বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৭, ০২:২২:৫১

হতে চেয়েছিলেন ব্যাংকার, হয়ে গেলেন ক্রিকেটার

হতে চেয়েছিলেন ব্যাংকার, হয়ে গেলেন ক্রিকেটার

স্পোর্টস ডেস্ক: সকাল বেলায় সুযোগ পেলে খবরের কাগজে প্রায়ই চোখ বুলাতেন। মনের ভিতরে ব্যাংকার হওয়ার গোপন ইচ্ছা নিয়ে পত্রিকায় বিভিন্ন ব্যাংকের চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখতেন। ব্যাংকার হওয়ার প্রস্তুতিটাও ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন খবরের কাগজের ভিন্ন এক সংবাদে চোখ আটকে গেল শারমিন সুলতানার।

খেলার পাতায় নারী ক্রিকেটারদের নিয়ে একটা ছোট প্রতিবেদন ছিল সেখানে। প্রতিবেদনটি পড়তে পড়তেই মাথায় আসতে লাগল একের পরে এক প্রশ্ন। বাংলাদেশে মেয়েদের জন্যও ক্রিকেট খেলার ব্যবস্থা আছে? মেয়েদের আলাদা ক্রিকেট দল আছে নাকি বাংলাদেশে?

এরপর শুরু হয় নতুন লক্ষ্যের দিকে ছোটা। খোঁজ নিতে শুরু করেন তিনি। জানতে পারেন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দল ও খেলোয়াড়দের সম্পর্কে। প্রতিনিয়ত এসব আগ্রহ থেকেই ক্রিকেট জিনিসটাকে নিজের মনে গেঁথে নিয়েছিলেন শারমিন। সেই বগুড়ার খুব অপরিচিত আর সাধারণ মেয়ে, আজকের বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের ওপেনার।

ব্যাংকের স্বপ্নকে পাশ কাটিয়ে ক্রিকেটকে আপন করে নেওয়ার গল্পটা বলতে গিয়ে শারমিন জানান, ‘ছোটবেলা থেকে এমন কোনও আগ্রহ ছিল না ক্রিকেটকে নিয়ে। এমনিতে খেলাধুলা করতাম। আসলে জানতাম না যে মেয়েরা ক্রিকেট খেলে। ক্রিকেটে তাদের একটা জাতীয় দল আছে। যখন জেনেছি তখন আগ্রহটা তৈরি হয়েছে। ভাবলাম যে আমার ঠিকানাটা এখানে (ব্যাংকে) না, আমার ঠিকানাটা ওখানে (ক্রিকেটে)। বগুড়ার বেশকিছু পত্রিকা তখন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটার এবং তাদের সাফল্য নিয়ে লিখছিল। সেখান থেকেই পরিচিতি এটার সঙ্গে। এরপর স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখা শুরু।’

তবে এই সাফল্যের পেছনে তার পরিবারের অবদান সব চেয়ে বেশি। পরিবার না থাকলে আজকের এই পর্যায়ে আসা হতো না শারমিনের, এমনটা অকপটেই স্বীকার করলেন তিনি। তবে পরিবারের বাইরেও আছেন এমন একজন যার হাত ধরেই এত দূর আসা। তিনি হলেন কোচ মোসলেম উদ্দিন।

শুধু কোচ নয়। তাকে আদর্শও মানেন শারমিন, ‘জীবনে আদর্শ হিসেবে আমার কোচ মোসলেম উদ্দিনকে সবসময় প্রথমে রাখব আমি। আমার পরিবার আমাকে সাহায্য করেছে। আমার কোচের কাছ থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি আমি। ওনাকে ছাড়া কখনোই আমি এই অবস্থানে আসতে পারতাম না।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে পা রাখার ক্ষেত্রে নারীদের নানারকম বাধা-বিপত্তি পার করে আসতে হলেও নিজের বেলায় সেটা একেবারেই পাননি শারমিন সুলতানা। বিশেষ করে পরিবারের কাছ থেকে তো নয়ই, বরং পরিবারকেই নিজের শক্তি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শারমিন বলেন, ‘এরকম সমস্যা কখনও ফেস করিনি। আমার পরিবার আমাকে অনেক সাহায্য করে। ছেলেমেয়ে যে আলাদা এরকমটা কখনোই হয়নি পরিবারে। আমি বড় হয়েছি আমার ভাইয়াদের সাথে। ভাইয়াদের সাথে চলাফেরা করতাম। ভাইয়া যেখানে যেত সেখানেই যেতাম। ওদের বন্ধুদের সাথে খেলতাম। এরকমভাবেই বেড়ে ওঠা। ’

বগুড়ার মেয়ে তাই সেখানকার বিখ্যাত দইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা থাকা স্বাভাবিক। তবে ভাত খেতে বেশি পছন্দ করেন শারমিন। এছাড়া আইসক্রিম আর চকলেট খেতে ভালবাসেন। মায়ের হাতের ছোট মাছের চচ্চড়িও বেশ পছন্দ তার।

খেলার বাইরে বই পড়তে, নাটক দেখতে ও গান শুনতে ভালবাসেন। বিশেষ করে মেলোডিয়াস আর নরম সুরের গানগুলো। শ্রেয়া ঘোষালকে নিজের পছন্দের শিল্পীদের তালিকার একেবারে প্রথমে রেখেছেন শারমিন। সব ধরনের বই-ই কমবেশি পড়া হলেও গোয়েন্দা গল্পের প্রতি একটু বেশিই আকর্ষণ আছে তার সেই ছোটবেলা থেকে।

শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল দেশের জন্য কিছু করার। তবে সেটা যে এভাবে হবে কখনও ভাবেননি শারমিন। আর তাই ক্রিকেটকে নিজের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নেওয়ার পর এখন বগুড়ার সেই ছোট্ট মেয়েটিরও স্বপ্ন হয়েছে আকাশ ছোঁয়া। নিজের সঙ্গে সঙ্গে দেশকেও ক্রিকেটের মাধ্যমে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শারমিন বলেন, ‘দেশের জন্য আমি ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে এক নম্বর হতে চাই’।-প্রিয়
২৬ জানুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে