শেহবাগের সেই ভয়ংকর রুপ আজও ভোলেননি স্টেন
স্পোর্টস ডেস্ক : আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। ভারতীয় টিমের চৌহদ্দির মধ্যেও তিনি নেই। তবু দুঃস্বপ্নের মতো এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে প্রোটিয়াদের বোলিংয়ের সেরা অস্ত্রকে। ২০০৮–এর চেন্নাই টেস্টের স্মৃতি যে খুবই ভয়ঙ্কর ডেল স্টেনের কাছে।
নেটে ঘাম ঝরিয়ে মোহালির লাইব্রেরি কাম সাংবাদিক সম্মেলন কক্ষে এসে বসেছেন। টেস্ট সিরিজ, নিজের ব্যক্তিগত পারফরমেন্স নিয়ে প্রশ্ন উঠে আসছিল। উঠে এল ভারতীয় ব্যাটিংশক্তির কথা। বর্তমান প্রজন্মের ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের শ্রদ্ধা করলেও, শেহবাগের কথা আজও ভুলতে পারেননি ডেল স্টেন।
প্রোটিয়া বোলিংয়ের সেরা অস্ত্রের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘অতীতে আমি ভারতে টেস্ট সিরিজ খেলে গেছি। শেহবাগের মতো ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে বোলিং করাটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। চেন্নাইয়ে আমাদের বিরুদ্ধে ৩০০–র বেশি রান করেছিল। ওর বিরুদ্ধে একটু ভুল করলেই, ধোঁয়ার মতো উড়িয়ে দিত। এখনকার ব্যাটিং শক্তিও যথেষ্ট ভাল, কিন্তু শেহবাগের মতো কেউ নেই।’
কোহলিদের জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা ছকে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা টিম ম্যানেজমেন্ট। পরিকল্পনার কথা গোপন রাখলেও ফিল্ডিং সাজানোর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে বলে জানালেন স্টেন। তিনি বলছিলেন, ‘এর কোনও রকেট সায়েন্স নেই। শচীনকে যদি স্টাম্পের ওপর বল করা হত, পয়েন্টের ওপর দিয়ে উড়িয়ে দিত। মুরলী বিজয় একই বল আবার কভার দিয়ে খেলবে। সুতরাং কোন পজিশনে ফিল্ডার রাখতে হবে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।’
২০০৬ সালের পর বিদেশের মাটিতে সিরিজ হারেনি। অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ভারতে পদার্পণ। কিছুটা পূরণ হয়েছে। টেস্ট সিরিজ জিতলে বৃত্তটা সম্পূর্ণ হবে। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের যেমন মোকাবিলা করতে হবে, সামলাতে হবে অশ্বিনদের স্পিন। সবকিছুর চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য যে তারা তৈরি, অকপট স্বীকারোক্তি ডেল স্টেনের। টোয়েন্টি ২০ সিরিজ ও একদিনের সিরিজ জিতলেও নিজেদের ফেবারিট হিসেবে দেখছেন না স্টেন।
যে যুক্তি তিনি দিয়ে গেলেন, অস্বীকার করার উপায় নেই, ‘মনে করি না আমরা ফেবারিট। আমরা ভারতের ঘরের মাঠে খেলব। ভারতের মাটিতে খেলাটা সত্যিই কঠিন কাজ। টোয়েন্টি ২০ ও একদিনের সিরিজ জেতার পর আমাদের ওপর প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে। টেস্ট সিরিজে ভাল ফল করার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’ অন্য দুই ফরম্যাটের তুলনায় টেস্ট ক্রিকেটই বেশি পছন্দ স্টেনের। কেনই বা হবে না। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রান বাঁচানোর দিকে নজর দিতে হয়। আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের সুযোগ থাকে না।
টেস্টে কিন্তু পরীক্ষা–নিরীক্ষার সুযোগ থাকে। স্টেন বলছিলেন, ‘টেস্টে বোলিং দারুণ উপভোগ করি। উপমহাদেশের উইকেটে বোলিং করা জোরে বোলারদের কাছে খুবই কঠিন। কিন্তু ভারতে বোলিং করতে দারুণ পছন্দ করি। তবে একটা কথা বলতে পারি, ভাল সিরিজ হতে চলেছে। আমাদের বোলিং শক্তি যথেষ্ট ভাল, ব্যাটিং লাইন–আপও দুর্দান্ত। ভাল পারফরমেন্স করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।’
ইতিহাস গড়তে প্রোটিয়া শিবির কতটা মরিয়া নেট সেশনেই পরিষ্কার। অবিরত বোলিং করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন নেট বোলাররা। নেটের পাশে চেয়ারে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। জোরে বোলারদের খেলার পর নেট থেকে বেরিয়ে এলেন এ বি ডি’ভিলিয়ার্স। ডেকে নিলেন দুই স্পিনারকে। এবার স্পিনারদের বিরুদ্ধে নিজেকে ঝালিয়ে নেওয়ার পর্ব। হাসিম আমলা, ফাফ ডু’প্লেসিসরা নিস্তার দিলেন না পাঞ্জাবি নেট বোলারদের।
টোয়েন্টি ২০ ও একদিনের সিরিজ জেতার পরও যে খিদে মেটেনি, তা বোঝার জন্য এই ছবিটাই যথেষ্ট। ওয়াংখেড়েতে একদিনের সিরিজ জেতার পর ডি’ভিলিয়ার্সের মুখে শোনা গিয়েছিল, ‘টেস্ট সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়তে চাই।’ শুধু তিনি নন, স্বপ্ন দেখছে গোটা দক্ষিণ আফ্রিকা শিবির। যার সেরা বিজ্ঞাপন ডেল স্টেন। নেটেও যেভাবে আমলাদের আক্রমণাত্মক মেজাজে বোলিং করছিলেন, শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলিদের কপালে দুর্দশা নেমে আসার প্রবল সম্ভাবনা।
৪ নভেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসবি/এসএস