খ্যাতি, মোটা অঙ্কের অর্থ আয়ের পাশাপাশি ক্রিকেটারদের পরিবারের অসচেতনাকে এমন ঘটনার নেপথ্য কারণ বলে মনে করেন ক্রিকেট বোদ্ধারা। বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্টের ম্যানেজার ও কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম, জাতীয় দলের নির্বাচক কমিটির অন্যতম সদস্য সাজ্জাদ আহমেদ শিপন ও কোচ মিজানুর রহমান বাবুল একই সুরে জানান, ‘অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম ক্রিকেটারদের পরিবারের পরিবেশ, পরিবারের ভূমিকা। ক্রিকেটারদের শিক্ষাও এই ধরনের কাজে জড়াতে ভূমিকা রাখছে।’
   
নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেন, ‘আমাদের সমাজে এমন ঘটনা আরো ঘটছে। কিন্তু ক্রিকেটারদের ঘটনা বড় করে আসছে কারণ তারা এখন দেশের তারকা। আমি মনে করি, ক্রিকেটারদের বড় হওয়ার পরিবেশ, পরিবারের শিক্ষা, নিজের শিক্ষা ও অভিভাবকদের সতর্কতার অভাবে এমন ঘটছে। এখানে বিসিবিও অভিভাবকের ভূমিকা পালন করছে। সব সময়ই সচেতন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু যখন তারা বাইরে থাকে বা বড় হয় সেই ক্ষেত্রে পরিবারকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার পথ দেখাতে হবে।’

অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের নীরবতায় ক্রিকেটাররা বড় ভুল করছে বলেও মনে করেন এই কোচ। তিনি বলেন, ‘আসলে এখন ক্রিকেটে অনেক টাকা, সেই সঙ্গে রাতারাতি তারকা হওয়া যায়। দেখা যায় তারা শহরে একা থাকে পরিবার থেকে দূরে। সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার যে যোগ্যতা তা তাদের থাকে না। তাই জড়িয়ে পড়ে ভুলের পথে। আবার দেখা যায় তারাই পরিবারে এখন বড় ভূমিকা রাখছে। ক্রিকেট খেলে তারা পরিবারের অভাব পূরণ করছে। তাই তাদের ওপর নির্ভরশীল পরিবার অনেক সময় নীরব থাকে। তবে এখন সময় হয়েছে, বিসিবিকে আরো কঠিন হতে হবে।’

শিক্ষাও এই অধঃপতনের বড় কারণ : ক্রিকেটারদের বিপথগামী হওয়ার অন্যতম কারণ প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক শিক্ষাহীনতা বলেই বিশ্বাস করেন নির্বাচক সাজ্জাদ আহমেদ শিপন। তিনি বলেন, ‘অনেক শিক্ষিত মানুষও ভুল করে। তবে শিক্ষা থাকলে কোন্‌টা ভুল আর কোন্‌টা সঠিক তা বিচার করা যায়। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া সামাজিক একটা শিক্ষাও আছে। সেগুলো থেকেও আমরা নিজেদের গড়ে তুলতে পারি। যে ক্রিকেটাররা এমন বিব্রতকর ঘটনাতে জড়াচ্ছে তাদের আসলেই সব ধরনের শিক্ষার অভাব আছে। তারা তো জাতীয় দলে থাকা মাশরাফি বিন মুর্তজা, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহীমকে দেখেও শিখতে পারে। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা সঠিক সময়ে জীবনকে যেভাবে সাজিয়ে নিয়েছে সেটিও তাদের শিক্ষা হতে পারে। কিন্তু ভালো মন্দ আলাদা করার যে শিক্ষাটা আমার মনে হয় তাদের মধ্যে নেই। সেই পরিবার থেকে পাওয়া শিক্ষার ও সচেতনার একটা বিষয় আছে। এখানে বিসিবির চেয়ে পরিবারকে বড় ভূমিকা রাখতে হবে।’

বড় অঙ্কের আর্থিক জরিমানা করতে হবে : কোচ মিজানুর রহমান বাবুল মনে করেন এখনই সময় বিসিবি’র আরো কঠোর হওয়ার। সেই সঙ্গে তিনি ক্রিকেটারদের পরিবারকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি পরিবারের পাশাপাশি এখন ক্রিকেট বোর্ডকে আরো কঠিন শাস্তির বিধান করতে হবে এই সব বিব্রতকর ঘটনা ঠেকাতে হলে। যে টাকা ও তারকা খ্যাতির জন্য ক্রিকেটাররা এই সবে জড়াচ্ছে তার জন্য আইন হওয়া উচিত বড় অঙ্কের আর্থিক জরিমানা। যেমনটা আল আমিন ও সাব্বিরকে করা হয়েছে। তাহলে ক্রিকেটাররা সাবধান হবে আয়ের বড় একটি অংশ হারানোর ভয়ে।’এমজমিন
২৬ জানুয়ারি ২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে