শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭, ০৩:৫৯:৫৬

দান-অনুদানে প্রশংসনীয় বিসিবি

দান-অনুদানে প্রশংসনীয় বিসিবি

স্পোর্টস ডেস্ক: অসুস্থ খালেদ মাহমুদকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে সিঙ্গাপুর পাঠানোতে আশ্চর্যের কিছু নেই। দেশের সবচেয়ে ধনী ফেডারেশন তার পরিচালকের উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করবে, সেটিই স্বাভাবিক। আশার কথা এই যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) ছোট পদের চাকুরেও চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনদের সুদৃষ্টির বাইরে নেই। যে কারণে সম্প্রতি সুচিকিৎসায় নতুন জীবন পেয়েছেন গাড়িচালক মারুফ হোসেনও।

ঢাকার রাস্তায় দক্ষ হাতে স্টিয়ারিং সামলাতে জানা এই কর্মীর হৃপিণ্ড বিকল হতে বসেছিল। সেটিকে সচল করার আর্থিক সংগতিও তাঁর ছিল না। তবে বিসিবি পাশে দাঁড়ানোয় হৃপিণ্ডে ‘রিং’ পরিয়ে এখন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন মারুফ। তাঁর চিকিৎসায় প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যয় করা দেশের সর্বোচ্চ ক্রিকেট প্রশাসন এখানেই উদাহরণ হয়ে উঠছে যে তাদের কাছে তারকা সাবেক অধিনায়ক-পরিচালকের পাশাপাশি নগণ্য গাড়িচালকের জীবনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কর্মীদের জন্য যা ভীষণ স্বস্তিদায়ক ব্যাপারও। এ রকম দুঃসময়ে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার আশা যে অন্তত আছে।

যা দেশের সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানেই নেই। অনুকরণীয় ব্যাপার এটিও যে বিসিবির সাহায্যের হাত শুধু নিজের অন্দরমহলেই সীমিত নেই। সেটি প্রসারিত হয়েছে বাইরেও। বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সবশেষ সভায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুমোদিত প্রায় ৪৫ লাখ টাকার অনুদানের একটি অংশ পেয়েছে সাবেক ফিফা রেফারি প্রয়াত মনির হোসেনের পরিবারও, বরাদ্দ দুই লাখ টাকা। বিসিবির কর্মীরা স্ত্রী-সন্তানের অসুস্থতায়ও আর্থিক সহায়তা পেয়ে আসছেন।

স্ত্রীর সুচিকিৎসার জন্য সাবেক ক্রিকেটার ও জুনিয়র নির্বাচক কমিটির সদস্য এহসানুল হককে আড়াই লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে সবশেষ সভায়। আইটি বিভাগের কর্মী শফিকুল ইসলামের সন্তানের চিকিৎসা-ব্যয়ের একটি বড় অংশও দিয়েছে বিসিবি। অসুস্থ সাবেক ক্রিকেটার নাহিদুল হকের জন্যও বরাদ্দ হয়েছে দুই লাখ টাকা। নানা সময়ে অসুস্থ ক্রীড়া সাংবাদিকদের চিকিৎসায়ও যথাসাধ্য অবদান রেখে এসেছে বিসিবি।

অবশ্য শুধু চিকিৎসাই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও চাইলে বিসিবির আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যাচ্ছে। তা পেয়েছে হকি এবং সাঁতার ফেডারেশনও। সম্প্রতি ‘সেরা সাঁতারুর খোঁজে বাংলাদেশ’ নামের আয়োজনে যে ব্যয় হয়েছে, এর বড় একটি অংশের জোগান দিয়েছে বিসিবি। তারা সাঁতার ফেডারেশনকে দিয়েছিল এক কোটি টাকা। আকালে বিসিবির শরণাপন্ন হয়ে সমান অঙ্কের টাকা পেয়েছে হকি ফেডারেশনও। বিদেশি কোচের বেতন ও প্রশিক্ষণ খাতে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এমনকি বিসিবির সহযোগিতায় ধন্য হয়েছেন গ্র্যান্ড মাস্টার জিয়াউর রহমানও।

২০১৩ সালে দাবা ফেডারেশনের অর্থাভাবে নরওয়েতে তাঁর বিশ্বকাপযাত্রাই থমকে যেতে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি যেতে পেরেছিলেন বিসিবি তাঁর পৃষ্ঠপোষক হয়ে যাওয়ায়। তাদের দেওয়া দুই লাখ টাকায় বিশ্বকাপে খেলে এসেছিলেন জিয়া। দেশের সবচেয়ে সামর্থ্যবান ফেডারেশন তাই অন্য খেলার ভুবনেও রীতিমতো অভিভাবক এবং বড়ভাইসুলভ ছায়ার বিস্তারই ঘটিয়ে চলেছে যেন।

নিজ চৌহদ্দির মধ্যে তো সেই ছায়াটা আরো বড়। সেখানে ছোট-বড় সবার পাশেই দাঁড়াচ্ছে বিসিবি। দেরিতে হলেও বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই করিমের চিকিৎসার জন্য দেওয়া হচ্ছে পাঁচ লাখ টাকা। অসুস্থ গত শতাব্দীর ’৭০-এর দশকের ক্রিকেটার আলতাফ উদ-দৌলা রানুও পাচ্ছেন দুই লাখ টাকা।

সবশেষ সভায় সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে ক্রিকেটারদের সংস্থা কোয়াবকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট আম্পায়ার্স অ্যান্ড স্কোরার্স অ্যাসোসিয়েশনও পাচ্ছে পাঁচ লাখ টাকা। ক্রীড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংস্থাকেও নানা সময়ে অনুদান দিয়ে আসা বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানালেন, সহযোগিতার হাত তারা আরো বাড়াতে চান। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভায় যোগ দিতে তিনি এখন কলম্বোয়।

সেখান থেকেই গতকাল সন্ধ্যায় টেলিফোনে বলছিলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই বিসিবি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিকে সহায়তা করে থাকে। ভবিষ্যতে এই কাজটিই গুছিয়ে আরো বড় আকারে করার ইচ্ছা আছে আমাদের। আমরা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের মতো কিছু একটা করতে চাই। ’সেটি করার আগেই অবশ্য বিসিবি এই দৃষ্টান্তটি রাখতে পারছে যে এর কাছে পরিচালক আর গাড়িচালকের জীবনে তফাত নেই কোনো!
১২ আগস্ট ২০১৭/এমটিনিউজ২৪.কম/হাবিব/এইচআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে