‘রাজকন্যা’র মুখ দেখতে অামেরিকার উদ্দেশ্যে উড়াল দিলেন সাকিব
স্পোর্টস ডেস্ক : বেলা ১১টায় হোটেলের টিম মিটিংয়ে ছিলেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডের রণকৌশল নিয়েও আলোচনা করেছেন। কিন্তু মিটিং শেষ করে রুমে ফিরেই ফোনে খবরটা পেলেন সাকিব আল হাসান। সন্তানসম্ভবা স্ত্রী উম্মে আহমেদ শিশিরের সন্তান প্রসবের সময় এগিয়ে এসেছে, প্রসববেদনা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। এমিরেটস এয়ারলাইনসের রাত ৯টা ৫ মিনিটের ফ্লাইটেই তাই সাকিব উড়াল দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে। জিম্বাবুয়ে সিরিজের বাকি ম্যাচগুলোতে তাঁকে তাই আর পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের অনুরোধে সাকিব অবশ্য চেষ্টা করেছিলেন আজ সিরিজ জয়ের ম্যাচটি খেলে যেতে। কিন্তু কাল দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রে আবারও কথা বলে যখন জানলেন জরুরি পরিস্থিতি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাব্য তারিখটা এ মাসের মাঝামাঝিতে হলেও আকস্মিক যে এ রকম কিছু হতে পারে সেটা অনুমিতই ছিল। অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে দেওয়ার পর স্ত্রীর পাশে থাকতে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন সাকিব। জিম্বাবুয়ে সিরিজ খেলতে ৩১ অক্টোবর রাতে দেশে ফিরলেও তখনই তিনি বিসিবিকে জানিয়ে রাখেন, জরুরি প্রয়োজনে সিরিজের মাঝপথেই যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে হতে পারে আবারও।
বাবা হওয়ার সময়টায় সাকিব স্ত্রীর পাশে থাকুন, সেটা চেয়েছে বিসিবি এবং বাংলাদেশ দলও। সাকিবের ছুটি মঞ্জুর হয়ে গেছে তাই সঙ্গে সঙ্গেই। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বললেন, ‘জীবনের এই সময়টা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। জরুরি অবস্থা না হলে নিশ্চয়ই সিরিজের মাঝপথে সাকিব যেতেন না। আমরাও মনে করি এই সময়ে তার স্ত্রীর পাশে থাকা উচিত।’ সাকিব পাশে পাচ্ছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকেও, ‘প্রথম বাবা হওয়ার সময়টা অন্য রকম। এ রকম সময় বারবার আসে না। জীবনের চেয়ে তো আর খেলা বড় নয়।’
প্রথম সন্তানের মুখ দেখবেন বলেই সাকিবের চলে যাওয়া। তবে যাওয়ার আগে মুঠোফোনে বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসকে নাকি তিনি বলে গেছেন যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফেরার চেষ্টা করবেন। ‘সাকিব আমাকে বলেছে, বাচ্চা হয়ে গেলে ও বড়জোর দু-তিন দিন থাকবে ওখানে। তারপর চলে আসবে’—বলেছেন জালাল ইউনুস।
ফেসবুকে সাকিব নিজেই জানিয়েছিলেন, ‘রাজকন্যা’র জন্য অপেক্ষা করছেন। অর্থাৎ তার প্রথম সন্তানটি হতে যাচ্ছে কন্যা। যুক্তরাষ্ট্রে বাবা সাকিব দেখবেন সেই রাজকন্যার মুখ, আর দেশে থাকলে ক্রিকেটার সাকিব হয়তো আজই হয়ে যেতেন বাংলাদেশ দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ওয়ানডে উইকেটশিকারি। গত ম্যাচে ৫ উইকেট পাওয়ার পর ওয়ানডেতে এখন তার উইকেট ২০৬টি। মাত্র ১ উইকেট বেশি নিয়ে তার চেয়ে এগিয়ে শুধু আরেক বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাক। আর মাত্র ২টি উইকেট পেলেই রাজ্জাককে ছাড়িয়ে যাবেন সাকিব।
অবশ্য রাজ্জাকও নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ প্রায় পেয়েই যাচ্ছিলেন। সাকিবের পরিবর্ত হিসেবে তার নামটাও যে ছিল আলোচনায়! কিন্তু দলের সমন্বয়ের কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত ১৪ জনের দলে নেওয়া হয় ব্যাটসম্যান এনামুল হককে। তবে আজকের ম্যাচে তার খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সাকিবের জায়গায় একাদশে আসার সম্ভাবনা বেশি ইমরুল কায়েসের। সে ক্ষেত্রে তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনিংস শুরু করবেন তিনিই। এতে ব্যাটিং অর্ডারের নিচে নেমে যাবেন লিটন দাস। দ্বিতীয় ওয়ানডের দলে আর কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনার কথা শোনা যায়নি কাল রাত পর্যন্ত।
বিকল্প হিসেবে যিনিই দলে আসুন, সাকিবের অনুপস্থিতির প্রভাব যে দলে পড়বে, সেটা মানছেন অধিনায়ক, ‘সাকিব না থাকা মানে একজন বোলার আর একজন ব্যাটসম্যান দলে না থাকা। তার জায়গা পূরণ করতে অনেক সময় দুজন খেলোয়াড়ও নিতে হয়।’ মাশরাফির তবু বিশ্বাস, বাকি ম্যাচগুলোকে সাকিবের অভাবটা বুঝতে দেবেন না অন্যরা। -প্রথম আলো
৯ নভেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি