তাওসিফ তান: শুভাগত হোম জাতীয় লিগে সেঞ্চুরি আর ১০ উইকেট পেয়েছে দেখে জাতীয় লিগের মান কে অনেকে দেখলাম ‘ফোরথ ক্লাস’ বলছেন। ঠিক আছে মেনে নিলাম!
কিন্তু সেই ফোরথ ক্লাস লিগেই যখন নাসির হোসেন ডাবল সেঞ্চুরি পায়, শাহরিয়ার নাফিস লিটন দাস রা রানের বন্যা ছুটায় তখন তাদের জাতীয় দলে নেওয়ার জন্য পাগল হয়ে যান কেন তাহলে আপনারা? সেখানেই তুষার ইমরান রানের পর রান পেয়ে গেলে কেন তাঁকে জাতীয় দলে নেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগেন? নাসির, নাফিস, লিটন বা তুষারের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি।
এই ম্যাচে শুভাগতের বিরুদ্ধে মুস্তাফিজ, রুবেল, রাজ্জাকরা বোলিং করেছে। টেকনিক সলিড না হলে এদের বিরুদ্ধে রান করা যায়?
জাতীয় দলের মান খারাপ বুঝলাম। কিন্তু, এই সেঞ্চুরি আর ১০ উইকেট যদি নাসির পেতো সেটা যে বোলিং আক্রমণের বিপক্ষেই হোক, তাঁকে জাতীয় দলে নেওয়ার জন্য আমরন অনশন শুরু হত, তখন আর জাতীয় লিগের মান নিয়ে আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকতো না!
এই হিপোক্রেসি টা কেন? নাসির-নাফিসরা আগে জাতীয় দল কাঁপিয়ে গেছেন, আর শুভাগত এখনো জাতীয় দল কাঁপাতে পারেন নাই সেজন্যই তো?
মানে জাতীয় দলে এসে স্টার না হতে পারলে একটা ক্রিকেটারের মেহনতের কোন মুল্য নেই? তাঁর ১৪ বছর থেকে করা পরিশ্রম, ত্যাগ তিতিক্ষা, পর্যায়ক্রমিক ভাবে ধাপে ধাপে ক্রিকেট খেলে এই পর্যায়ে উঠে আসা - গোটা জীবন টা এই খেলাটাকে দান করে দেওয়া এইসবের কোন মুল্য নেই তাই তো?
১৬ কোটি জনতার ভিড়ে ২০-২৫ জনের জাতীয় দলে আসতে পারছে সেইটা বড় না, জাতীয় দলে এসে বিশ্ব কাঁপাতে পারে নাই মানে সে বাতিল খেলোয়াড়, তাঁকে যা ইচ্ছা তাই বলে গালি দেওয়া যায়। ট্রল করা যায়, তাই না?
এই লেখায় শুভাগতের জায়গায় মিঠুন আলী, শুভাশিস রায়, তানভীর হায়দার, সাকলায়েন সজীব, কামরুল ইসলাম, মোশাররফ রুবেল - সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত ব্যর্থ যে কারো নাম বসিয়ে নিন! সাম্প্রতিক সময়ের ট্রেন্ড অনুযায়ী ‘স্যার লর্ড’ খেতাব পাওয়া খেলোয়াড় তো তাঁরা সকলেই! এমনকি জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠিত ইমরুল কায়েসও ‘স্যার লর্ড’ নামে ভূষিত হন আমাদের মহান যুক্তিবাদী সমর্থকদের কাছে!
ট্রল করতে করতে নরমাল সিভিক সেন্স হারায়ে ফেলা খুবই খারাপ জিনিস! আমরা সত্য টা স্বীকার করতেই চাই না। স্বীকার করতেই চাই না যে শুভাগত হোম জাস্ট একজন ‘দুর্ভাগা ক্রিকেটার’, যিনি অমিত সম্ভাবনা নিয়ে এসেও জাতীয় দলে ক্লিক করতে পারে নাই।
বিশ্বজুড়ে এমন শত শত ক্রিকেটারের উদাহরণ দেওয়া যায়। তাঁদের কেউ ক্লিক করে গেলেই আমরা মাতামাতি করে দিন-রাত এক করতাম।
‘শুভাগতের চেয়ে তো অমুক খেলোয়াড় ভালো। তাঁকে দলে নিল না কেন? তাই আমরা শুভাগত কে ট্রল করি ভাই।’ - এইটা আরেকটা ‘কুযুক্তি’! শুভাগত দলে মামা চাচার জোরে, কাউকে টাকা খাইয়ে বা নির্বাচকদের পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি রেখে জাতীয় দলে জায়গা বাগিয়ে নেননি। তাই না? নির্বাচকদের বিবেচনায় আসার মতো পারফরম্যান্স মাঠে করেছে জন্যই এসেছে। অর্থাৎ, তাঁকে নিয়ে নির্বাচকদের কিছু পরিকল্পনা আছে বা ছিল বলেই সে অন্য কোন ক্রিকেটারের চেয়ে প্রেফারেন্স বেশী পেয়েছেন।
তা এরপরে যদি সেই পরিকল্পনা কাজে না লাগে, এই পুরা ব্যাপারটায় শুভাগতের দোষটা কোথায় রে ভাই?? সাকলায়েনের দোষ টা কোথায়? মোশাররফের দোষ টা কোথায়? তানভীর হায়দার, মিঠুন আলীদের দোষ টা কোথায়?
জাস্ট ফেইস দা ট্রুথ!
শুভাগত শাহাদাত আশরাফুলদের মতো স্ক্যান্ডালাস ক্যারেক্টার হলে তাঁকে এতো নিচু করাটা সাজতো। একটা নিরীহ মানুষ বছরের পর বছর ক্রিকেট খেলে নিজ যোগ্যতায় জাতীয় দলে ঢুকে যদি ভাগ্যক্রমে ক্লিক করতে না পারে। তাহলে কেন তাঁকে ট্রল করা হবে এই জবাব টা কেউ দিবেন?
আপনি যে ট্রল করছেন। আপনি কি জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে সফল? কোন ক্ষেত্রেই বিফল হননি?
নিজের কথা কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজের মতো একটা বিশ্বাস প্রতিষ্ঠিত করে নেওয়া এবং যত যাই হোক সেইটাতেই আকড়ায়ে বসে থাকা কে ‘কগনিটিভ ডিসোন্যান্স’। সমর্থকদের কগনিটিভ ডিসোন্যান্স ঘুরপাক খায় ‘জাতীয় দল’ কে কেন্দ্র করে। তারা জাতীয় দল ছাড়া কিছু বঝেন না।
সমর্থকরা চান, জাতীয় দলে এসেই কাঁপিয়ে দেওয়া একজন ক্রিকেটার। সবার দ্বারা সব সময় কাঁপিয়ে দেওয়া সম্ভব না। আর একজনকে ছোট করে আরেক ক্রিকেটারকে বড় করে দেখালে আসলে নিজেদের দলকেই ছোট করা হয়। এই ছোট্ট কথাটা মাথায় রাখলেই চলে। তাহলেই, আর কাউকে ছোট না করেও সমর্থন করা যায়!-খেলাধুলা
২১ ফেব্রুয়ারী ২০১৭/এমটি নিউজ২৪ ডটকম/আ শি/এএস