শনিবার, ০১ এপ্রিল, ২০১৭, ০৩:৪৬:১০

এক থাপ্পড় আর ২৭৫ টাকা বদলে দিয়েছিল রোহিত শর্মার জীবন!

এক থাপ্পড় আর ২৭৫ টাকা বদলে দিয়েছিল রোহিত শর্মার জীবন!

স্পোর্টস ডেস্ক: দুটো ঘটনা পুরোদস্তুর বদলে দিয়েছিল রোহিত শর্মাকে। বলা ভালো, ওই দুটো ঘটনা না ঘটলে আজ হয়তো রোহিতকে দেখতেই পেতেন না ক্রিকেটভক্তরা। ভারতীয় ক্রিকেটও হারাত সোনার ছেলেকে। কী সেই ঘটনা? রোহিতের কোচ দীনেশ লাঢ এবেলা.ইনকে বললেন, আমি কোনো ছাত্রের গায়ে সাধারণত হাত তুলি না। বকাবকি করি। কিন্তু মারধরের রাস্তায় হাঁটি না। কিন্তু দুজনের গায়ে হাত তুলতে বাধ্য হয়েছিলাম। একজন রোহিত। আর দ্বিতীয় জন আমার ছেলে সিদ্ধেশ। গুরুর হাতের মার খেয়ে দুজন শিষ্যর জীবন বদলে গিয়েছে।

দ্রোণাচার্য এর হাতে এমন মার সব শিষ্যই তো খেতে চাইবেন। শুক্রবার মাঝেরহাটের ইস্টার্ন রেলওয়ে স্পোর্টস একাডেমিতে বসে স্মৃতিরোমন্থন করে দীনেশ বলছিলেন, মুম্বাইয়ের ক্রিকেটমহলে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে। কিছুতেই উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসা চলবে না। ভালো ডেলিভারিতে আউট হলে অন্য কথা। খারাপ বলে আউট হওয়া অপরাধ। রোহিত তখন স্কুলের ছাত্র। ১১/১২ বয়স। একটা ম্যাচে নিজের উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলো। ম্যাচটা ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল। রোহিতের স্কুল স্বামী বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলও জয়ের দোরগোড়া থেকে ফিরে এলো। ম্যাচটা হারতে হলো শেষমেশ। ওর আউট হওয়ার ধরন দেখে আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না। রোহিতের কানের পাশে কষিয়ে একটা থাপ্পড় মেরে বসলাম। ওই পেল্লাই থাপ্পর না খেলে রোহিত হয়তো নিজের ভুলও বুঝতে পারতেন না।

দেশের হয়ে এখনও ব্যাট হাতে নামলে গুরুবচন তার কানে বাজে। ক্রিজ কামড়ে পড়ে থাকার চেষ্টা করেন রোহিত। একবার সেঞ্চুরির গণ্ডি পেরোলেই গাড়ি সিগন্যাল মানে না। বিপক্ষের বোলারের রাতের ঘুম কেড়ে নেন এই মুম্বাইকর। সেঞ্চুরি থেকে অবলীলায় ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছে যান। অর্থাৎ দীর্ঘসময় ধরে ক্রিজে টিকে থাকার মন্ত্র সেই ছোটবেলাতেই রোহিতের কানে ঢুকে দিয়েছিলেন গুরু। সেই মন্ত্রর জোরেই রোহিত এখনও এগিয়ে চলেছেন। এ তো গেল রোহিতের কথা। ছেলে সিদ্ধেশকে মারতে গেলেন কেন বাবা? স্কুলের একটি ম্যাচে সিদ্ধেশ দারুণ একটা ডেলিভারিতে পরাস্ত হয়েছিলেন। বল সোজা চলে যায় উইকেটকিপারের হাতে। সিদ্ধেশ কাউকে কিছু না বলে পিচ ঠুকতে ক্রিজের বাইরে বেরিয়ে পড়েন। সেই সুযোগে উইকেটরক্ষক বেল উড়িয়ে দেন। দীনেশ বসে খেলা দেখছিলেন। ছেলের হারাকিরি সহ্য করতে পারলেন না। সিদ্ধেশ ফিরতেই সপাটে এক চড় কষিয়ে দিলেন ছেলের কানের পাশে। সিদ্ধেশ এখন আইপিএল এর দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সম্পদ। এই দলের অধিনায়ক যে আবার রোহিত।

চোট-আঘাতের জন্য ভারতীয় দলের বাইরে এখন রোহিত। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ধুন্ধুমার টেস্ট সিরিজ মাঠের বাইরে বসেই দেখতে হয়েছে তাকে। দেওধর ট্রফি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন এই দুর্দান্ত প্রতিভা।

আইপিএলের জন্য এখন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের শিবিরে যোগ দিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত। দলের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন 'বহুযুদ্ধের ঘোড়া'। আইপিএল শেষ হলেই ১ জুন থেকে বিলেতে বসছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসর। সেই টুর্নামেন্টকেই 'পাখির চোখ' করছেন রোহিত। দীনেশ বলছিলেন, সিদ্ধেশ আর রোহিতকে একটাই পরামর্শ দিয়েছি। আইপিএল এ স্ট্রেট ব্যাটে খেলে যাও। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট মানেই যে ধুমধাড়াক্কা চালাতে হবে তা নয়। ক্রিকেটের অ-আ-ক-খ মনে রেখে খেলে যাও। তাহলেই দেখবে রান আসবে। আন্তরেল টুর্নামেন্ট খেলতে কলকাতায় দলবল নিয়ে এসেছেন দীনেশ। তার দল ওয়েস্টার্ন রেলওয়ে পরের পর্বে পৌঁছনোর গন্ধ পেতে শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যে।

শুক্রবার বিকেলে দীনেশ বলছিলেন, রোহিতের জীবনের এই ঘটনাটা অনেকেরই জানা নেই। এই ঘটনা না ঘটলে আজ আপনারা রোহিত শর্মাকে দেখতেই পেতেন না।

টাইম মেশিনের সাহায্য না নিয়ে দীনেশ ফিরে গেলেন সেই পুরনো দিনে। রোহিত তখন বছর দশেকের বাচ্চা ছেলে। প্রতিভা অন্বেষণের কাজে ব্যস্ত দীনেশ। বোরিভালিতে গিয়ে দেখেন একটা বাচ্চা ছেলে অফ স্পিন বল করছে। ছেলেটির বোলিং দেখে মুগ্ধ হয়ে যান কোচ। সঙ্গে সঙ্গে ছুটলেন ছোট্ট রোহিতের বাড়ি। তাঁর উদ্দেশ্য তখন অন্য। ছেলেটিকে সঠিক দিশা দেখাতে হবে। বড় ক্রিকেটার করে তুলতে হবে। দীনেশ নিজে স্বামী বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই স্কুলে রোহিতকে ভর্তি করানোর উদ্দেশ্য নিয়ে দীনেশ হাজির হন ছাত্রের বাড়িতে। রোহিতের অভিভাবকদের জানালেন, স্কুলের অ্যাডমিশন ফি মকুব করে দেওয়া হবে। কিন্তু মান্থলি ফি বাবদ ২৭৫ টাকা দিতে হবে।

সময়টা তখন ১৯৯৮। সেই সময়ে ২৭৫ টাকা অনেক। রোহিতের পরিবারের পক্ষে প্রতি মাসে ওই ২৭৫ টাকা দেওয়াও সম্ভব ছিল না সেই সময়ে। ত্রাতার ভূমিকায় আবারও অবতীর্ণ হলেন দীনেশ। স্কুল কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়েসুঝিয়ে ওই মাসিক ২৭৫ টাকাও মকুব করে দিলেন। রোহিতকে কাছে পেয়ে মনের মতো করে শেখাতে লাগলেন ‘দ্রোণাচার্য’। তখনও রোহিতের ব্যাটিং প্রতিভার সঙ্গে পরিচিত হননি কোচ। একদিন ব্যাট হাতে রোহিতকে দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন তিনি। মনে মনে নিজের ভুল বুঝতে পারলেন অভিজ্ঞ কোচ। ব্যাট হাতে রোহিতকে না দেখলে হয়তো তাঁকে পুরোদস্তুর বোলারই বানিয়ে ফেলতেন তিনি। ভারতও হারাত দুরন্ত এই প্রতিভাকে। দীনেশের হাতের থাপ্পর আর স্কুলের ফি বাবদ ২৭৫ টাকা মকুব করা না হলে আজকের রোহিত শর্মাকে পেতই না ভারত।
০১ এপ্রিল ২০১৭/এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে