৪ উইকেটে ৭৯৩ রান, মহাবিপদে সেই শক্তিশালী দেশটি
স্পোর্টস ডেস্ক : ব্রিসবেন টেস্ট তো ধাঁধায় ফেলে দিচ্ছে সবাইকে। এ কোন গ্যাবা! যে উইকেটের নাম শুনলেই ফাস্ট বোলারদের মুখে ফুটত খুনে হাসি, যে উইকেট ব্যাটসম্যানদের মনে ভয়ের চোরা স্রোত জাগিয়ে তুলত, এ তো সেই গ্যাবা নয়।
চলতি টেস্টে নিউজিল্যান্ড বোলারদের নাকের জল চোখের জল এনে ফেলছেন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানরা। পরে টপাটপ কয়েকটা উইকেট তুলে নিয়েছে বলে তাও কিছুটা রক্ষা। এক সময় তো ৭৯৩ রানের বিনিময়ে কিউই বোলাররা তুলে নিতে পেরেছিল মাত্র ৪ উইকেট! প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ৫৫৬–এর দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ২৩৭।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ২৬৪ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে অস্ট্রেলিয়া। এগিয়ে আছে ৫০৩ রানে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৮ উইকেট হারিয়ে ৮২০ রান তুলেছে স্মিথের দল। গড়ে প্রত্যেক উইকেটে এক একটি ‘সেঞ্চুরি’!মহাবিপদে নিউজিল্যান্ড।
কালকের শেষ সেশনটা কিন্তু গ্যাবার পুরোনো স্মৃতিকে ফিরিয়ে এনেছিল। গতির ঝড় তুলে নিউজিল্যান্ড ব্যাটিং লাইন আপকে কাঁপিয়ে দিয়েছেন দুই মিচেল-স্টার্ক ও জনসন। মাত্র ১৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে মহা বিপদে পড়ে গিয়েছিল সফরকারীরা। কিন্তু আজ তৃতীয় দিনেই আবারও ‘পুরোনো’ নতুন রূপে ফিরে গেছে গ্যাবার উইকেট। ব্যাটসম্যানরা আজও ছড়ি ঘোরালেন গ্যাবার উইকেটে।
সকালে রাজত্ব করলেন কেন উইলিয়ামসন, একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে একাই দলকে এনে দিয়েছেন ৩১৭ রানের মোটামুটি এক সংগ্রহ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরিটিকে টেনে নিয়েছেন ১৪০ পর্যন্ত। এই ইনিংস খেলার পথেই এই বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০০০ রানের মাইলফলক পেরিয়েছেন এই কিউই ব্যাটসম্যান।
এর পরেই সব আলো নিজেদের দিকে নিয়ে গেলেন জো বার্নস এবং ডেভিড ওয়ার্নার। ২৩৯ রানের বিশাল লিড হাতে রেখেই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিলেন এই দুই ওপেনার। এত বড় এক লিড পেয়ে এতটাই নির্ভার ছিলেন, দুজন ঝড় তুললেন উইকেটে এসেই। মাত্র ১৭ ওভারেই ১০০ রান তুলে ফেললেন। এই নিয়ে টানা চার ইনিংসে ওপেনিং জুটিতে সেঞ্চুরি পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া দল।
ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা বার্নসই ছিলেন বেশি আক্রমণাত্মক। সেঞ্চুরির দেখাও তাই ওয়ার্নারের আগে পেয়েছেন। নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটা আবার পূর্ণ করেছেন ছক্কা হাঁকিয়ে। উল্টো দিকে ওয়ার্নারও পেয়ে যান টেস্টে নিজের ১৪তম সেঞ্চুরি। টেস্ট ইতিহাসে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে তিন তিনবার জোড়া সেঞ্চুরি করলেন ওয়ার্নার।
দশ মাস ধরে সেঞ্চুরি না-পাওয়ার সব ক্ষুধা বোধ হয় এই সিরিজেই মিটিয়ে নেবেন! এই দুই ওপেনার মাত্র ৩৭.৪ ওভারেই তুলেছিলেন ২৩৭ রান। দিনের ৪.২ ওভার বাকি থাকতেই অফ স্পিনার মার্ক ক্রেগের বলে ওয়ার্নার ১১৬ রানে আউট হওয়ায় শেষ হয়েছে এই রান বন্যা। কিছুক্ষণ পরে বার্নসও ১২৯ রানে ফিরে গেছেন ক্রেগের দ্বিতীয় শিকার হয়ে।
দুই ওপেনারই রানের চেয়ে বল কম খেলেছেন। প্রথম ইনিংসে ১৬১ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৭ রান নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান এক রেকর্ডই গড়েছেন এই দুজন। এই প্রথম কোনো টেস্টের দুই ইনিংসেই ওপেনিং জুটিতে এক শ রানের জুটি গড়তে পেরেছেন অস্ট্রেলিয়ার কোনো ওপেনিং জুটি।
এর পরই অবশ্য অস্ট্রেলিয়া ইনিংসে মৃদু ধস।
দিনের শেষ ২৫ বলে মাত্র ২৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ক্রেগই নিয়েছেন ৩ উইকেট, অন্যটি ট্রেন্ট বোল্ট। তবে তাতে কিছুই যায় আসেনি অস্ট্রেলিয়ার। এর আগেই যে লিডটা ৫০০ পেরিয়ে গেছে। টেস্ট বাঁচাতে আগামী দুই দিন অলৌকিক কিছুই করে দেখাতে হবে নিউজিল্যান্ডকে।-প্রথম আলো
৭ নভেম্বর ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর