আরিফুর রহমান বাবু, গল, শ্রীলঙ্কা থেকে: ‘আচ্ছা বাংলাদেশ তিন স্পিনারের বদলে তিন পেসার নিয়ে খেলতে নামলো কেন? শুভাশিসকে না নিয়ে বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামকে খেলানো যেত না?
স্বাগাতিক শ্রীলঙ্কাও যেখানে তিন স্পিনার দিয়ে দল সাজিয়েছে, সেখানে তাইজুলের মত জেনুইন টার্নারকে বসিয়ে রেখে তিন পেসার নিয়ে মাঠে নামা কেন? সেটা কি বড় ধরনের ভুল নয়?
গল টেস্ট শুরুর আধ ঘণ্টা আগে টসের পর থেকেই এ প্রশ্ন উঁকি-ঝুকি দিয়েছে অনেকের মনে। আজ দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহে আর লঙ্কান উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকভেলার কথা শুনে মনে হচ্ছে সেটা, যেনতেন ভুল নয়। বড় সড় ভুল।
খেলা শেষে অফিসিয়াল মিডিয়া সেশনে কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশ হেড কোচ হাথুরুসিংহে ও শ্রীলঙ্কার উইকেটরক্ষক নিরোশান ডিকভেলার কথায় জানা হলো, খালি চোখে গলের উইকেটকে আজও ব্যাটিংবান্ধব মনে হলেও তার আচরণগত ও চরিত্র পাল্টেছে খানিকটা।
প্রথম দিন যেমন শতভাগ ব্যাটিং বান্ধব ছিল, আজ শেষ সেশনেই তা ছিলো না। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে স্লো হচ্ছে। বুধবার খেলা শেষে হাথুরু ও ডিকভেলা পরিষ্কার জানালেন, ‘উইকেট ক্রমেই স্লো হচ্ছে। যত সময় গড়াবে ততই স্লথ থেকে স্লথতর হবে এবং ধীরে ধীরে টার্নও নিবে।’
মোদ্দা কথা, স্পিনারদের জেঁকে বসার সম্ভাব্য ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। তার মানে আগামী কাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে কঠিন বাধা হয়ে দাড়াবেন তিন লঙ্কান স্পিনার অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ, দিলরুয়ান পেরেরা ও ল²ণ সান্দাকান।
বাঁহাতি রঙ্গনা হেরাথের সাথে অফস্পিনার দিলরুয়ান পেরেরা আর বাঁ-হাতি চায়নাম্যান ল²ণ সান্দাকানের সাজানো বৈচিত্র্যপূর্ণ ও ধারালো স্পিন তোড় সামলানোর ওপরই নির্ভর করবে আসলে বাংলাদেশের ভাগ্য।
সৌম্য সরকার, অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ ও লিটন দাস ওই তিন লঙ্কান স্পিনারকে ঠিকমত সামাল দিতে পারলে হয়ত তেমন সমস্যা হবে না; কিন্তু কাজটা সহজ হবে না। কারণ উইকেট ধীরে ধীরে স্লো হচ্ছে। একটু আধটু টার্নও হচ্ছে।
লঙ্কান কিপার নিরোশান ডিকভেলার অনুভব ও মূল্যায়ন, ‘উইকেট সত্যিই স্লো। গতকাল মঙ্গলবার খুব ভাল ব্যাটিং ট্র্যাক ছিল। এখন সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পিচ ¯েøা হচ্ছে। আজ দ্বিতীয় দিন উইকেটে বল পড়ে একটু থেমে এসেছে। অল্প-স্বল্প টার্নও নিয়েছে। তবে আমার মনে হয় আগামীকাল বিকেলের সেশন থেকে সত্যিকার টার্ন নিবে। আজ প্রথম দিকে একটু আধটু সুইং করেছে। সকালের সেশনে বল সুইং করেছে। আবার সিম মুুভমেন্টও হয়েছে। আর দুপুরের পর থেকে ব্যাটিং ট্র্যাক হয়ে গেছে।’
বাংলাদেশের বিপক্ষে কী পরিকল্পনা, সেটা জানিয়ে দিলেন ডিকভেলা, ‘আমাদের এখন ক্রমাগত বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখতে হবে। সে জন্যই উইকেটের পতনও ঘটাতে হবে। আজ শেষ সেশনে আমাদের স্পিনাররা ভাল বল করেছে। আশা করছি তারা আগামী দিন আরও ভাল করবে। আর আমাদের জন্য আশার খবর হলো, আমাদের তিনজন স্পিনার। যা আশা করছি, শেষ দিন আমাদের উপকার করবে।’
অন্যদিকে হাথুরুসিংহেও মনে করেন, উইকেট ক্রমেই স্লো হচ্ছে। লঙ্কান স্পিনাররা আমাদের রান তোলার গতি কমিয়ে দিয়েছে। আমার মনে হয় যত সময় গড়াবে, উইকেট ততই স্লথ হতে থাকবে। এমনকি টার্নও নিবে।’
উইকেটের চরিত্র সম্পর্কে দুই শিবিরের এমন ধারনাই বলে দিচ্ছে উইকেট ধীরে ধীরে স্পিনারদের হয়ে যাবে। সেখানে বাংলাদেশের স্পিনার মোটে দুজন। যার একজন সাকিব আল হাসান ৩২ ওভারের বেশি বল করেও সে অর্থে তেমন প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। তাইজুল থাকলে সাকিবের ব্যাকআপ হতো।
কাজেই বাংলাদেশ অতি অবশ্যই তাইজুলের অভাব বোধ করছে এবং করবে। শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় ইনিংসকে ছোট করতে অবশ্যই স্পিন কার্যকরিতা দরকার হবে। সেখানে তাইজুল থাকলে বোলিং শক্তি আরও ধারালো হতো; কিন্তু বাংলাদেশ তো তাইজুলকে ছাড়াই নেমেছে।
তবে কী উইকেটের চরিত্র বুঝতে ভুল হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্টের? বেশ কয়েক বছর দেশে থাকেন না তাতে কী, হেড কোচ নিজেই তো লঙ্কান- তার গলের উইকেটের চরিত্র সম্পর্কে ভাল ও পরিষ্কার ধারনা থাকার কথা।
যাই হোক, স্পিনারের অভাব বোধ করার আগে কাজের কাজ করতে হবে ব্যাটসম্যানদের। প্রথম কাজ হচ্ছে লঙ্কানদের স্কোরের খুব কাছে গিয়ে থামা। না হয় টপকে যাওয়া। তবেই ম্যাচে থাকা যাবে।
বেশী পিছিয়ে পড়লে আর স্পিনার কম- বেশি দিয়ে কিছুই হবে না। দেখা যাক, চার বছর আগের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মুশফিক আর দু’মাস আগে নিউজিল্যঅন্ডের ওয়েলিংটনে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আসা সাকিবের কেউ একজন আবার বড়-সড় ইনিংস খেলতে পারেন কি না?-জাগো নিউজ
০৮ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪ডটকম/ আ শি