শুক্রবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭, ১১:৩১:৪৩

বুলবুল সর্ম্পকে জানা-অজানা আট অধ্যায়

বুলবুল সর্ম্পকে জানা-অজানা আট অধ্যায়

স্পোর্টস ডেস্ক: বাংলাদেশের টেস্ট পূর্ব যুগের অন্যতম সেরা ব্যাটম্যান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আশি নব্বই দশকে বাংলাদেশের হয়ে খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার চেয়ে নিখুঁত টেকনিকের ব্যাটসম্যান খুব কমই দেখা গেছে। তাই অভিষেক টেস্টেই তার ৮ ঘন্টা ৫৫ মিনিট স্থায়ী ১৪৫ রানের ম্যারাথন ইনিংসটি তেমন বিস্ময়ের জন্ম দেয়নি। মাত্র কয়েকটি ফাস্ট ক্লাস ম্যাচের অভিজ্ঞতায় এমন একটি ইনিংস খেলা কেবল তার পক্ষেই সম্ভব ছিল।

বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং আমিনুল ইসলামের দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির পর তিনি আর বেশিদিন খেলেননি। খেললে নিশ্চিতভাবেই টেকনিক, টেম্পারম্যান্ট এবং স্কিলের মিশ্রনে তিনি হয়ে উঠতে পারতেন বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।

চলুন দেখে নিই বুলবুল সম্পর্কে টুকিটাকি কিছু তথ্য।

১. চার্লস ব্যানারম্যান এবং ডেভ হটনের পর ইতিহাসের মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে দেশের এবং নিজের অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন আমিনুল ইসলাম। রানের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন তিনি, ১৬৫ রান করে প্রথম স্থানে রয়েছেন চার্লস ব্যানারম্যান।

২. আমিনুল ইসলামের ক্যারিয়ার মূলত শুরু হয়েছিল ফুটবলার হিসেবে। মারাত্বক এক ইনজুরির কবলে পড়ে তিনি ফুটবল ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। অস্ট্রেলিয়ার অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত তার ক্রিকেট প্রতিভার ঝলক দেখা যায়। ব্যাট হাতে তেমন সফলতা না পেলেও বল হাতে ব্রায়ান লারার উইকেট সহ মোট ৬ টি উইকেট নিয়েছিলেন বুলবুল।

৩. আমিনুল ইসলামের টেস্ট এবং ওয়ানডে অভিষেকে দুটোই ভারতের বিপক্ষে। ১৯৮৮ সালে তার ওয়ানডে অভিষেকে হয় এবং সেই ম্যাচে তিনি ১০ রান করেন। অন্যদিকে টেস্ট অভিষেকে ২০০০ সালে হাঁকিয়েছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ১৪৫ রান।

৪. খেলোয়াড় হিসেবে আমিনুল ইসলামকে মুল্যায়ন করতে গেলে তার পারফরমেন্স দেখে মনে হতেই পারে গড়পড়তা মানের একজন ব্যাটসম্যান ছিলেন তিনি। ১৩ টেস্টে ২১.২০ গড়ে ২ টি অর্ধশতক, ১ টি শতকে ৫৩০ রান এবং ৩৯ ওয়ানডেতে ২৩.৩৫ গড়ে ৩ টি অর্ধশতকে ৭৯৪ রান তারই সাক্ষ্য দেয়। তবে আমিনুল ইসলামকে শুধুমাত্র পরিসংখ্যান দিয়ে মাপা যাবেনা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তার অবদান কেবল মাঠের পারফরমেন্স দিয়ে যাচাই করাটা হবে অনুচিত। নব্বই দশকে প্রশাসনিক এবং অবকাঠামোগত দিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ধীরে ধীরে আলোর পথে নিয়ে আসার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন 'বুলবুল' নামে পরিচিত আমিনুল ইসলাম।

৫. ওয়ানডেতে আমিনুল ইসলামের সেরা গড় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অসিদের বিপক্ষে তিনি দুটি ম্যাচ খেলেছেন এবং তাতে তার গড় ৫৪। তবে তিনি সর্বোচ্চ রান করেছেন ভারতের বিপক্ষে, ৪৬.১৭ গড়ে তার সংগ্রহ ২৭৭ রান।

৬. ২০০১ সালে শ্রীলংকার বিপক্ষে যেই ম্যাচে সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসাবে সেঞ্চুরি করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল, সেই ম্যাচে বুলবুল খেলেছিলেন ১৫২ বলে ৫৬ রানের ধৈর্যশীল একটি ইনিংস এবং একপ্রান্তে তার উপস্থিতি আশরাফুলকে তার সহজাত ব্যাটিং করতে সাহায্য করেছিল।

৭. ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত অংশগ্রহন করে বাংলাদেশ এবং অধিনায়ক ছিলেন আমিনুল ইসলাম। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ পাকিস্তান এবং স্কটল্যান্ডকে হারায়।

৮. বাংলাদেশের জার্সি গায়ে আমিনুল ইসলামকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ২০০২ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্টে। অফিসিয়ালি অবসর না নিলেও এরপর থেকে কোচিংয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি। বেশ কয়েকবছর অস্ট্রেলিয়ায় ডিভিশিন লীগের একটি ক্লাবে খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখানে তার ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল 'বুলি'। এরপর দীর্ঘদিন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের হয়ে চীনে ক্রিকেট ডেভেলপমেন্টের কাজ করেছেন।

অনেকেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ হিসেবে বুলবুলকে দেখতে চান। ১৫ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনের অভিজ্ঞতা এবং সমৃদ্ধ কোচিং ক্যারিয়ারের মিলিয়ে একটি আন্তর্জাতিক দলের কোচ হওয়ার ক্ষেত্রে কোনদিক থেকেই পিছিয়ে নেই তিনি।

সময়ই বলে দিবে বাংলদেশ ক্রিকেট দলের ভবিষ্যৎ কোচ হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাকে বিসিবি বিবেচনা করেন কিনা। তবে খেলোয়াড় হিসেবেই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম সারির একটি নাম হয়ে থাকবেন আমিনুল ইসলাম। -খেলাধুলা
৩ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে