ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েও গ্রহণ করেননি তারা
স্পোর্টস ডেস্ক: এশিয়া কাপের বাছাইপর্ব খেলতে ২০০৩ সালে হংকংয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানেই ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচের আগে মুঠোফোনের খুদে বার্তায় ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পান বর্তমান অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম। কিন্তু দুজনের কেউই এমন অনৈতিক প্রস্তাবে সাড়া দেননি। বাজিকরদের আশার গুড়ে বালি!
নেপাল পুলিশ গত বৃহস্পতিবার ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে নেপাল জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সাগর থাপাসহ সাবেক ও বর্তমান পাঁচ ফুটবলারকে। এই খেলোয়াড়েরা যেসব ম্যাচ পাতিয়েছেন বলে তদন্তকারীদের ধারণা, সেগুলোর মধ্যে নাকি রয়েছে বাংলাদেশের ম্যাচও! ম্যাচ পাতানো নিয়ে জাতীয় দলের বেশির ভাগ ফুটবলারই মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছেন। এই প্রসঙ্গ উঠলে প্রায় সবাই এড়িয়ে যাচ্ছেন। তবে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পাওয়ার কথা স্বীকার করলেন জাতীয় দলের সাবেক ও বর্তমান অধিনায়ক।
হংকংয়ের টিম হোটেলে সেই দিনের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে একসময়ের দেশসেরা গোলরক্ষক আমিনুল হক বলছিলেন, ‘আবাহনীতে খেলে যাওয়া ফুটবলার কোলি বার্নস একদিন ম্যাচের আগে আমার হোটেলে আসে। এসে আমাকে বলে, তোমরা হংকংয়ের কাছে ম্যাচটা ছেড়ে দাও। তোমাদের হারতে হবে ৩ গোলের ব্যবধানে। তাহলে বড় অঙ্কের টাকা পাবে। আমি বললাম, তোমার কি মাথা-টাথা খারাপ হয়েছে? এরপর অফিশিয়াল মিটিংয়ে ম্যানেজমেন্টকে জানিয়ে দিই কথাটা।’ সহ-খেলোয়াড় সবাইকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি, ‘সিনিয়র ফুটবলার হাসান আল মামুন, মতিউর মুন্নাসহ অন্যদেরও সতর্ক করে দিই। বলি এখন আমাদের আরও সতর্ক হয়ে খেলতে হবে। কেননা ম্যাচে বাজে ফল হলে সবাই নানা রকম কথা বলতে পারে।’ বাংলাদেশ প্রাণপণে লড়ে ম্যাচটি ড্র করে ২-২ গোলে।
মামুনুল ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েছিলেন মাস ছয়েক আগে। আমিনুলের মতো সাহস করে অবশ্য ঘটনাটা কাউকে জানাননি তিনি, ‘আমার মোবাইল ফোনে একটি এসএমএস পেয়েছিলাম। দেখে বুঝতে পারিনি কোন দেশের নম্বর। ভয়ে তাড়াতাড়ি নম্বরসহ মেসেজটি ডিলিট করে দিয়েছিলাম।’
খেলোয়াড়দের কাছে ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব এলেও সেটাকে স্পর্শকাতর ভেবে অনেকে ঘটনাটা লুকোনোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আমিনুলের মতে তা দলের ম্যানেজার বা সংশ্লিষ্ট কাউকে জানিয়ে দেওয়া উচিত, ‘সবাই এটিকে খুব স্পর্শকাতর বিষয় ভেবে চেপে যায়। কিন্তু আমার পরামর্শ হলো, বিষয়টি এড়িয়ে না গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজমেন্টকে জানিয়ে দিতে হবে। খেলোয়াড়দেরও একই সঙ্গে সজাগ থাকা উচিত। বাফুফের যাঁরা এসবের দায়িত্বে আছেন তাঁদেরও সজাগ থাকতে হবে। লাল-সবুজ জার্সির সুনাম আর নিজেদের সততা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি।’ মামুনুলের এমন প্রস্তাব পাওয়ার কথা জানতে পেরে বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন কাল সবিস্ময়ে বললেন, ‘মামুনুল তখন বিষয়টি আমাদের জানালে আমরা তদন্ত করে দেখতাম।’
আন্তর্জাতিক ফুটবলে এখন পর্যন্ত কলঙ্কহীন বাংলাদেশ। তবে ঘরোয়া ফুটবল ম্যাচ পাতানোর বিষবাষ্প থেকে মুক্ত নয়। বাফুফে ২০১০-১১ মৌসুমে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে জরিমানা করেছিল ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে।
১৮ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ