বৃহস্পতিবার, ০৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:১১:৫৯

বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন রেকর্ড হতে চলেছে বিরাট কোহলি'র

বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন রেকর্ড হতে চলেছে বিরাট কোহলি'র

স্পোর্টস ডেস্ক : জন্মদিনে দেশের মাটিতে প্রথম নেতৃত্বের আর্ম ব্যান্ড পরে মাঠে নামার সৌভাগ্য বিশ্ব ক্রিকেটে কোনও ক্রিকেটারের জীবনে ঘটেছে, রেকর্ড বুকে তেমন উল্লেখ নেই। এক সন্ধিক্ষণের সামনে দাঁড়িয়ে ভারতীয় টেস্ট দলনেতা বিরাট কোহলি। মুহূর্তটা উপভোগ করার সময়। কিন্তু ততটা কি স্বস্তিতে ? টোয়েন্টি ২০ ও একদিনের সিরিজ হারিয়ে যে উত্তরসূরিকে কঠিন চাপের মুখে ফেলে দিয়ে গেছেন ধোনি। মোহালিতেই খুঁজে পেতে চান চাপমুক্তির পথ। দুই দেশের এমন দুই আইকনের নামের সঙ্গে সিরিজ জড়িত, যারা শান্তির দূত হিসেবে পরিচিত। আগ্রাসন নামক শব্দটাই তাদের অভিধানে ছিল না। গান্ধী–ম্যান্ডেলার নামাঙ্কিত সিরিজে ভিন্ন পথের দিশারি বিরাট কোহলি। আগ্রাসনের রাস্তা থেকে সরে আসার কথা বিন্দুমাত্র ভাবছেন না। সেটা যে কোহলির চরিত্র বিরোধী। যতই সমালোচনার ঝড় বয়ে যাক, চরিত্র বদলাতে নারাজ টিম ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন। ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’। মোহালিতে মাঠে নামার আগে বারবার ঘুরেফিরে আসছে শব্দটা। টোয়েন্টি ২০ কিংবা একদিনের সিরিজে সেই সুবিধে কাজে লাগাতে পেরেছে কি টিম ইন্ডিয়া ? তবু সেই প্যানপ্যানানি থেকেই গেছে। কোহলি বলছিলেন, ‘যখন আমরা বিদেশের মাটিতে খেলতে যাই, তখন কিন্তু এই বিষয়টার দিকে ফোকাস করা হয় না। আর দেশের মাটিতে খেলতে নামলেই উইকেটের ওপর সকলের নজর থাকে। বিদেশের মাটিতে যতই সমস্যায় পড়ি না কেন, আমরা কিন্তু কোনও অজুহাত দিই না।’ মোহালিতে ঘূর্ণি উইকেট পাবেন না, বিলক্ষণ জানেন। ৫ স্বীকৃত বোলার নিয়ে মাঠে নামার মতো বিলাসিতা দেখাতে পারছেন না কোহলি। দুই জোরে বোলার, দুই স্পিনার। তৃতীয় স্পিনারের দায়িত্ব সামলাতে হবে রবীন্দ্র জাদেজাকে। মোহালি মানেই গতিময়, বাউন্সি উইকেট। একসময় এই ছবিটাই চোখের সামনে ভেসে উঠত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চরিত্র হারিয়েছে। মোহালির বাইশ গজের সেই চরিত্র আর নেই। যতটুকু ঘাস রয়েছে, মাটি ধরে রাখার জন্য। তৃতীয় দিন থেকে উইকেটে বল ঘুরবে। সব তথ্যই দিয়ে গেলেন পিচ কিউরেটর দলজিৎ সিং। ৩ জোরে বোলার খেলানোর ঝুঁকি নেবে না টিম ম্যানেজমেন্ট। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট জেতানো ইশান্ত শর্মা নির্বাসনের কারণে নেই। ভরসা উমেশ যাদব, বরুণ অ্যারনরা। তবে চোট সারিয়ে নেটে যেভাবে বোলিং করে গেলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন, বিরাট কোহলির মুখে হাসি ফুটতেই পারে। আর রবি শাস্ত্রীর সাবধানবাণী তো রয়েছেই, ‘শুধু অশ্বিন নয়, আমাদের দলে আরও দুজন স্পিনার রয়েছে।’ অশ্বিনের পাশাপাশি অমিত মিশ্র, রবীন্দ্র জাদেজাও কোহলির তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন। ব্যাটিং নিয়ে চিন্তাভাবনার কোনও জায়গা নেই। একদিনের সিরিজে যতই অফ ফর্মে থাকুন, ডেল স্টেনদের শুরুতে সামলানোর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবেন না শেখর ধাওয়ান। সঙ্গে মুরলী বিজয় তো রয়েছেনই। মিডল অর্ডারে এত ‘জ্যাম’ চেতেশ্বর পুজারাকে প্রথম একাদশের বাইরেই কাটাতে হবে। বেচারি পুজারা, অনুশীলনের একেবারে শেষ পর্বে নেটে ঢোকার অনুমতি পেলেন। লোকেশ রাহুল, কোহলি, রাহানে, রোহিতদের ভিড়ে যে জায়গা নেই। সম্মান পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে বোলারদের দিকেই তাকিয়ে কোহলি। ‘বোলাররাই টেস্ট জেতাতে পারে’, কোহলির এই মন্তব্য নিশ্চিতভাবেই অশ্বিনদের ওপর চাপ বাড়াবে। কিন্তু জন্মদিনে নেতা হিসেবে দেশের মাটিতে টেস্ট অভিষেকের প্রাক্কালে তিনি নিজে কতটা চাপে রয়েছেন, বুঝতে দিলেন না। পরপর টোয়েন্টি ২০ ও একদিনের সিরিজ সরিয়ে কোহলিকে যে ভয়ানক চাপের সামনে ফেলে দিয়ে গেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য টেস্ট সিরিজই শেষ সম্বল। ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন বলে গেলেন, ‘আমার কাছে দারুণ উত্তেজক দিন। জন্মদিনে অধিনায়ক হিসেবে দেশের মাটিতে প্রথম মাঠে নামব।’ বাইশ গজে ডেল স্টেনরা কতটা উপভোগ করতে দেবেন সন্দেহ আছে। সে কথা বিলক্ষণ জানেন নেতা কোহলিও। নিজের বোলারদের ওপর আস্থা যেমন রয়েছে, তেমনি দায়িত্ববোধও বাড়িয়ে দিলেন। ভারতীয় দলের ক্যাপ্টেন বলছিলেন, ‘৬ ব্যাটসম্যান, ১ জন উইকেটকিপার নিয়ে ৫০০ রান করলেও ১ জন বোলারের অভাব দেখা দেবে। তার থেকে যদি ৫ জন ব্যাটসম্যান, ১ জন কিপার নিয়ে ৩৫০–৪০০ রান করি, তাতে ম্যাচ জেতার সুযোগ বেশি থাকে। তবে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য আমরা তৈরি। বোলারদেরই ক্ষমতা রয়েছে টেস্ট ম্যাচ জেতানোর। ওরাই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিতে পারে।’ ধোনির স্ট্র্যাটেজির সঙ্গে কোনও দিনই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতেন না। টেস্ট সিরিজ খেলতে নামার প্রাক্কালে পূর্বসূরিকে পরোক্ষে ঠুঁকেও গেলেন কোহলি। একদিনের সিরিজ হারের পর জোরে বোলিং নিয়ে সমস্যার কথা বলেছিলেন ক্যাপ্টেন কুল। কোহলি ভিন্ন মতের দিশারি। বলছিলেন, ‘জোরে বোলিং নিয়ে আমাদের কোনও দুর্বলতা নেই। বিদেশের মাটিতে শেষ সিরিজ জয়ের পেছনে জোরে বোলাররা বড় ভূমিকা পালন করেছিল। ধৈর্য রাখতে হবে। টেস্ট ম্যাচে আমরা কিন্তু যথেষ্ট ধারাবাহিক। আশা করছি সেটা ধরে রাখতে পারব।’ ২১ বছর পর বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয় হয়ত আত্মবিশ্বাস এনে দেবে। কিন্তু যে মনোবল একদিনের সিরিজে হারিয়ে গেছে, তার পুনরুদ্ধার কীভাবে হবে ? সে প্রশ্নের উত্তর ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে নেই। মোহালিতেই খুঁজে পেতে চায় টিম ইন্ডিয়া। অনেক কিছুই নির্ভর করছে কিন্তু বাইশ গজের ওপর। ৫ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে