শুক্রবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭, ০২:৫৫:৪৫

হায়দরাবাদেই প্রথম ওয়ানডে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ

হায়দরাবাদেই প্রথম ওয়ানডে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক: ১৯৮৬ সালে প্রথম এশিয়া কাপে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু বাংলাদেশের। এরপর ২২টি ম্যাচ খেলে ফেলেছিল বাংলাদেশ; কিন্তু ওয়ানডে ক্রিকেটে কোনো জয়ের দেখা মিলছিল না। কেবলই পরাজয়ের গণ্ডিতে বন্দি।

১৯৯৮ সালে ভারত আয়োজন করে কোকাকোলা ত্রিদেশীয় সিরিজ। ভারত ছাড়া বাকি দুই প্রতিযোগি বাংলাদেশ এবং কেনিয়া। ক্রিকেটে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দুটি দেশকে নিয়ে তখন ভারত আয়োজন করেছিল এই সিরিজটি। বাংলাদেশ ইতিহাস গড়েছিল এই সিরিজেই। শুধু তাই নয়, হায়দারাবাদেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম জয়টি পেয়েছিল বাংলাদেশ। যে হায়দারাবাদে প্রথম ভারত সফরে টেস্ট খেলতে গেছে মুশফিকরা।

হায়দরাবাদের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে ইতিহাসে প্রথম ওয়ানডে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। কেনিয়াকে হারিয়ে প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ম্যাচে জয়ের দেখা পেলো বাংলাদেশ। প্রায় ১২ বছরের অপেক্ষা শেষে নিজেদের ২৩তম ম্যাচে গিয়ে আসলো টাইগারদের প্রথম জয়। অথচ এই কেনিয়াকে হারিয়ে ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয়ের পর তাদের বিপক্ষে আর জিততেই পারছিল না বাংলাদেশ।

হায়দরাবাদের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে ১৯৯৮ সালের ১৭ মে কেনিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল আকরাম খানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। দিবা-রাত্রির ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন কেনিয়ার অধিনায়ক আসিফ করিম। রবি শাহের হাফ সেঞ্চুরি, হিতেশ মোদির ৪০ এবং দিপক চুডাসামার ৩৬ রানের ওপর ভিত্তি করে ২৩৬ রান তুলে ফেলে কেনিয়া।

যদিও মোহাম্মদ রফিকসহ বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের মুখে ১ ওভার বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় কেনিয়া। রফিক ৫৬ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। ২ উইকেট করে নেন খালেদ মাহমুদ সুজন এবং এমানুল হক মনি। ১ উইকেট নেন মোর্শেদ আলি খান। বাকি দুটি হলো রানআউট।

২৩৬ রান সেই সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বাংলাদেশ জয়ের যে আশা করেছিল, সেটা যেন ধুলিধুসরিত। বিশেষ করে ফ্লাড লাইটের আলোতে এই রান তাড়া করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়েই ছিল সংশয়; কিন্তু হঠাৎ করেই তখনকার কোচ গর্ডন গ্রিনিজের মাথায় কী যেন খেলে গেলো।  তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আতহার আলি খানের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করবেন মোহাম্মদ রফিক।

সাত-আট নম্বরে ব্যাট করা মোহাম্মদ রফিককে ওপেনিং করানোর উদ্দেশ্য ছিল শুরুতে ধুম-ধাড়াক্কা পিটিয়ে কিছু রান যদি তিনি তুলে দিয়ে আসতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হবে। ড্রেসিং রুমে সে কথা নিজেই বলেছিলেন কোচ গ্রিনিজ। তিনি আতহার আলি খানকে বলে দিয়েছিলেন এক পাশ ধরে খেলতে আর রফিককে গাইড করতে। রফিককে বলেছিলেন উইকেট বাঁচিয়ে রেখে যতটা পারা যায় পিটিয়ে খেলতে।

যে কথা কথা সে কাজ। আতহার আলি খানের সঙ্গে ওপেন করতে নেমে ৮৭ বলে ৭৭ রানের এক অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে বসলেন রফিক। আতহার আলি খানের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে গড়লেন ১৩৭ রানের অনবদ্য এক জুটি। কেনিয়ার গেম প্ল্যানেই ছিল না বিষয়টা। সুতরাং, রফিককে ওপেনিং করতে নামতে দেখে শুরুতে মুচকি হাসলেও পরে তারা বুঝতে পেরেছে, গেম প্ল্যানে হঠাৎ পরিবর্তনেই বাংলাদেশ সফল হয়ে গেলো।

রফিকের ইনিংসটাই বাংলাদেশের জয়ের ভিত গড়ে দেয়। ৮৭ বলে খেলা ইনিংসটি সাজানো ছিল ১১টি বাউন্ডারি আর ১টি ছক্কায়। ১৩৭ রানে আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের জয়ের পথে খুব বেশি বাধা থাকলো না। আতহার আলি খান খেলেন ৪৭ রানের ইনিংস। ৫১ বলে ৩৯ রান করেন আকরাম খান। আমিনুল ইসলাম বুলবুল ২০ রানে অপরাজিত থাকেন। নাঈমুর রহমান দুর্জয় অপরাজিত থাকেন ৪ রানে।

শেষ পর্যন্ত ২ ওভার হাতে রেখেই ৬ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়টি পেয়ে গেলো বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারটিও পেয়ে গেলেন মোহাম্মদ রফিক।

সেই হায়দারাবাদেই ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলতে গেলো মুশফিক অ্যান্ড কোং। যদিও সেই লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে নয়, টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। তাতে কী, সেই হায়দরাবাদেই তো! প্রথম ওয়ানডে জয়ের অনুপ্রেরণা যদি ছুঁয়ে যায় মুশফিক-সাকিব-তামিমদের, তাহলো তো ভালো কিছু আশা করাই যায়!
৩ ফেব্রুয়ারি,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে