রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৭, ০৭:৪৭:২১

‘দেখছো? ৬০০ টেকা পাবা। খেলবা ক্রিকেট?’

‘দেখছো? ৬০০ টেকা পাবা। খেলবা ক্রিকেট?’

আরিফুল ইসলাম রনি: ৭৬ মিলিয়ন থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আট বছরের পরিক্রমায় আইসিসি থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পেতে যাচ্ছে বিসিবি। মাঠের ক্রিকেটে সাফল্যের সঙ্গে দেশের ক্রিকেটে বাড়ছে স্পন্সরদের জোয়ার। দাবী করা হয়, বিপিএল আয়োজন আর্থিক দিক থেকে দারুণ সফল। ফুলে ফেঁপে উঠছে বিসিবির কোষাগার। অথচ আজকে জানলাম, দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে বিসিবি!

সেটাই যদি না হয়, তাহলে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে মেয়ে ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি কেন হবে ৬০০ টাকা!

বিসিবি উইমেন্স উইং চেয়ারম্যান বলেছেন, স্পন্সররা কিপটা। ছেলেদের ক্রিকেটে কোটি কোটি টাকা দিলেও মেয়েদের ক্রিকেটে টাকা দেয় না। শুনে হাসিও পায়, মেজাজও খারাপ হয়।

প্রথমত, ন্যূনতম স্পন্সর না পাওয়া উইমেন্স উইংয়ের ব্যর্থতা, বিসিবির মাকেটিংয়ের ব্যর্থতা, সর্বোপরি বিসিবির ব্যর্থতা। স্পন্সরদের কাছে ঠিক ভাবে তুলে ধরতে পারলে অন্তত মিনিমাম স্পন্সর না পাওয়ার কারণ নেই। আবার উল্টোদিক থেকে দেখলে, মেয়েদের ক্রিকেটের সূচি নেই, পরিকল্পনা নেই, খেলা নেই, ক্যাম্প নেই ...স্পন্সররা আসবে কেন? মেয়েদের পরের আন্তর্জাতিক ম্যাচটি কবে, কেউ জানে না। নিকট-ভবিষ্যতে কিছু নাই।

দ্বিতীয়ত, মেয়েদের ক্রিকেটে স্পন্সরদের আগ্রহের কমতি গোটা ক্রিকেট দুনিয়ারই বাস্তবতা। সব দেশেই মেয়েদের ক্রিকেটে স্পন্সর কম, টাকা কম। বোর্ডের অন্যান্য সব খাতের আয় থেকে ভর্তুকি দিয়েই মেয়েদের ক্রিকেটকে অনুপ্রাণিত করতে হয়, উৎসাহ দিতে হয়, এগিয়ে নিতে হয়। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মত দেশগুলির বোর্ড এভাবে প্রণোদনা দিয়েই মেয়েদের ক্রিকেটকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে। আইসিসিও মেয়েদের ক্রিকেটকে সেভাবেই প্রমোট করে একটা জায়গায় এনেছে। বিসিবি উল্টো।

ছেলেদের জাতীয় লিগে ম্যাচ ফি প্রথম স্তরে ২৫ হাজার টাকা, দ্বিতীয় স্তরে ২০ হাজার। বিসিএলে ম্যাচ ফি ৫০ হাজার টাকা। মেয়েদের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশীপ যদিও ছেলেদের জাতীয় লিগের মত বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচ নয়, একদিনের ম্যাচ। তার পরও ৬০০ টাকা? ভীষণ লজ্জাজনক।

ছেলেদের ক্রিকেটে ম্যাচ ফির বাইরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের মাসিক বেতনও আছে। ১২০ জন দিয়ে শুরু হয়ে এখন প্রথম শ্রেণির চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার ৮৫ জন। তিনটি ক্যাটেগরিতে বেতন দেওয়া হয় তাদের। মেয়েদের কেন্দ্রীয় চুক্তির বাইরের ক্রিকেটারদের আর কোনো বেতন নেই। কেন্দ্রীয় চুক্তির অঙ্কটিও খুব ভদ্রস্থ কিছু নয়। তিনটি গ্রেডে দেওয়া হয় ৩০, ২০ ও ১০ হাজার টাকা।

গতবার ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোটামুটি ভালো ছিল মেয়েদের পারিশ্রমিক। এবার মাঠ নাই বলে প্রিমিয়ার লিগও হচ্ছে না। কবে হবে, নিশ্চিত করে বলতে পারে না কেউ।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের মেয়েদের পারফরম্যান্স খারাপ। বেশ খারাপ। মূল কারণ এটাই।খেলা নেই। টাকা নেই। বেশির ভাগ জাতীয় ক্রিকেটারই অনেক দিন থেকে খেলছেন, উন্নতিটা প্রত্যাশিত নয়। তার পরও তাদেরকেই রাখতে হচ্ছে, কারণ পাইপ লাইনে তেমন কেউ নেই।

    নিয়মিত লিগ হয় না। খেলা নেই। ক্যাম্প নেই। ক্রিকেটার আসবে কোত্থেকে? টাকা-পয়সা যে পরিমাণ দেওয়া হচ্ছে, নতুন মেয়েরা আসবে কেন? আজকে কোনো মেয়ে যদি বাবাকে গিয়ে বলে যে ‘ক্রিকেটার হব", বাপজান কানটা ধরে নিয়ে নিউজ দেখাবে, ‘দেখছো? ৬০০ টেকা পাবা। খেলবা ক্রিকেট?’

স্পন্সর না আসুক, অন্য খাত থেকে টাকা না দেওয়া হোক, অন্তত বিসিবি পরিচালকরা বোর্ডের টাকায় যে বিলাসিতা দেখান, ছেলেদের জাতীয় দলের বিভিন্ন ট্যুরে যে পরিমাণ টিএ/ডিএ পান (এখন সম্ভবত দুটি মিলিয়ে ট্যুরপ্রতি ৫ হাজার ডলারের প্যাকেজ), দলের একেকটা সফরে যতবার দেশের বাইরে আসা-যাওয়া করেন, সেখান থেকে সামান্য কিছু টান দেয়া হলেও মেয়েদের ক্রিকেট বেশ বর্তে যায়!-খেলাধুলা
এমটিনিউজ২৪ডটকম/টিটি/পিএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে