‘গত ১০ বছরের সেরা সিরিজ হতে চলেছে’
স্পোর্টস ডেস্ক : বাইশ গজ নিয়ে যতই বিতর্কে জড়ান, অভ্যাস কি আর যায়? পড়ন্ত বিকেলে নেট প্র্যাকটিস চলার ফাঁকেই অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে নিয়ে সটান হাজির মোহলির বাইশ গজের সামনে। খুঁটিয়ে উইকেট দেখার পর পিচ কিউরেটর দলজিৎ সিংয়ের সঙ্গে আলোচনা। ওয়াংখেড়ের উইকেট নিয়ে যতই বিতর্কে জড়ান, সেদিকে কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই ভারতীয় টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীর। ওয়াংখেড়েতে উইকেট নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন। সুধীর নায়েক পর্যন্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তবু সেই চিরাচরিত অভ্যাসের হেরফের হয়নি।
সাংবাদিক সম্মেলনে উইকেটের প্রসঙ্গ উঠতেই শাস্ত্রীচিত ভঙ্গিমায় বলে গেলেন, ‘সব দেশই উইকেটের সুবিধা নিয়ে থাকে। গোটা দুনিয়াতে এমনই হয়। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা তো এমন উইকেট তৈরি করবে না, যেখানে প্রথম দিন থেকেই বল ঘুরবে। আমাদেরও হোম অ্যাডভান্টেজ নিতে হবে।’ পরোক্ষে সেই স্পিনিং ট্র্যাকের কথাই বলে গেলেন। দলজিৎ সিংকে সেই রকম কোনও নির্দেশ দিয়েছেন কিনা জানা যায়নি। কতটা সন্তুষ্ট, সেটাও অজানা থেকে গেল। তবে ওয়াংখেড়ে বিতর্ক অবশ্য সযত্নে এড়িয়ে গেলেন ভারতীয় টিম ডিরেক্টর, ‘ওটা আমার কাছে এখন অতীত।’
কোথায় যেন হারিয়ে গেছে সেই আগ্রাসী মানসিকতা। ধীরস্থির, লক্ষ্যে অবিচল। নেট বোলারদের নির্দেশ, শর্ট বল দাও। নিজেকে ফিরে পাওয়ার মরিয়া প্রয়াস। এই মোহালিতেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে স্বপ্নের অভিষেক। ফর্মে নেই, ফর্মে নেই, শিখর ধাওয়ানকে নিয়ে চারিদিকে হইচই। ভারতীয় দলের কি সেদিকে কোনও ভ্রূক্ষেপ রয়েছে ? টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রীর কথা শুনলে তেমন কিছু মনে হবে না।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কঠিনতম সিরিজ খেলতে নামার আগে দলের ওপেনারকে আড়াল করার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা। দলের ওপেনার নাকি ফর্মেই রয়েছেন ! এমনই ধারণা টিম ডিরেক্টরের। কথায় আর কাজে কিন্তু মিল পাওয়া গেল না। সত্যিই যদি ভাল ফর্মে থাকেন, তাহলে আর নেটে বাড়তি সময় দেবেন কেন? নেটে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকলেন শাস্ত্রী। ছন্দে থাকলে ধাওয়ানই হতে পারেন ডেল স্টেন, মর্নি মরকেলদের বিরুদ্ধে সেরা বাজি। এটা বিলক্ষণ বোঝে টিম ম্যানেজমেন্ট।
টোয়েন্টি ২০ ও একদিনের সিরিজ হারিয়ে কতটা চাপে ভারত? এই সামান্য বিষয়টা অনুধাবন করার জন্য নিশ্চিতভাবেই বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাছাড়া এমন একটা দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে, টেস্টে র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে। সবচেয়ে বড় কথা, ২০০৬ সালের পর বিদেশের মাটিতে কোনও সিরিজ হারেনি প্রোটিয়ারা। সিরিজ যে উত্তেজক হবে, কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন রবি শাস্ত্রী, ‘গত ১০ বছরের সেরা সিরিজ হতে চলেছে। আমার মনে হয় দারুণ উত্তেজক সিরিজ হবে। এত বড় সিরিজ আগে কখনও দেখিনি। ক্রিকেটারদের কাছে বড় সুযোগ। জিতলে সত্যিই দারুণ অ্যাচিভমেন্ট হবে। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ১৯৮০–র দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ জেতার মতো ব্যাপার হবে।’ উত্তেজনা রয়েছে, চাপ রয়েছে, রয়েছে ফিরে আসার লড়াইও। যা আঁচ করা গেল টিম ইন্ডিয়ার নেট সেশনে।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৫ বোলার থিওরি সাফল্য এনে দিয়েছে। দেশের মাটিতেও কি সেই একই থিওরি ? সব কিছু নির্ভর করছে পরিবেশ–পরিস্থিতির ওপর। একই উপমহাদেশের উইকেট হলেও পরিবেশ আলাদা। মোদ্দা কথা হল বিপক্ষের ২০টা উইকেট তুলে নেওয়া। তাতে যদি ৫ বোলার কম্বিনেশনে যেতে হয়, যাবে। শাস্ত্রী বলছিলেন, ‘উইকেট আর পরিবেশের ওপর নির্ভর করবে টিম কম্বিনেশন। যদি তেমন কন্ডিশন হয়, তাহলে ৪ স্পিনার খেলাব। ২০টা উইকেট তোলার জন্য কম্বিশন তৈরি করতে হবে।’ চোট সারিয়ে অশ্বিন দলে ফিরে এসেছেন। তাঁকে নিয়েই বেশি চিন্তিত দক্ষিণ আফ্রিকা। আরও দুজন স্পিনার যে রয়েছেন, শাস্ত্রী সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে গেলেন।
টোয়েন্টি ২০ সিরিজ ও একদিনের সিরিজে পরপর হার বদলে দিয়েছে পরিস্থিতি। টেস্ট সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর বিশাল চাপ, বিরাট কোহলিকে কঠিন চ্যালেঞ্জের সামনে ফেলে দিয়ে গেছেন ধোনি। এইরকম কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করাই এখন কোহলির কাছে অগ্নিপরীক্ষা।
নেতার ওপর রবি শাস্ত্রীর অগাধ আস্থা ধরা পড়ল, যখন তার মুখে শোনা গেল, ‘প্রায় ১ বছর হতে চলেছে বিরাট কোহলি টেস্টের দায়িত্ব। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ ছিল ওর কাছে পরীক্ষা। সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে। দেখিয়ে দিয়েছে ভাল নেতা হওয়ার সব গুণ ওর মধ্যে রয়েছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কোহলির অগ্নিপরীক্ষা। বিশ্বের ১ নম্বর দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে। ওর অনেক কিছু শেখার রয়েছে।’ শুধু কোহলির কাছে অগ্নিপরীক্ষা নয়, পরীক্ষায় বসতে হবে শিখর ধাওয়ান–সহ অন্য ক্রিকেটারদেরও। ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজ খেলার অভিজ্ঞতা এই ভারতীয় দলের খুব বেশি ক্রিকেটারের নেই। এই জায়গাতে কিছুটা হলেও দুর্বলতা রয়েছে।
শেখরের ব্যাপারটা আবার অন্য। একদিনের সিরিজে ব্যর্থতার পর টেস্ট সিরিজে ছন্দ ফিরে পাওয়ার অতীত রেকর্ড রয়েছে। মোহালির মতো পয়মন্ত মাঠ। কোহলিকে যেমন চাপ নিয়ে মাঠে নামতে হবে, চাপ থাকবে শেখরের ওপরও। এই মোহালিই তাকে শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। ইন্দরজিৎ সিং বিন্দ্রার নামাঙ্কিত স্টেডিয়াম কিন্তু টেনে নামাতে দ্বিধা করবে না। আক্রমণাত্মক ফিল্ড সাজিয়ে ডেল স্টেন, মর্নি মরকেলরা অপেক্ষা করে থাকবেন, যে সুযোগ একদিনের ম্যাচগুলিতে পায়নি।
৪ নভেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস