মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৫, ০৫:২৬:১৪

ব্যাটসম্যানরা আমার বল আগের চেয়ে বেশি ভয় পায় : মুস্তাফিজ

ব্যাটসম্যানরা আমার বল আগের চেয়ে বেশি ভয় পায়  : মুস্তাফিজ

স্পোর্টস ডেস্ক : ভারতের পর দক্ষিণ আফ্রিকাও দেখে গেছে, তাঁর মায়াবী কাটার কতটা বিধ্বংসী। ছুরির ফলার মতো ধারালো, বিষাক্ততায় সাপের ছোবলকেও হার মানায়। কিন্তু এই দুই পরাক্রমশালী দলের ব্যাটসম্যানদের এবার লজ্জাই পাওয়ার পালা। লজ্জাটা দিচ্ছেন স্বয়ং ‘কাটার বিশেষজ্ঞ’ মুস্তাফিজুর রহমান, ‘আমাদের দেশের ব্যাটসম্যানদের কাটার দিয়ে লাভ নেই। ওরা কাটারের জন্যই অপেক্ষা করে। বিদেশি ব্যাটসম্যানরাই কেন জানি কাটারকে বেশি ভয় পায়।’ এবারের জাতীয় লিগের আগে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ১২টি। কিন্তু পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় এবারই সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল এই বাঁহাতি পেসার। প্রথম দুই ম্যাচে ৮ উইকেট, ফতুল্লায় ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে চলতি ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৪টি। ধারাবাহিকতার রহস্যটা মুস্তাফিজ নিজেই খুলে বললেন, ‘ব্যাটসম্যানরা এখন আগের চেয়ে বেশি ভয় পায় আমার বল। সমীহ করে খেলে। আর বলও মাশা আল্লাহ ভালো করছি।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেই সাড়া ফেলে দেওয়া একজন পেসারের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে এই অভিজ্ঞতাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে বিশেষ অস্ত্রটা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হইচই বাধালেন, ঘরের মাঠে পরিচিত ব্যাটসম্যানদের সামনে সেটার তেমন কার্যকারিতা খুঁজে পাচ্ছেন না মুস্তাফিজ, ‘আমি দেখলাম কাটারটা দেশি ব্যাটসম্যানরাই ভালো খেলে। ওরা বসে থাকে কখন কাটার দেব। আর শুধু কাটার না, যেসব বলে আমরা বাইরের ব্যাটসম্যানদের সমস্যায় ফেলি, বেশি উইকেট পাই, আমাদের ব্যাটসম্যানরা সেসব বলেই বেশি ভালো খেলে।’ কথাটায় বিস্ময় জাগতে পারে ভেবেই কিনা মুস্তাফিজ প্রমাণও হাজির করলেন, ‘এই ম্যাচে তো কাটারে কেবল শরীফ ভাইয়ের উইকেটটাই পেলাম!’ তারকাখ্যাতি পাওয়ার পর ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রথম উপস্থিতি এই জাতীয় লিগেই। মুস্তাফিজের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটের মানে যেমন এখন বদলে যাওয়ার কথা, পরিবর্তন আসার কথা তাঁর প্রতি সতীর্থদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও। কিন্তু মুস্তাফিজের কথায় সে রকম কিছু মনে হচ্ছে না, ‘দলের সবাই আগের মতোই আছে। আমিও আগের মতো...মুস্তাফিজ মুস্তাফিজই আছে। একটুও বদলাইনি। আমার কাছে আগের জাতীয় লিগ আর এবারের জাতীয় লিগে কোনো পার্থক্য মনে হচ্ছে না।’ খুলনার অধিনায়ক আবদুর রাজ্জাক সামান্য হলেও নতুনত্ব খুঁজে পাচ্ছেন তারকা মুস্তাফিজের মধ্যে। অবশ্য সেটাকেও রসিকতা বলে ধরে নিতে পারেন, ‘আগে ও কথা একদমই কম বলত। এখন একটু বলে, কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে বলতে পারেন...হা হা হা।’ তবে মাঠের মুস্তাফিজের পরিবর্তনটা স্পষ্টই চোখে পড়ছে তাঁর, ‘ওকে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সতর্কভাবে খেলছে সবাই। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে হয়তো একটা মানসিক ব্যাপার কাজ করে, আর মুস্তাফিজও এবার খুব ভালো বল করছে।’ মাঠে মুস্তাফিজের পরিবর্তনটা খুব ভালোভাবে চোখে পড়ছে খুলনার আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তুষার ইমরানের চোখেও, ‘মাঠের বাইরে ওকে আগের মতোই দেখছি...লাজুক, ভদ্রছেলে। কিন্তু খেলায় আগের চেয়ে অনেক বেশি সিরিয়াস। আগে তো নিয়মিত উইকেট পেত না, এবার পাচ্ছে।’ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটই একজন ক্রিকেটারের মোক্ষধাম। মুস্তাফিজ এরই মধ্যে পৌঁছে গেছেন সেখানে। তার পরও ঘরোয়া ক্রিকেটটা আগের চেয়ে বেশি মন দিয়ে খেলার একটাই কারণ—প্রতিদিনই নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তাড়না। সেটি ফুটে বেরোল তাঁর কথাতেও, ‘আমি আরও ভালো বল করতে চাই। সেটা ঘরোয়া ক্রিকেটই বলেন বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।’ এখনো গ্রামের রাস্তায় সাইকেল চালাতে চালাতে হঠাৎ মাঠে খেলতে নেমে পড়া এই তরুণের রক্তেই ক্রিকেট। মাঠে নামলে ভুলে যান খেলাটা আন্তর্জাতিক নাকি পাড়ার। ক্রিকেট তাঁর কাছে শুধুই আনন্দের উপলক্ষ, ‘গ্রামের ক্রিকেট থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, সবই আমার কাছে এক রকম। সবখানে খেলেই আনন্দ পাই।’ তারকাখ্যাতি পেয়ে যাওয়ার পরও জাতীয় লিগটা সে আনন্দের নেশাতেই খেলছেন মুস্তাফিজ। অভিষেক ওয়ানডেতেই ৫ উইকেট পাওয়া এই বোলার এখনো ড্রেসিংরুমে সিনিয়র খেলোয়াড়দের বক্তৃতার মনোযোগী শ্রোতা। অনুশীলন, টিম মিটিং বা দলের অন্য যেকোনো কিছুতে এখনো একজন নবীন ক্রিকেটারের মতোই উপস্থিতি। পরিবর্তন যা হওয়ার তা হয়েছে শুধুই মাঠে। মুস্তাফিজের কাছে সবার চাওয়াও এটাই। ড্রেসিংরুমের লাজুক, শান্ত ছেলেটি মাঠে তুলুক বিষধর ফণা। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মিল খুঁজে পেয়ে তৃপ্ত মনে হচ্ছে খুলনার অধিনায়ক রাজ্জাককেও, ‘দলে এ রকম বোলার থাকলে সব অধিনায়কেরই সুবিধা।’- প্রথমআলো ২০ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/আসিফ/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে